BRAKING NEWS

পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে চালাচ্ছে প্রাইভেট এজেন্সি : রাজ্যপাল

কলকাতা, ১৬ জুন (হি.স.): প্রাইভেট এজেন্সি চালাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে। এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ ও মন্ত্রীদের টুইটার একাউন্টও কারও দ্বারা পরিচালিত হয় এবং তাঁদের সম্মতি ছাড়াই রাজনৈতিক টুইট করা হয়, এমনকি রাজ্যপালের প্রতি আক্রমণাত্মক টুইটও করা হয়। মঙ্গলবার বহুভাষী সংবাদ সংস্থা হিন্দুস্থান সমাচারকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে এনেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর। সম্প্রতি কলকাতায় অমানবিকভাবে মৃতদেহ টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে, ওই ঘটনায় রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করে রাজ্যপাল বলেন, ক্ষমা চাওয়া উচিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এছাড়াও আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন ও পৌরসভা নির্বাচন নিজ সাংবিধানিক শক্তি দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সুনিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছেন রাজ্যপাল।

ভিডিও কনফারেন্সিং মারফত রাজ্যপালের বিশেষ সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হিন্দুস্থান সমাচার সংবাদ সংস্থার সাংবাদিক ওম প্রকাশ সিং।

বিস্তৃত আলোচনার প্রধান অংশ : 
প্রশ্ন : আপনি রাজ্যপাল পদের সংজ্ঞাই বদলে দিয়েছেন। সরাসরি জনগণের কাছে পৌঁছে যান, তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনের জন্য টুইটার এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন। আপনি কী মনে করেন না, এর ফলে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল নিজেদের অসুরক্ষিত মনে করে?

উত্তর : পশ্চিমবঙ্গের জনগণের স্বার্থে কাজ করার জন্য সাংবিধানিক শপথ নিয়েছি আমি এবং এ জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমি এটা স্পষ্ট করতে চাই যে আমি কারও হাতের পুতুল নই। না তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মানব, না তো দিল্লির কারও। আমি যদি কারও নির্দেশ মেনে চলি, তা হল ভারতীয় সংবিধানের। সংবিধান অনুযায়ী কাজ করে যাব। আমি রাজ্যের জনগণের সৈনিক। আমার মাথায় সবসময় একটা বিষয়ই চলে, কীভাবে জনগণের সেবা করব। দুর্নীতি, কাটমানির মতো বিষয় যদি প্রকাশ্যে আসে, অথবা ক্ষমতাসীন দলের হয়ে যদি কাজ করে রাজ্য প্রশাসন, তাহলে রাজ্যপাল হিসেবে আমি কীভাবে চুপ করে থাকি? রাজ্য প্রশাসনের আধিকারিকদের উচিত তাঁদের আচরণকে আইনের পরিধিতেই সীমাবদ্ধ রাখা, আমাকে অনেকেই বলেন পুলিশের দৌলতেই নাকি চলছে সরকার। রাজ্য প্রশাসন ক্ষমতাসীন দলের কার্যকর্তাদের মতো কাজ করছে। এটা আমি মোটেও বরদাস্ত করতে পারব না। রাজ্যপাল হিসেবে ভারতীয় সংবিধান আমাকে যতটুকু ক্ষমতা দিয়েছে, আমি কখনও তার বাইরে যাইনি। আমি প্রত্যেকের কথা শুনব এবং জনগণের স্বার্থে নিজে বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।

প্রশ্ন : গত সপ্তাহে কলকাতার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল, ওই ভিডিওতে দেখা যায় মৃতদেহ অমানবিকভাবে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শুধুমাত্র ভারত নয়, সমগ্র বিশ্বে এই আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল ওই ভিডিও, ফলে ভারতের ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত হয়েছে। এই ঘটনায় আপনি রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর এবং কলকাতা পৌর নিগমের কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করেছিলেন, রাজ্যের উত্তরে আপনি কী সন্তুষ্ট?

উত্তর : সর্বাগ্রে আমি এটা বলতে চাই, পশ্চিমবঙ্গের আধিকারিকরা অত্যন্ত যোগ্য।  গোটা দেশের মধ্যে সেরা বলতে পারেন। কিন্তু, এখানে রাজনীতি বাধা হয়ে দাঁড়ায়, যা বাইরের সংস্থা করে। এটা গণতন্তের উপর সবচেয়ে বড় কুঠারাঘাত। গত ১০ জুন আমি যখন এ বিষয়ে জানতে পারি, তখন বিশ্বাসই করতে পারিনি। আমরা মরদেহকে অত্যন্ত সম্মান করি। যেমন বর্বরতা করা হয়েছে তা কল্পনার অতীত। ভিডিওতে তো মাত্র একবার মৃতদেহ টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যেতে দেখা গিয়েছে, আসলে ওই দেহগুলি বহুবার টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গাড়িতে তোলার সময় অথবা শ্মশানে নামানোর সময়ও অমানবিকভাবে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ১০ জুন আমি যখনই জানতে পারলাম, তখনই নিজ সচিবের মাধ্যমে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছে জবাব চাইলাম এবং তৎক্ষণাৎ উত্তরও পেয়েছি। নিজেকে বাঁচানোর মতো উত্তর ছিল তাঁর। তিনি দু’টি কথা বলেছিলেন, এই দেহগুলি কোভিড-১৯ সংক্রমিত রোগীর নয় এবং ভিডিওটি ভুয়ো। এরপর আমি বলি, যে কোনও রোগেই তাঁদের মৃত্যু হোক না কেন, মৃতদেহের সঙ্গে এমন বর্বরতা কেন? এ বিষয়ে আমি উত্তর চাই। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত কোনও উত্তর দেয়নি রাজ্য সরকার। এ ব্যাপারে কলকাতা পৌর নিগমের কমিশনার বিনোদ কুমার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর কথায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল, পৌর নিগম থেকে বড় ত্রুটি হয়েছে। এছাড়াও কলকাতা পৌর নিগমের প্রশাসক ফিরহাদ হাকিমকে আমি ডেকেছিলাম, কিন্তু আসেননি। নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে তাঁর কোনও ধারণাই নেই। ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে এখনও পর্যন্ত মানুষ কলকাতার মানুষ সমস্যার মধ্যে রয়েছেন। তাঁকে আসতেই হবে। এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্ষমা চাইতেই হবে। ক্ষমা না চাইলে এর কোনও সমাধান হবে না। আমি বলেছিলাম, আপনি ক্ষমা চেয়ে নিন এবং আমিও রাজ্যের মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। তখনই এই কলঙ্ককে কিছুটা কমানো সম্ভব। ভারতের প্রধান বিচারপতি এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং মৃতদেহের প্রতি বর্বর আচরণের জন্য জবাব তলব করেছেন। যে সমস্ত রাজ্যের কাছ থেকে জবাব তলব করা হয়েছে, তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গও রয়েছে। তিনি বলেছেন, ভারত সরকারের গাইডলাইন অনুযায়ী কোভিড-১৯ ভাইরাসে মৃতদের শেষকৃত্য করতে হবে।  পশ্চিমবঙ্গ তিনটি সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, ঘূর্ণিঝড়, করোনাভাইরাস এবং পরিযায়ী শ্রমিক। পরিযায়ী শ্রমিকদের ট্রেনকে কোভিড ট্রেন আখ্যা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আমি আপত্তি জানিয়েছিলাম। বাংলায় বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। সংকটের সময়ও তাঁদের কাজ করতে দেওয়া হয় না, অথচ সরকার নিজেদের দলের নেতাদের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে। ভয়ে পুলিশও কিছু করতে পারে না। আমি পুলিশকে হুঁশিয়ারি দিয়েছি,  আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয় এবং এমনটা করা আমার দায়িত্বের অংশ।

প্রশ্ন : তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র নিজ দলের দ্বারা পরিচালিত পৌরসভার কার্যশৈলী নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। রাজ্যপাল হিসেবে প্রতি পাঁচ বছরে পৌরসভা এবং পঞ্চায়েতের কাজের সমীক্ষা করার অধিকার রয়েছে আপনার। কয়েক মাস পর হতে চলা পৌরসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে, পৌরসভার কাজের সমীক্ষার জন্য আপনি কী অর্থ কমিশন গঠন করবেন?

উত্তর : গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকার এবং রাজ্যপালের মধ্যে বিরোধ থাকুক, তা আমি কখনই চাইব না। কারণ এমনটা জন-স্বার্থের বিরোধী। আমি কৃষকের সন্তান। কিষাণ সম্মান নিধি প্রকল্পের আওতায় এখনও উপকৃত হয়নি বাংলার জনগণ, কারণ পশ্চিমবঙ্গ সরকার কৃষকদের সম্পর্কে কেন্দ্রকে অবহিত করেনি। এটা কৃষকদের পেতে লাঠি মারার মতোই। পৌরসভার মতো দুর্নীতি সর্বত্র হয়, রাজ্যপালের কী তা সহ্য করা উচিত? সমস্ত বিষয়ে রাজনীতি ঠিক নয়, রাজনীতির উর্দ্ধে উঠে জনস্বার্থে কাজ করতে হবে।

প্রশ্ন : সাংবিধানিক বিধান অনুযায়ী আপনি রাজ্য সরকারের মার্গদর্শক, কিন্তু বহুবার ক্ষমতাসীন দল আপনাকে সমান্তরাল সরকার পরিচালনার জন্য দায়ী করেছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ৮৩ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রের কাছে বকেয়া রয়েছে, এই অর্থ বাংলায় ফিরিয়ে আনতে আপনি কোনও উদ্যোগ নিয়েছেন, নাকি মুখ্যমন্ত্রী আপনাকে অনুরোধ করেছেন?

উত্তর : ওম প্রকাশ জী আপনার প্রশ্ন অত্যন্ত ভালো! আমি আগেই বলেছি, আমি না তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অথবা অন্য কাউকে অনুসরণ করব না। সংবিধান অনুযায়ী যা বৈধ তাই আমি করব এবং এখনও পর্যন্ত সংবিধানের বাইরে কিছুই করিনি। সংবিধান বহির্ভুত কোনও কাজ আমি কখনও করিনি এবং ভবিষ্যতেও করব না। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে পশ্চিমবঙ্গের বকেয়া অর্থের বিষয়ে বলতে চাই, আমি এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে বারবার অনুরোধ করছি, এ ব্যাপারে আমাকে চিঠি দেওয়ার জন্য। আমার সঙ্গে কথা বলুন, কিন্তু আজ পর্যন্ত একটিও চিঠি লেখেননি তিনি। বারবার বলা সত্বেও মুখ্যমন্ত্রী কথা বলেন না। ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ এলাকার পরিস্থিতি খুবই খারাপ। মানুষ সমস্যায় মধ্যে রয়েছেন। বাইরের এজেন্সি চালাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে (উল্লেখ্য, রাজনৈতিক রণকৌশলী প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপদেষ্টা)।রাজ্যপাল বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে অতিরিক্ত-সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে দেওয়া হয়েছে। যে অপেন সিক্রেট। বলা হয়েছে মন্ত্রী এবং আধিকারিকরা অন্য কাউকে রিপোর্ট করবেন। বড় মন্ত্রী, সাংসদদের টুইটার হ্যান্ডেল অন্য কারও দ্বারা পরিচালিত হবে। এর থেকে বড় মানবাধিকার লঙ্ঘন হতেই পারে না। এই সাংসদরা ব্যক্তিগতভাবে আমাকে ফোন করে ক্ষমা চেয়েছেন। ঈশ্বরকেই তাঁদের নাম বলব। সাংসদরা বলেছেন এই বিষয়বস্তু আমাদের নয়। আমাকে গালিগালাজ করা হয়। তাতে আমার কোনও আপত্তি নেই, কিন্তু যখন সরকারি তন্ত্র দখলের চেষ্টা করা হয়, তা বিপদের অশনি সঙ্কেত। যদি কেউ ভাবেন আমি ভয় পেয়ে যাব, তাতে আমার কিছু যায় আসে না। নিজ মর্যাদা অতিক্রম করব না।

প্রশ্ন : সাধারণত, রাজ্যপাল এবং সরকারের মধ্যে আলোচনা গোপনীয় হয়। কিন্তু আপনি সংবাদের জন্য বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করছেন যা সর্বজনীন। যেমন টুইটারে আপনি ভীষণ সক্রিয় থাকেন এবং লাগাতার সরকারের আলোচনা করেন। সম্ভবত এজন্যই আপনারও আলোচনা বেশি হচ্ছে। আগামী বছরগুলিতে যতদিন আপনি পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল আছেন, আপনি এভাবেই কী সরকারের উপর প্রকাশ্যে আক্রমণ চালিয়ে যাবেন?

উত্তর : ওম প্রকাশ জী, আমি একটি বিষয় আপনাকে স্পষ্টভাবে বলতে চাই, ভাড়াটে লোকেরাই আমার সমালোচনা করছে। যাঁদের টুইটার হ্যান্ডেল অন্য কারও কাছে রয়েছে, তাঁরাই আমার সমালোচনা করছে। এমন কিছু মানুষ আমার কাছে এসে নিজেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে। অনুরোধ করছি তাঁদের আসল নাম প্রকাশ করবেন না। আপনি জগদীপ ধনকরের টুইটারে কোনও পক্ষের হয়ে মন্তব্য লিখে দেবেন পুলিশ আপনার বাড়িতে পৌঁছে যাবে। আমরা খুব কঠিন পরিস্থিতিতে রয়েছি।

প্রশ্ন : পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক হিংসা ও অসদাচরণের ইতিহাস রয়েছে। রাজ্যপাল হিসেবে আপনি কী করতে চান, যাতে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়?

উত্তর : নির্বাচনের সময় ১০০ শতাংশ কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা নির্বাচন কমিশনের অধিকার। আমার অনুরোধ সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন হোক। আমার প্রচেষ্টা হল পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের সময় এযাবৎ যে পরিমানে হিংসা হয়েছে, তা যেন ইতিহাস হয়ে যায়। এরপর যা হবে তা পশ্চিমবঙ্গের জন্য নতুন ইতিহাস। বাংলার মানুষ হিংসা চায় না। নির্বাচনে যেই জয়ী হোক, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অথবা অন্য কেউ, সে বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। কিন্তু, আমি হিংসার পক্ষে মোটেও না এবং ভোটারকে এতটাও ভয় দেখানো উচিত না যে সে নিজে বিবেচনা করে ভোট দিতে পারবেন না। আমি তা কখনই বরদাস্ত করব না। আমি বলেছি, নির্বাচন নির্ভয়ে ও পারদর্শী হওয়া উচিত। আমি আশাবাদী পশ্চিমবঙ্গে এবার শান্তিপূর্ণ ভোট হবে। বাংলার স্থান দেশের মধ্যে ফের শীর্ষে পৌঁছবে, এমনটাই আমার আশা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *