নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৭ জুন৷৷ করোনা-র প্রকোপে দীর্ঘ ৭৬ দিন বন্ধ থাকার পর সোমবার থেকে খুলছে মাতা ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির৷ ভক্তদের জন্য আগামীকাল উদয়পুরে মাতা ত্রিপুরেশ্বরী-র দরজা খুলে দেওয়া হবে৷ তবে, নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে ভক্তদের মন্দিরে ঢুকতে দেওয়া হবে৷
রবিবার গোমতির জেলা প্রশাসন, মহকুমা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, স্থানীয় বিধায়ক সহ অন্যান্যদের উপস্থিতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ বৈঠকে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে মন্দির খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়ে হয়েছে৷ তবে মন্দিরে প্রবেশের ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মাস্ক ও সেনিটাইজার ব্যবহার করতে হবে ভক্তকুলকে৷ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভক্তরা সোমবার থেকে মন্দিরে মাতা ত্রিপুরেশ্বরীকে দর্শন করতে পারবেন, পুজো দিতে পারবেন৷ কিন্তু অঞ্জলি দেওয়া এবং অন্নভোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে৷ তবে, বিধি মেনে সমস্ত অনুষ্ঠান চলবে মাতা ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরে৷
বর্তমানে দেশে আনলক ১.০ চলেছে৷ তাতে দেশের প্রতিটি মন্দির ও ধর্মীয় স্থান খুলে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে৷ বিষয়টি পর্যালোচনা করেই গোমতি জেলা প্রশাসন উদয়পুরে মাতাবাড়ি ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে৷ প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের ফলে দীর্ঘদিন পর ভক্তরা মন্দিরে প্রবেশের অনুমতি পাচ্ছেন৷ মন্দির খোলার পাশাপাশি মন্দির চত্বরে বিভিন্ন দোকানপাটও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে৷ ফলে দীর্ঘদিন পর স্থানীয় ব্যবসায়ী, বিশেষ করে পেড়া ব্যবসায়ীরা অনেকটা স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন৷ মাতা ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরে প্রবেশের ক্ষেত্রে যাতে সরকারি নিয়ম-কানুন যথাযথভাবে মেনে চলা হয় সেজন্য প্রশাসনের তরফ থেকে যাবতীয় নজরদারির ব্যবস্থা করা হবে৷
উল্লেখ্য, উদয়পুরের মাতা ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির সতীর ৫১ পীঠের এক পিঠ বলে ধর্মীয় বিশ্বাস৷ ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরে দেশ-বিদেশের বহু ভক্তের সমাগম ঘটে৷ করোনা ভাইরাস সংক্রমণজনিত কারণে মন্দিরের গেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দীর্ঘ ৭৬ দিন ধরে ভক্ত সমাগম বন্ধ৷
মাতাবাড়ি পরিচালন কমিটির পর্যালোচনা বৈঠক ক্রমে পুণ্যার্থীদের জন্য উল্লেখ্যযোগ্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ এগুলি হচ্ছে, মন্দিরে প্রবেশ শুধুমাত্র দুটি দুয়ার(দরজা/ গেট/সিংহদূয়ার) দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকবে৷ প্রতিদিন পরিবর্তিত নিয়মে পশ্চিম ও পূর্ব দুয়ার বিকল্প হিসেবে থাকবে৷ নতমস্তক বা ষষ্টাঙ্গে প্রণাম করা যাবে না৷ পরিবর্তে শুধু হাত জোড় করে দাড়িয়ে প্রণাম করতে হবে৷ ১.৮ মিটার( ছয় ফুট) দুরত্ব বজায় রাখা বাধ্যতামূলক৷ প্রণামী বা দক্ষিনা প্রদানের ক্ষেত্রে দুরত্ব রেখে একটি নির্দিষ্ট স্থানে দিতে হবে৷ কোনভাবেই হ
পারস্পরিক হাতের সংস্পর্শে আসা যাবে না৷ চরণামৃত প্রদান ও সিঁদুর ফোটা নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ ধূপকাঠি, মোমবাতি প্রদীপ প্রভৃতি প্রজ্জ্বলনও নিষিদ্ধ থাকছে৷ কল্যান দীঘির জলজ প্রাণীদের কোন রকম খাদ্যদ্রব্য প্রদান করা যাবে না৷ দীঘিতে স্নান করাও নিষিদ্ধ থাকছে৷ তাছাড়া কোন বিক্রেতা যদি পুণ্যার্থীদের গামছা কিনতে প্ররোচিত করে তবে সেই ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ পার্কিং এর ক্ষেত্রে দীঘির উত্তর পার সুলভ শৌচালয়ের নিকটে এবং বিদ্যালয় মাঠের দক্ষিনে পার্কিং করতে হবে৷ মন্দিরের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে মন্দির কমিটি স্থানীয়দের মধ্যে থেকে ১৫-২০ জনের মতো স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হবে৷ অন্নভোগে আগের মতই নিষেধাজ্ঞা জারি করা রয়েছে৷ মন্দিরে পুণ্যার্থীদের আগমণের ক্ষেত্রে মাস্ক ব্যবহার ও প্রতিদিন সন্ধ্যায় মন্দির সেনিটাইজ করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷ তাছাড়া মন্দির চত্বরে তাপমাত্রা পরীক্ষা করার পাশাপাশি থার্মাল স্কেনিং এর ব্যবস্থাও করা হবে৷আইন শৃঙ্খলা রক্ষার্থে আরো পুলিস মোতায়েন করা হবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে৷