জাতি ও জনজাতির মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই টিপিএফ-এর এডিসি বনধ : জিএমপি

আগরতলা, ২৫ নভেম্বর (হি.স.)৷৷ জনজাতিদের কাছে টানার প্রতিযোগিতার পরিণাম আজকের এডিসি এলাকা বনধ৷ শুধু তা-ই নয়, দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই ত্রিপুরা পিপলস ফ্রন্ট (টিপিএফ) এই বনধ ডেকেছে৷ ত্রিপুরা রাজ্য উপজাতি গণমুক্তি পরিষদ (জিএমপি)-এর সভাপতি জিতেন্দ্র চৌধুরী এডিসি এলাকা বনধ-এর বিরোধিতা করে এ-ভাবেই মূল কারণ ব্যাখ্যা করেছেন৷ তাঁর মতে, জনজাতিভিত্তিক রাজনৈতিক দলের এ-ধরনের চিন্তাধারা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক৷


প্রসঙ্গত, আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা ছাড়াই আজ ত্রিপুরায় এডিসি এলাকায় ১২ ঘণ্টার বনধ পালন করছে টিপিএফ৷ তাতে প্রচুর মানুষ ভোগান্তির শিকার হয়েছেন৷ সরকারি কর্মচারী থেকে শুরু করে অসুস্থ রোগী পর্যন্ত বনধ সমর্থকদের অবিবেচক সিদ্ধান্তের কারণে হয়রানির মুখে পড়েছেন৷ ত্রিপুরায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ প্রশাসন খুবই ঠাণ্ডা মাথায় সমস্ত আয়োজন করেছে৷ কিন্তু, বনধ সমর্থকরা কিছু কিছু স্থানে উস্কানিমূলক কাজ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে৷ এমন-কি, বনধ-কে ঘিরে হামলা-হুজ্জতির চেষ্টায় জনমনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে৷
জিএমপি সভাপতি জিতেন্দ্র চৌধুরী এডিসি এলাকা বনধ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়ায় কটাক্ষের সুরে বলেন, কিছু রাজনৈতিক দল জনজাতি দরদের বহিঃপ্রকাশে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন৷ তিনি বলেন, সম্প্রতি টিপিএফ, আইএনপিটি এবং তিপ্রা সংগঠন রাজনৈতিক সমঝোতা করেছে৷ তাঁরা জোট বেঁধে জনজাতি কল্যাণে অগ্রসর হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ অন্যদিকে, শাসক জোট শরিক আইপিএফটি জনজাতিদের কল্যাণে কাজ করছে বলে দাবি করেছে৷ ফলে, এখন আইপিএফটি এবং টিপিএফ-এর মধ্যে জনজাতিদের কাছে টানার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে৷ তাঁর দাবি, সাম্প্রদায়িক ভাবাবেগ আরও জাগিয়ে তুলে জনজাতিদের মন জয় করার প্রতিযোগিতা চলছে৷ সেই প্রতিযোগিতায় এক কদম এগিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যেই টিপিএফ আজ এডিসি এলাকায় বনধ ডেকেছে৷

জিতেন্দ্রবাবুর কথায়, গত পরশু করবুকে হামলা-হুজ্জতি করেছে টিপিএফ৷ এক অস্থির পরিবেশ কায়েম হোক, চাইছে তাঁরা৷ অথচ, মূল বিষয় নিয়ে তাঁরা মোটেও চিন্তিত নন৷ তাঁর দাবি, ব্রু শরণার্থী পুনর্বাসনে ত্রিপুরা সরকারের দারুণ সিদ্ধান্ত কার্যকরে ব্যর্থতাকে গুরুত্ব না দিয়ে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজনের চেষ্টা চলছে৷ এদিন তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, ব্রু শরণার্থী পুনর্বাসনে আপত্তি নিয়ে জয়েন্ট মুভমেন্ট কমিটির সংগঠিত আন্দোলনের ফলে দুটি নিরীহ প্রাণ হারানোর বিষয়টি টিপিএফ-এর মতো রাজনৈতিক দল কোনও মূল্য দিতে রাজি নয়৷ তাঁদের লক্ষ্যই হল, জাতি-জনজাতিদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে রাজনৈতিক ফায়দা তোলা৷


সাম্প্রদায়িক বিভাজনের উদ্দেশ্যে ডাকা টিপিএফ-এর বনধ অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বলে আক্ষেপ করেন জিতেন্দ্র চৌধুরী৷ তাঁর কথায়, যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন তাঁরা যে সম্প্রদায়েরই হোন, তাঁরা ত্রিপুরার নাগরিক, সেটাই তাঁদের আসল পরিচয়৷ এই বিষয়টি মানুষের ভাবাবেগ তৈরি করা উচিত৷ কিন্তু, মূল কারণ ছেড়ে বিভাজনের উদ্দেশ্যে রাজনীতি কাম্য নয়৷ তিনি বলেন, শ্রীকান্ত দাস এবং বিশ্বজিৎ দেববর্মার মৃত্যু নিয়ে আওয়াজ তোলার বদলে বিষয়টি অন্যদিকে মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, তীব্র ভাষায় ভর্ৎসনা করে বলেন তিনি৷