নয়াদিল্লি, ২৭ জুলাই (হি. স.) : করোনা ভারত-বাংলাদেশ সম্প্রীতির মেলবন্ধনে বাধা হতে পারেনি। ঈদের আগাম উপহার বাংলাদেশে পাঠাল ভারত। বাংলাদেশের ব্যবহারে জন্য ১০টি লোকোমোটিভ ইঞ্জিন আজ আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দিয়েছে ভারত। ভিডিও কনফারেন্সের মধ্যমে রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল এবং বিদেশ মন্ত্রী ডাঃ এস জয়শঙ্কর সবুজ পতাকা নেড়ে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে ওই ইঞ্জিন রওয়ানা করে দেন। এদিন এই অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন রেল প্রতিমন্ত্রী সুরেশ সি আঙ্গাদি। বাংলাদেশ প্রান্ত থেকে রেল মন্ত্রী মোঃ নুরুল ইসলাম সুজন এবং বিদেশমন্ত্রমন্ত্রী ডাঃ আবুল কালাম আবদুল মোমেন বাংলাদেশ সরকারের তরফে লোকোমোটিভ গ্রহণ করেন।
ভারত সরকারের আর্থিক সহায়তায় এই লোকোমোটিভগুলির হস্তান্তর ২০১৮ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় করা প্রতিশ্রুতি পূরণের অঙ্গ হিসেবেই মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রয়োজনীয়তা মেনে লোকোমোটিভগুলি ভারত যথাযথভাবে পরিবর্তিত করে দিয়েছে। এই লোকোমোটিভগুলি বাংলাদেশে যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
এদিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে বিদেশমন্ত্রী ডঃ এস জয়শঙ্কর বলেন, ১০ টি লোকোমোটিভ ইঞ্জিন বাংলাদেশে হস্তান্তর করার এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। শুধু তাই নয়, আমি জেনে খুশি হয়েছি উভয় দেশের মধ্যে পার্সেল এবং কনটেইনার ট্রেন শুরু হয়েছে। তা আমাদের ব্যবসায়ের জন্য নতুন সুযোগ উন্মুক্ত করবে বলে দাবি করেন তিনি। দুই দেশের মধ্যে রেলপথে বাণিজ্য চলাচল নিশ্চিত হওয়ায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, কোভিড -১৯ অতিমারি চলাকালীন পবিত্র রমজান মাসে প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছিল।সাথে তিনি যোগ করেন, পারস্পরিক আস্থা ও শ্রদ্ধার ভিত্তিতে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের গভীরতা সময়ের সাথে পরীক্ষিত। করোনা অতিমারিতেও দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার গতি কমেনি এবং ঐতিহাসিক মুজিব বর্ষে প্রত্যাশা পূরণে মাইলফলক পার করতে পেরে তিনি আনন্দিত বলে জানিয়েছেন ডঃ এস জয়শঙ্কর ।
অনুষ্ঠানে রেল এবং বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রী শ্রী পীযূষ গোয়াল বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের ব্যবহারের জন্য ১০ টি ব্রডগেজ লোকোমোটিভ হস্তান্তরিত করায় আমি অত্যন্ত আনন্দিত। এই লোকোমোটিভগুলি ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে চলমান মালবাহী ট্রেন পরিচালনা করতে কার্যকর হবে। তাঁর দাবি, বাংলাদেশে এই লোকোমোটিভগুলির ব্যবহারযোগ্যতা নিশ্চিত করতে সেগুলি পরিবর্তিত করা হয়েছে। তাঁর কথায়, উন্নয়ন ও বিকাশ অর্জনে নিজ নিজ প্রয়াসে আমরা বিশাল পদক্ষেপ রেখেছি। গত কয়েক বছরে ভারত ও বাংলাদেশ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছে। আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আজ সর্বোচ্চ শিখরে রয়েছে।
রেলমন্ত্রী বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র নীতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-র সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাসের দৃষ্টিভঙ্গি-র প্রতিফলন করেছে। তাঁর দাবি, ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশ ১৯৬৫ সালের পূর্বের রেল সংযোগ পুনরুদ্ধারে বদ্ধপরিকর। তৎকালীন ৭টি রেল লিঙ্কগুলির মধ্যে ৪টি এখনও কাজ করছে। তিনি বলেন, এই অঞ্চলে রেল যোগাযোগ আরও জোরদার করার জন্য ভারতের আগরতলা এবং বাংলাদেশের আখাউড়ার মধ্যে একটি নতুন রেল যোগাযোগ ভারতের আর্থিক সহায়তার অধীনে নির্মিত হচ্ছে।
রেলমন্ত্রীর বক্তব্য, করোনা-র প্রকোপ চলাকালীন উভয় রেলওয়ে সংকট পরিচালনার ক্ষেত্রে অনুকরণীয় দূরদর্শিতা দেখিয়েছে এবং প্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনের পদক্ষেপের মাধ্যমে সরবরাহ শৃঙ্খলা বজায় রেখেছে। বাংলাদেশের বেনাপোল হয়ে পার্সেল ট্রেন ও কনটেইনার ট্রেন পরিষেবা চালু করা হয়েছে। এই দুটি পরিষেবা ইতিমধ্যে জুলাই মাসে শুরু হয়েছে। এগুলি আমাদের উভয় পক্ষ থেকে বিস্তৃত পণ্য সরাতে সক্ষম করেছে। এদিন রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল বাংলাদেশের রেল নেটওয়ার্কের উন্নয়নে বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ ও সীমাহীন সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও যোগাযোগ বৃদ্ধিতে এবং দু’দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বকে আরও জোরদার করতে রেলওয়ে সহযোগিতার তাৎপর্যকে গুরুত্ব দিয়েছেন।
সোমবার বিকেলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার গেদে রেলস্টেশন থেকে বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গার দর্শনা জয়নগর চেকপোস্ট এলাকা দিয়ে দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলস্টেশনে গিয়ে পৌঁছায় ১০টি ব্রডগেজ রেল ইঞ্জিন। তাতে, খুশির জোয়ার বাংলাদেশে।

