নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৯ আগস্ট৷৷ আধুনিক ত্রিপুরার রূপকার মহারাজ বীর বিক্রম কিশোর মানিক্য বাহাদুরের ১১২ তম জন্ম জয়ন্তী পালিত হয়েছে আজ৷ আগরতলায় বেণুবন বিহারে আয়েজিত অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এবং উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মা তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন৷ এছাড়াও, বিজেপি এবং কংগ্রেস পার্টি ত্রিপুরায় মহারাজ বীর বিক্রমের জন্মজয়ন্তী পালন করেছে৷ সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক নিজ বাসভবনে মহারাজের প্রতিকৃতি-তে ফুলমালা দিয়ে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করেছেন৷
ভারতের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে ত্রিপুরা রাজ্য কয়েক শতাব্দী যাবৎ অনেক কণ্টকময় পথ অতিক্রম করে এগিয়ে চলেছে নিজ স্রোতে৷আর এই আধুনিক ত্রিপুরার রূপকার হলেন মহারাজা বীরবিক্রম কিশাের মানিক্য বাহাদুর৷ত্রিপুরা ১৭৯ জন রাজার মধ্যে তিনি হলেন শেষ স্বাধীন রাজা৷আমাদের এই ত্রিপুরা হলাে সনাতন সভ্যতা সংসৃকতির এক উজ্জ্বল পীঠস্থান৷সেই আলােকে স্বদেশী ভাবনা এবং সনাতন সংসৃকতির পৃষ্ঠপোষক মহারাজা বীরবিক্রম কিশাের মানিক্য ছিলেন এক পরাক্রমশালী নৃপতি৷
শুভ কৃষ্ণ-জন্মাষ্টমী তিথিতে ১৯০৮ সালের আগস্ট মাসের ১৯ তারিখে আগরতলায় রাজপরিবারে জন্ম গ্রহন করেন তিনি৷ পিতা ছিলেন মহারাজা বীরেন্দ্র কিশাের মানিক্য ও মাতা ছিলেন অরুন্ধুতী দেবী৷বিশাল রাজমহল, যৌথ পরিবার, মন্ত্রী-দেওয়ান উজির-নাজির পরিবৃত্ত পরিবেশে বিরবিক্রমের শৈশব ও কৈশোর অতিক্রান্ত হয়৷বালক বীরবিক্রম যে ভবিৎসতে খুব মেধাবী হবে, তা অভিবাবকরা তখনই অনুমান করতে পেরেছিলেন৷ ১৯২৩ সালে বিরবিক্রমের পিতা মহারাজা বীরেন্দ্র কিশাের মারা যান এবং মাত্র পনেরো বছর বয়সে বালক বীরবিক্রম মহারাজা বীরবিক্রম কিশাের মানিক্য বাহাদুর নামে অভিহিত হন৷বালক বয়সে রাজা হলেও বিরবিক্রম ছিলেন বিচক্ষণ ক্ষমতা ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন৷তিনি যখন রাজা হলেন তখন রাজ্যে চলছিল আর্থিক সংকট আর রাজকোষে ছিল ঘাটতি৷ তাই তিনি কালবিলম্ব না করে ঋণ সমীক্ষা সমিতি গঠন করেন ও ১৯২৫ সালের মধ্যে সব দেনা-পাওনা মিটিয়ে দেন৷ ১৯২৭ সালের ১৯শে আগস্ট ছিল মহারাজা বীর বিক্রমের ২০ তম জন্মদিন৷সেদিন মহারাজা বীর বিক্রম রাজ্যভিষেক ক্রিয়ায় তেরবার তােপধবনি দেওয়া হয় এবং অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন৷
প্রজাদের মধ্যে ছিল ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা এবং এমন মহারাজা পেয়ে প্রজারা ছিলেন আপ্লুত৷ তাঁর প্রতিভা ও জ্ঞান এতটাই বেশী ছিল যে মহারাজা মাত্র ২১ বছর বয়সে ১৯২৮ সালে কলকাতাতে রবীন্দ্রজয়ন্তী ও শিল্প প্রদর্শনী মেলার শুভ উদ্বোধন করেন৷শুধু তাই নয় তিনি যেখানেই যেতেন সেখানে সনাতনী সংসৃকতি ও পরম্পরাকে তুলে ধরতেন৷
মহারাজ বীর বিক্রম কিশোর মানিক্য বাহাদুর ত্রিপুরার শেষ রাজা ছিলেন৷ মাত্র ৩৯ বছর বয়সে তিনি প্রয়াত হন৷ তাঁর মৃত্যুর পর রাজমাতা কাঞ্চনপ্রভা দেবী ত্রিপুরার ভারতভুক্তি-র চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন৷ সত্যিকার অর্থে আধুনিক ত্রিপুরার রূপকার ছিলেন মহারাজ বীর বিক্রম মানিক্য বাহাদুর৷ তিনি আগরতলার বুকে কলেজ স্থাপনের পরিকল্পনা করেছিলেন৷ সে মোতাবেক ১৯৪৭ সালে মহারাজা বীর বিক্রম কলেজ স্থাপিত হয়েছিল৷ তাঁর জীবদ্দশায় আগরতলা বিমান বন্দর স্থাপিত হয়েছিল৷ শুধু তাই নয়, তাঁর ঐকান্তিক চেষ্টায় স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া আগরতলায় শাখা খুলেছিল৷
ত্রিপুরায় সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর মহারাজ বীর বিক্রমের জন্মজয়ন্তী সরকারি ছুটির তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে৷ আগরতলা বিমানবন্দর-কেও মহারাজ বীর বিক্রম বিমান বন্দর-এ রূপান্তরিত করা হয়েছে৷
মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, মহারাজ বীর বিক্রম কিশোর মানিক্য বাহাদুর আধুনিক ত্রিপুরার রূপকার ছিলেন৷ তাঁর স্বপ্ণ-কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আমাদের কর্তব্য৷শিল্প, সংস্কৃতি, সাহিত্য ও সামাজিকতার সংমিশ্রণে মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্য একজন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব৷ তাঁর স্বল্প আয়ুষ্কালেই তিনি আধুনিক ত্রিপুরা গড়ার জন্য উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন৷ আজ বুদ্ধমন্দিরস্থিত বেণুবন বিহারে তথ্য ও সংস্ক’তি দপ্তর আয়োজিত মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর দেববর্মণ মাণিক্য বাহাদুরের ১১২তম জন্মজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশের উত্তরে তিনি আরও বলেন, মহারাজা নিজে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও সর্ব ধর্ম সমভাব এই মানসিকতায় বিশ্বাসী ছিলেন৷ তাঁর সময়কালেই রাজ্যে বিমানবন্দর ও ব্যাঙ্ক গড়ে উঠেছিলো৷ আধুনিক ত্রিপুরা গড়ার লক্ষ্যে তৎকালীন সময়ে নিজেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করে সেখানকার রাজনীতি, শিল্পনীতি, সভ্যতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হয়েছিলেন৷ বর্তমান রাজ্য সরকার মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্যের আদর্শ ত্রিপুরা গড়ার যে স্বপ ছিলো সেই দিশাতেই নিরলসভাবে কাজ করে চলছে৷ তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দিক নির্দেশনায় রাজ্যে বিকাশশীল ও জনতার সরকার চলছে৷
সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে অনুষ্ঠানের অন্যতম অতিথি উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা বলেন, মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্য একজন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ও দূরদর্শী রাজা ছিলেন৷ তাঁর আমলে রাজ্যে আধুনিক ভাবধারা সমন্বিত একটি সংবিধানও ছিলো৷ রাজ্য সরকার মহারাজার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েই এক ত্রিপুরা, সবার ত্রিপুরা, উন্নত ত্রিপুরা এবং বিশেষ করে জনজাতিদের সার্বিক বিকাশের লক্ষ্যে কাজ করে চলছে৷

