নয়াদিল্লি, ১৭ আগস্ট (হি. স.) : কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী শ্রী মুখতার আব্বাস নাকভি আজ বলেছেন, মহামারীর বিপদ ভারতীয়দের কাছে যত্ন, প্রতিশ্রুতি ও আত্মবিশ্বাসের ইতিবাচক সময় হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে, যা বিশ্ব জুড়ে সমগ্র মানবতার জন্য একটি উদাহরণ তৈরি করেছে।
একটি ভ্রাম্যমাণ ক্লিনিকের উদ্বোধন করে তিনি বলেন, মহামারীর সময় মানুষের জীবনশৈলী ও কর্মসংস্কৃতির ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। মানুষ এখন সমাজের প্রতি সেবা ও দায়বদ্ধতার ব্যাপারে অনেক বেশি অঙ্গীকারবদ্ধ। জাতীয় সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও অর্থ সহায়তা নিগমের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ এই ক্লিনিকটি নতুন দিল্লির হোলি ফ্যামিলি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
নাকভি এদিন বলেন, সাধারণ মানুষের প্রতিশ্রুতি এবং সরকারের প্রবল ইচ্ছাশক্তির দরুণ করোনা মহামারীর সময়ে ভারত স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে দ্রুততার সঙ্গে আত্মনির্ভর হয়ে ওঠার পথে অগ্রসর হয়েছে। ভারত কেবল এন-৯৫ মাস্ক, পিপিই কিট, ভেন্টিলেটর ও অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জাম উৎপাদনের ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর হয়ে ওঠেনি, সেই সঙ্গে অন্যান্য দেশকেও সাহায্য করেছে।
দেশে জানুয়ারির গোড়ায় করোনা নমুনা পরীক্ষাগারের সংখ্যা ছিল মাত্র ১টি। আজ এই সংখ্যা বেড়ে ১ হাজার ৪০০ হয়েছে। এক সময়ে দৈনিক-ভিত্তিতে দেশে কেবল ৩০০টি করোনা নমুনা পরীক্ষা হ’ত। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা দৈনিক ৭ লক্ষে পৌঁছেছে। জাতীয় ডিজিটাল স্বাস্থ্য মিশন শুরু হয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় প্রত্যেক ভারতীয়কে একটি অভিনব পরিচিতি সংখ্যা সম্বলিত হেলথ কার্ড দেওয়া হবে। খুব শীঘ্রই এই কর্মসূচি ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এক আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসবে বলেও নাকভি অভিমত প্রকাশ করেন।
নাকভি জানান, বিশ্বের বৃহত্তম ‘মোদী কেয়ার’ স্বাস্থ্য পরিচর্যা কর্মসূচি সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য ও কল্যাণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। এই স্বাস্থ্য কর্মসূচির আওতায় দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। সরকার স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিগত ৬ বছরে যে সমস্ত পদক্ষেপ নিয়েছে, সে প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মন্ত্রী জানান, বিপুল জনসংখ্যা সত্ত্বেও ভারত করোনা মহামারী দমনে সাফল্য পেয়েছে।
স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থার মানোন্নয়নে সরকার নিরন্তর প্রয়াস চালাচ্ছে বলে উল্লেখ করে নাকভি বলেন, দেশে এইমস্ – এর ধাঁচে ২২টি নতুন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান এবং ১৫৭টি মেডিকেল কলেজ নির্মাণ করা হচ্ছে। গত ৫ বছরে এমবিবিএস এবং এমডি আসন সংখ্যা ৪৫ হাজারেরও বেশি বাড়ানো হয়েছে। করোনার সময়ে সরকার ৮০ কোটিরও বেশি মানুষকে বিনামূল্যে রেশন সরবরাহ করেছে। দুস্থ মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা জমা করা হয়েছে। এই সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়ার ফলেই করোনা সঙ্কট মানুষের কাছে বিপর্যয়ে পরিণত হয়নি।
নাকভি জানান, তাঁর মন্ত্রকের দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় ১ হাজার ৫০০-রও বেশি স্বাস্থ্য সহায়কদের প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। আরও ২ হাজার স্বাস্থ্য সহায়ককে এ ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। করোনার সময়ে সংশ্লিষ্ট সবপক্ষকে সাহায্য করার জন্য দেশের ১৬টি হজ হাউসকে করোনা আক্রান্ত রোগীদের কোয়ারেন্টাইনের জন্য রাজ্য সরকারগুলির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রকের অধীন জাতীয় সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও অর্থ সহায়তা নিগমের কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার অঙ্গ হিসাবে আজ যে ভ্রাম্যমাণ ক্লিনিকটি দিল্লির হোলি ফ্যামিলি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, তার ফলে দরিদ্র ও দুর্বল শ্রেণীর মানুষের কাছে সর্বাধুনিক স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। ভ্রাম্যমাণ এই ক্লিনিকটিতে এমার্জেন্সি মাল্টি প্যারা মনিটর, অক্সিজেন ফেসিলিটি এবং স্বয়ংক্রিয় স্টেচার ব্যবস্থা রয়েছে। এই ব্যবস্থাগুলি আপৎকালীন পরিস্থিতিতে সঙ্কটজনক রোগীর জীবন বাঁচাতে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা নিয়ে থাকে। ভ্রাম্যমাণ ক্লিনিকটির সূচনা অনুষ্ঠানে দিল্লির আর্চ বিশপ রেভারেন্ট অনীল কুটো, মন্ত্রকের সচিব শ্রী পি কে দাস, হোলি ফ্যামিলি হাসপাতালের নির্দেশক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন ।