আগরতলা, ৮ ডিসেম্বর (হি.স.)৷৷ রাজনীতির পাশাখেলায় ত্রিপুরার ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী হতে চলেছেন রাজ্যবাসী৷ মুখ্যমন্ত্রী পদে বিপ্লব কুমার দেব-কে চাইছেন কি ত্রিপুরারবাসী? এই বিষয়টি জনসমক্ষে স্পষ্ট হওয়ার জন্য অগ্ণিপরীক্ষার মুখোমুখি হতে চলেছেন তিনি৷ খোলা ময়দানে জনগণের রায় নেবেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব৷ ত্রিপুরাবাসী চাইলেই মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন৷ না চাইলে জনতার রায় মাথা পেতে নিয়ে সমস্ত বিষয় পার্টি হাইকমান্ডের কাছে রাখবেন তিনি৷ তাতে, দল যা সিদ্ধান্ত নেবে মেনে নেবেন৷
প্রসঙ্গত, গত রবিবার রাজ্য অতিথিশালায় বিজেপি-র প্রদেশ প্রভারি বিনোদ সোনকরের সামনে বিপ্লব হটাও, বিজেপি বাঁচাও স্লোগান দিয়েছিলেন দলীয় কর্মীরা৷ ওই ঘটনা তাঁকে অত্যন্ত ব্যথিত করেছে৷ তাই জনতার রায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজ্য সচিবালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে নজিরবিহীন ঘোষণা করেছেন তিনি৷
তিনি বলেন, ২০১৬ সালে প্রথম বিজেপি সভাপতি হিসেবে ত্রিপুরার দায়িত্ব নেন৷ তার পর ২০১৮ সালে বিধানসভা নির্বাচনে ঐতিহাসিক জয় হাসিল হয়৷ ত্রিপুরার জনগণ বিজেপি এবং নরেন্দ্র মোদীর ওপর ভরসা করেন৷ ফলে ত্রিপুরায় বিজেপি-আইপিএফটি সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে৷ তাঁর দাবি, ত্রিপুরার জনগণ আমার উপর সম্পূর্ণ বিশ্বাস রেখেছিলেন৷ তাই, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কাজ শুরু করি৷
আবেগের সঙ্গে বিপ্লব বলেন, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে শুধু মানুষের জন্যই কাজ করে গিয়েছি৷ ত্রিপুরাকে মডেল রাজ্য বানানোর অবিরত চেষ্টা করে যাচ্ছি৷ তাঁর দাবি, ত্রিপুরায় নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এনএইচআইডিসিএল-এর ১১ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প আনতে সক্ষম হয়েছি৷ শুধু তা-ই নয়, সাব্রুমে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট, লজিস্টিক হাব, উঁচুতলা ভবন, এমবিবি বিমানবন্দরের আধুনিকীকরণ ত্রিপুরার উন্নয়নে পালক যুক্ত হয়েছে৷ তিনি বলেন, কৃষি ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার ত্রিপুরায় এখন ১৩.৯ শতাংশ৷ রেগায় এখন পর্যন্ত ৫৪ শ্রমদিবস সৃষ্টি হয়েছে৷ এফসিআই-এর মাধ্যমে কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় শুরু হয়েছে৷ তবুও আরও অনেক কাজ বাকি৷
তাঁর সাফ কথা, ত্রিপুরার উন্নয়নে কাজ করতে চাই৷ সময় খুবই কম৷ এরই মধ্যে ত্রিপুরাকে মডেল বানাতে চাই৷ এদিন এই কথাগুলি বলার সময় ভীষণ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী৷ ছলছল চোখে তিনি বলতে থাকেন, ত্রিপুরাবাসী আমাকে মাত্র পাঁচ বছর সময় দিয়েছেন৷ সরকারি কর্মচারী নই, ২৫-৩০ বছর সুযোগ পাব না কাজ করার জন্য৷ তাই, নরেন্দ্র মোদীর কায়দায় ত্রিপুরাকে নতুন করে সাজাতে চাই৷ ত্রিপুরায় উন্নয়নের গতি আনতে চাই৷
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, করোনার কাঁটা আমাদের কিছুটা পিছিয়ে দিয়েছে৷ তবুও লড়াই করে এখন অনেকটা ভালো স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা৷ তিনি দৃঢ়তার সাথে এদিন বলেন, জাতি, বর্ণ, ধর্ম নির্বিশেষে সকলের জন্য কাজ করতে চাই৷ কিন্তু গত রবিবার রাজ্য অতিথিশালায় একটি ঘটনা আমাকে খুবই ব্যথিত করেছে৷ তিনি বলেন, স্লোগান উঠেছে, বিপ্লব হটাও বিজেপি বাঁচাও৷ আমি ত্রিপুরার জনগণের কাছ থেকে সেই স্লোগান শুনতে চাই৷ তাঁর সাফ কথা, আগামী রবিবার স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে জনগণের কাছে জানতে চাইব, আমি মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকব, না চলে যাব৷ সে বিষয়ে জনতার রায় মেনে নেব আমি৷
তিনি সমগ্র ত্রিপুরাবাসীর আহ্বান জানিয়েছেন, ওইদিন সকলে মিলে তাঁদের পছন্দ কী বলে দিন৷ তিনি আবারও মনে করিয়ে দেন, ত্রিপুরা চাইলে চলে যাব৷ জনতার রায় পার্টি হাইকমান্ডের কাছে রাখব৷ যা সিদ্ধান্ত হবে মাথা পেতে নেব৷ তবুও জমির দালালি, মাফিয়ারাজ চলতে দেব না, জোর গলায় বলেন তিনি৷

