গুয়াহাটি, ৩০ সেপ্টেম্বর (হি.স.) : সাধারণ জনগণের যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য নয়, বরং চিনা আগ্রাসনের পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে কেন্দ্ৰীয় সরকার ব্ৰহ্মপুত্ৰের নীচে উত্তর অসমের গহপুর এবং দক্ষিণ দিকের নুমলিগড়ের মধ্যে সংযোগ স্থাপনে ১৪.৮৫ কিলোমিটার দৈৰ্ঘ্যের সুরঙ্গপথ নিৰ্মাণের তৎপরতা শুরু করেছে। ব্রহ্মপুত্রের নীচে সুরঙ্গপথ নির্মাণের প্রস্তাব চার বছর আগেই দিয়েছিলেন গুয়াহাটিতে কর্মরত বিআরও-র ইঞ্জিনিয়ার ড. শ্যামসুন্দর পাড়োয়াল। এদিকে, কেন্দ্ৰীয় সরকার গত জুলাই মাসে গহপুর-নুমলিগড় সুরঙ্গপথ নিৰ্মাণে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়ার পর বিরোধী দলগুলো একে যোরহাট-মাজুলি সংযোগকারী সেতু নিৰ্মাণের জন্য গোলমেলে বিষয়কে উড়িয়ে দিয়ে জনগণের মধ্যে সুরঙ্গপথ নিৰ্মাণকে কেন্দ্র করে বিভ্ৰান্তির সৃষ্টি করছে।
দেশের প্ৰতিরক্ষার ক্ষেত্রে, বিশেষ করে প্রতিবেশী চিনের সম্ভাব্য আক্ৰমণ, আগ্ৰাসনের মোকামিলা করার জন্য ভারতের প্ৰতিরক্ষা মন্ত্ৰালয়ের অনুরোধে সুরঙ্গপথ নিৰ্মাণের বিষয়টির ওপর চূড়ান্ত সিলমোহর মেরেছে কেন্দ্ৰীয় সরকার। চিন যদি বোমা ফেলে মধ্য অসমের তেজপুরের কলিয়া ভোমোরা সেতু, ডিব্ৰুগড়ের বগিবিল এবং তিনিসুকিয়ার ধলা-শদিয়া সংযোগকারী ড. ভূপেন হাজরিকা সেতু ধ্বংস হলেও যাতায়ত ব্যবস্থা যাতে ব্যাহত না হয় সেজন্য প্ৰতিরক্ষা মন্ত্ৰালয় ২০১৫ সাল থেকে বিকল্প হিসেবে সুরঙ্গপথ নিৰ্মাণের জন্য কেন্দ্ৰীয় সরকারের উপর চাপ দিচ্ছিল।
এমনিতে প্ৰতিরক্ষা মন্ত্ৰালয়ের অধীনে সীমান্তপথ সংগঠন (বিআরও) থেকে ২০১৬ সালে ব্ৰহ্মপুত্ৰের নীচে গহপুর থেকে নমুলিগড়কে সংযুক্ত করে সুরঙ্গপথ নিৰ্মাণের জন্য জরিপের কাজ চালিয়ে আসছিল। বিআরও-র গুয়াহাটিতে লংকেশ্বরে অবস্থিত ইস্ট ডিভশনের প্রধান কাৰ্যালয়ের তদান্তীন অতিরিক্ত অধিকর্তাপ্ৰধান ড. শ্যামসুন্দর পাড়োয়ালের নেতৃত্বে বিভাগীয় ইঞ্জিনিয়ারের এক দল ২০১৬ সালে প্ৰস্তাবিত গহপুর-নুমলিগড় সংযোগকারী সুরঙ্গপথের চূড়ান্ত নকশা তৈরি করেছিল। এর পর নকশা সহ সুরঙ্গপথ নিৰ্মাণে প্ৰস্তাবটি ড. শ্যামসুন্দর পাড়োয়াল প্ৰতিরক্ষা মন্ত্ৰকে দাখিল করেছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে বিআরও-র ডিভিশনাল অতিরিক্ত অধিকর্তাপ্ৰধান পদ থেকে অবসর গ্ৰহণ করেন ড. পড়োয়াল। চাকরি জীবনের ৩৬ বছরের মধ্যে ২৬ বছরই কাৰ্যনিৰ্বাহ করেছেন অরুণাচল প্ৰদেশ এবং অসমে। বিআরও-র পথ, সেতু এবং সুরঙ্গ নির্মাণের বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত ড. পাড়োয়াল সিকিম এবং অরুণাচল প্ৰদেশে চিন সীমান্ত সংযোগকারী প্ৰতিরক্ষা মন্ত্ৰকের আরও কয়েকটি গুরুত্বপূৰ্ণ সড়ক ও সেতু নিৰ্মাণ প্ৰকল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এমন-কি অরুণাচল প্ৰদেশের চিন সীমান্তের তাওয়াং পর্যন্ত, ওরাং থেকে মাজবাট হয়ে দুই লেনের পথ নিৰ্মাণ, বালিপাড়া থেকে ভালুকপুং, টেংগা, বমডিলা, ডিরাং হয়ে (বিসিটি রোড) তাওয়াং পর্যন্ত দুই লেনযুক্ত পথ নিৰ্মাণের সঙ্গেও তিনি জড়িত ছিলেন।
অরুণাচল প্রদেশের বমডিলায় সুরঙ্গপথ সহ বাইপাস নিৰ্মাণ প্রভৃতি প্ৰকল্পের কাজ করার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ড. পাড়োয়াল চিনের আগ্ৰাসন রোধ করত হলে যাতায়ত ব্যবস্থা ব্যাহত না হওয়ার জন্য একটি সুরঙ্গপথ ব্ৰহ্মপুত্ৰের নীচে নিৰ্মাণ করা অতি জরুরি বলে মনে করেছিলেন। জানা গেছে, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী নভেম্বর ডিসেম্বর মাসের মধ্যে প্রস্তাবিত সুরঙ্গপথ নিৰ্মাণের কাজ আরম্ভ করা প্ৰায় নিশ্চিত। উল্লেখ্য সুরঙ্গপথ নিৰ্মাণের বিষয়টি সাধারণ জনগণের যাতায়াতের চেয়ে সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে কেন্দ্ৰীয় সরকার অধিক গুরুত্ব আরোপ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।