নয়াদিল্লি, ১৭ আগস্ট (হি.স.) : ভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীতের দুনিয়ায় নক্ষত্রপতন। চলে গেলেন ‘পদ্মবিভূষণ’ পন্ডিত যশরাজ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে মৃত্যু হয়েছেন ৯০ বছরের এই প্রবীণ শিল্পীর। তাঁর মৃত্যু সংবাদ নিশ্চিত করেছেন কন্যা দুর্গা যশরাজ।
প্রয়াত বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ পণ্ডিত যশরাজ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি। পণ্ডিত যশরাজের মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন তাঁর মেয়ে দুর্গা যশরাজ। পণ্ডিত যশরাজের পরিবার সূত্রে খবর, অনেক দিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। শাস্ত্রীয় সংগীতের জন্যে ভারতে পদ্মবিভূষণ, পদ্মভূষণ, পদ্মশ্রীর মতো একাধিক পুরস্কার পেয়েছেন ‘পণ্ডিত জি’। রয়েছে বহু বিদেশি পুরস্কার ও সম্মানও। এই বছর জানুয়ারি মাসেই ৯০ পূর্ণ করেছিলেন পণ্ডিতজি।তাঁর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ শিল্পীকূল।
১৯৩০ সালের জানুয়ারি মাসে হরিয়ানার হিসারে জন্মগ্রহণ করেন যশরাজ। মধ্যবিত্ত ব্রাহ্মণ পরিবার। খুব স্বাভাবিকভাবেই শাস্ত্রীয় সংগীতের প্রতি ভালোবাসা জন্মায় ছোটবেলা থেকেই। বাবা পণ্ডিত মতিরামের কাছেই প্রথম শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিম নেন যশরাজ। কিন্তু সেই তালিম পূর্ণ হওয়ার আগেই মাত্র চার বছর বয়সে বাবাকে হারান যশরাজ। তাঁর বড় দাদা, পণ্ডিত প্রতাপ নারায়ণও শাস্ত্রীয় সংগীতের একজন মহান শিল্পী ছিলেন, যাঁর দুই ছেলে যতীন-ললিত পরবর্তীকালে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে বলিউডে প্রভূত খ্যাতি অর্জন করেন।
ছোটবেলার অনেকটা সময় হায়দরাবাদে কাটালেও পরবর্তীতে গুজরাতের সানন্দে যাতায়াত করতেন মেওয়াতি ঘরানার সংগীতের তালিম নেওয়ার জন্য। মহারাজ জয়বন্ত সিং বাঘেলার জন্যও একাধিকবার সংগীতানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। ১৯৪৬ সালে কলকাতায় চলে আসেন পণ্ডিত যশরাজ। রেডিওতে শাস্ত্রীয় সংগীত গাওয়ার তালিম দিতেন তিনি। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে শাস্ত্রীয় সংগীতে তাঁর যা অবদান, তা সত্যই অনস্বীকার্য।
গত বছর মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা পণ্ডিত যশরাজের নামে একটি ছোট গ্রহের নামকরণ করে। ভারতীয় সংগীতের প্রথম শিল্পী হিসেবে এই দুর্লভ সম্মান পান পণ্ডিত যশরাজ। ৯০ বছরের এই ক্ল্যাসিক্যাল গায়কের নামে গ্রহটির নাম দেওয়া হয় ‘পণ্ডিত যশরাজ (৩০০১২৮)’। এই ছোট গ্রহটিকে ২০০৬-এর ১১ নভেম্বর খুঁজে পাওয়া যায়। মঙ্গল এবং বৃহস্পতির মাঝে একটি গ্রহাণুপুঞ্জে একটি ছোট গ্রহটির অবস্থান। এর আগে তাঁর নামে একখণ্ড চাঁদের নাম রাখা হয়েছিল।
সম্প্রতি অ্যামাজন প্রাইমের ‘বন্দিশ ব্যান্ডিটস’ নামে মিউজিকাল ড্রামার ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি। অক্ষত পারেখের পোস্ট করা একটি ভিডিয়োতে পণ্ডিত যশরাজ তাঁর ‘বন্দিশ ব্যান্ডিটস’-এর জন্যে শুভেচ্ছা জানান।
সারা বিশ্বেই ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত বললেই একবাক্যে উঠে আসত যশরাজের নাম। সেই তিনিই এবার চলে গেলেন অচীনপুরে।