গুয়াহাটি, ২৬ নভেম্বর (হি.স.) : পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে গেল অসমের টানা পনেরো বছরের মুখ্যমন্ত্রী, ছয়বারের সাংসদ, দুবারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজ্যবাসীর প্রিয় নেতা তরুণ গগৈয়ের নশ্বর দেহ। মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল, বহু দফতরের মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা, প্রয়াতের পত্নী ডলি গগৈ, কন্যা চন্দ্রিমা, পুত্রবধূ এলিজাবেথ কলবাৰ্ণ, অগপ সভাপতি তথা মন্ত্রী অতুল বরা, মন্রীর্ ফণীভূষণ চৌধুরী, মন্ত্রী কেশব মহন্ত, কংগ্রেসের প্রদেশ সভাপতি রিপুন বরা, দলের কেন্দ্রীয় নেতা জীতেন্দ্র সিং, বিজেপির প্রদেশ সভাপতি রঞ্জিত কুমার দাস, মুখ্যসচিব জিষ্ণু বরুয়া, পুলিশ-প্রধান ভাস্করজ্যোতি মহন্ত সহ প্রায় সব মন্ত্রী-বিধায়ক, সরকারি পদস্থ ও উচ্চপদস্থ আধিকারিক, কর্মচারী এবং হাজার হাজার জনতার উপস্থিতিতে সম্পূৰ্ণ রাষ্ট্ৰীয় মৰ্যাদায় শেষ বিদায় দেওয়া হয়েছে রাজনীতির মহীরূহ তথা দুরন্ত তরুণকে।
আজ প্রয়াত প্রিয় নেতার নশ্বর দেহ শোভাযাত্রা করে নিয়ে যাওয়া হয় বিভিন্ন মন্দির-নামঘর-গির্জা-মসজিদে। সে সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে স্ব-স্ব ধর্মীয় বিধিবলে প্রার্থনা, পূজাদি দিয়ে বেলা দুটা নাগাদ মরদেহ নিয়ে আসা হয় নবগ্রহ দেবলয় শ্মশানে। এখানে মুখ্যমন্ত্রী, অর্থ-স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা থেকে শুরু করে উপস্থিত বহুজন পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে প্রয়াত প্রবীণ নেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। এর পর মরদেহ তোলা হয় সুসজ্জিত তিন নম্বর চিতায়। কয়েকজন পুরোহিতের পরিচালনায় আহোম পরম্পরা এবং বৈদিক ক্রিয়াদি সম্পন্ন করে বিকেল ৩:২৪ মিনিটে পুত্ৰ গৌরব গগৈ তাঁর প্রয়াত বাবার মুখাগ্নি করেন।
প্রয়াত নেতার শেষকৃত্যে অংশগ্রহণ করতে রাজ্যের প্রায় সব জেলা থেকে অসংখ্য মানুষ এসেছিলেন। তিল ধারনের জায়গা ছিল না শ্মশানে। এসেছেন উজান থেকে নিম্ন এবং বরাক উপত্যকার দলীয় নেতা ও কর্মীরা। যাঁরা শ্মশানের ভিতরে প্ৰবেশ করতে পারেননি তাঁরা বাইরে এলইডি স্ক্ৰিনে অন্ত্যেষ্টিক্ৰিয়ার দৃশ্য দেখেছেন। আজ গোটা শ্মশান চত্বরে কান্নার রোল উঠেছে বার বার। খোদ মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা তাঁর চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, গত ২৩ নভেম্বর সন্ধ্যা ৫:৩৪ মিনিটে গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন তরুণ গগৈ। তার পরের দিন ২৪ নভেম্বর হাসপাতাল থেকে তাঁর নশ্বর দেহ নিয়ে যাওয়া হয় সরকারি আবাসে। সেখান থেকে কংগ্রেসের প্রদেশ সদর দফতর রাজীব ভবন এবং ওই দিন সন্ধ্যা থেকে আজ সকাল পর্যন্ত রাখা ছিল শ্রীমন্ত শংকরদেব কলাক্ষেত্ৰে।
নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী আজ সকাল ৭:৪০ মিনিটে শ্রীমন্ত শংকরদেব কলাক্ষেত্র থেকে প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের নশ্বর দেহের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য বিশাল শোভা বের হয়। অসংখ্য দলীয় নেতা কর্মী সমর্থক অনুগামী থেকে শুরু করে সাধারণ জনতার উপস্থিতিতে শোভাযাত্রা করে বৃহস্পতিবার কলাক্ষেত্রে থেকে বের হয়ে প্রথমে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় মিনিস্টার্স কলোনিতে তাঁর সরকারি বাসভবনে। সেখানে আহোম পরম্পরাগত ক্রিয়াদি সম্পন্ন করে ফের অন্তিমশয্যার জন্য সাজিয়ে দেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। এ পর সকাল ৯:০০ টায় শুরু হয় শোভাযাত্রা।
শোভাযাত্রা করে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় রুক্মিণীনগর গির্জায়। গির্জায় বহু ছাত্রছাত্রী এবং খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে নিয়ে তরুণ গগৈয়ের চিরশান্তির জন্য প্রার্থনা করেন ফাদার। সেখানে তাঁকে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন এলাকার সাধারণ জনতা। গির্জা থেকে গণেশগুড়ি, চানমারি হয়ে রাজপথ ধরে বাতানুকূল কফিনবন্দি মরদেহবাহী পুষ্পাদিতে সুসজ্জিত বিশাল লরি নিয়ে যাওয়া হয় জু-রোডের নামঘরে। সেখানে হরিনাম ও কীর্তনাদি শেষে যাত্রা করে আমবাড়িতে অবস্থিত বুঢ়ামসজিদে নিয়ে যাওয়া হয়। মসজিদে যথারীতি ইসলাম ধর্মানুসারে প্রার্থনাদি সম্পন্ন করে শকটবাহী লরি নিয়ে অসংখ্য অনুরাগী রওয়ানা হন শুক্লেশ্বরের উদ্দেশ্যে। শুক্লেশ্বরে পূজা-পাট করে নিয়ে যাওয়া হয় উগ্ৰতারা দেবালয়ে। উগ্রতারায় পূজাক্রিয়ার পর বেলা দুটো নাগাদ তরুণ গগৈয়ের নশ্বর দেহ সোজা নিয়ে যাওয়া হয় নবগ্ৰহ দেবালয় শ্মশানে।