নিজস্ব প্রতিনিধি, চড়িলাম, ৮ নভেম্বর৷৷ চড়িলাম আর ডি ব্লকের অন্তর্গত আড়ালিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তরমুড়া এলাকার হত দরিদ্র সোমা দাস এর পরিবার৷ সোমা দাস বিড়ি বাধার কাজ করে সংসার প্রতিপালন করেন মানসিক ভারসাম্যহীন স্বামী প্রমোদ দাস এবং দুই মেয়ে এক ছেলেকে নিয়ে৷
বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন সোমা দাস৷ কিন্তু ছোট মেয়ে পিংকি দাস আড়ালিয়া সুকলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াশোনা করেছেন৷ এরপর সংসারের হাল ফেরাতে মাকে সাহায্য করার জন্য মায়ের সাথে বিড়ি বাধার কাজ করে৷ বিগত কিছুদিন পূর্বে নিজ বাড়িতে ঢোকার প্রবেশদ্বার এ একটি বানর কামড়ে দেয় পিংকির হাতে-পায়ে৷ টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে পারেননি সোমা দাস এমনটাই জানিয়েছেন পিংকির মা এবং এলাকাবাসী৷
বানরের কামড় দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভ্যাকসিন না নেওয়ার ফলেই প্রায় সময়ই পিংকি দাসের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুলি বাঁকা হয়ে যেত৷ শেষ পর্যন্ত পিংকি দাস কে গতকাল আইজিএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ গতকাল সন্ধ্যাবেলায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে পিংকি দাস৷ বানরের কামড় দেওয়ার ফলেই পিংকির শরীরে ধনুষ্টংকার এর মতন হয়ে যায়৷শেষ পর্যন্ত চিকিৎসকদের সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান পিংকি৷
অত্যন্ত দরিদ্র গরিব পরিবার৷ সোমা দাসের ঘরের একটি অংশ খসে পড়ে গিয়েছে৷ স্বামী ও কোন রোজগার করে না৷ পিংকির মৃতদেহ এলাকার হৃদয়বান মানুষজন কাশেম মিয়া পিন্টু ধর, প্রদীপ দেব, বিপ্লব সাহা এবং হরিপদ দেব সবাই মিলে নিজেদের থেকে টাকা পয়সা সংগ্রহ করে পিংকির মৃতদেহ সৎকার করে আসেন৷ পিংকির মৃত্যুতে গোটা গ্রাম বাকরুদ্ধ৷ বনদপ্তর এর উপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ এলাকার মানুষজন৷ কারণ প্রতিনিয়ত বানরের উৎপাতে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ৷ আড়ালিয়া গ্রামের উত্তর চড়িলাম গ্রাম এবং দক্ষিণ চড়িলাম গ্রামেও বানরের উৎপাত অস্বাভাবিক ভাবে বেড়েছে৷ বনদপ্তর কে অনেকবার বলা হয়েছে৷ কিন্তু বনদপ্তর কোন ভূমিকা নিচ্ছে না বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ৷ বাড়ির ফসল থেকে শুরু করে সবকিছু ধবংস করে দিচ্ছে বানরের দল৷ বানরদের উৎপাত এর বিরুদ্ধে সিপাহীজলা ফরেস্ট রেঞ্জ অফিস কোন ভূমিকা নিচ্ছে না৷ পিংকির শ্রাদ্ধের জন্য খরচ পাতি র ও ব্যবস্থা করে দেবেন এলাকাবাসী৷ এলাকাবাসীর ভূমিকায় খুশি সুমা দাস৷ সোমা দাসের এই করুণ কাহিনীর খবর শুনে আগরতলা জয়পুর নিবাসী বর্তমানে সৌদি আরবে কর্মরত মোহাম্মদ সেলিম এবং পানিসাগর এর যুবক ফরমোজ আলি সোমা দাস এর জন্য ২০০০ টাকা পাঠিয়েছেন৷ রবিবার দিন সকালবেলায় চড়িলাম এর সাংবাদিক জ্যোতির্ময় সাহা উত্তরমুড়া গ্রামের হৃদয়বান ব্যক্তি কাশেম মিয়ার হাত দিয়ে পিংকির মা সোমা দাস এর হাতে ২০০০ টাকা তুলে দেন৷

