BRAKING NEWS

দেশবাসীর সেবা ভাবনাকে কুর্নিশ প্রধানমন্ত্রীর

নয়াদিল্লি, ৩১ মে (হি. স.):   করোনা মোকাবিলায় দেশবাসীর নিরন্তন সংগ্রাম ও সেবা ভাবনাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রবিবার রেডিওতে সম্প্রচারিত মাসিক মন কি বাত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতে করোনা ভাইরাস খুব দ্রুত ভাবে ছড়িয়ে পড়েনি। মৃতের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। দেশবাসী সংকল্প এবং সংযম এর জন্যই এটা সম্ভব হয়েছে। যা আমরা এখনো পর্যন্ত বাঁচাতে পেরেছি সেটাই আমাদের সাফল্য। যা হারিয়েছ তার জন্য আমরা দুঃখিত। কিন্তু করোনার বিপদ এখনো কেটে যায়নি। তা সমানভাবে বিপদজনক। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইকে জনগণ নেতৃত্ব দিয়েছে। এই সংকটকালে দেশবাসী যেভাবে সেবা ও ত্যাগ করেছে তা অনুকরণীয়। সেবার মধ্যেই যে আত্মতৃপ্তি। সেবার মধ্যেই যে জীবনের প্রকৃত মানে তা বুঝিয়ে দিয়েছে দেশবাসী। চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, সাংবাদিক, পুলিশের মত ফ্রন্টলাইন ওয়ারিয়র নির্ভীকভাবে ত্যাগ স্বীকার করে সেবা করে গিয়েছেন দেশবাসীর। এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী দুটি উদাহরণ দেন। তিনি বলেন বলেন, তামিলনাড়ুর মাদুরাইয়ের বাসিন্দা মোহন একটি সেলুনের মালিক। মেয়ের লেখাপড়ার জন্য সে পাঁচ লাখ টাকা জমিয়েছিলেন। কিন্তু সেই অর্থ দিয়ে বর্তমানে সে গরীব মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে  ত্রিপুরার আগরতলার গৌতম দাস ঠেলাওয়ালা। এমন পরিস্থিতিতে তিনিও আর্তের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। পাঞ্জাবের পাঠানকোট এর বাসিন্দা ভাই রাজু একান্ত নিজস্ব উদ্যোগে ৩০০০ মাস্ক ভেরি করে সাধারণের মধ্যে বিলিয়ে দিয়েছেন। তিনি ১০০ পরিবারের খাওয়া-দাওয়ার দায় নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। নমো অ্যাপ এর মাধ্যমে এই সব জানতে পারা গিয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী এ দিন জানিয়েছেন।

করোনা মোকাবিলায় উদ্ভাবন এবং যোগাভ্যাস যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে রবিবারের মন কি বাত অনুষ্ঠানে তা মনে করিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এদিনের মন কি বাত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা জানতে চাইছেন যোগাভ্যাস এবং আয়ুর্বেদ কি পথ দেখাতে পারে। যোগাভ্যাস যে করোনা মোকাবিলায় খুব গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। তা যে শরীরের ইমিউনিটি বাড়াতে সক্ষম। সেটা এদিনের মন কি বাত জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তার কথায় হলিউড থেকে হরিদ্দার প্রত্যেকে বাড়িতে বসে যোগাভ্যাস করে গিয়েছে। যারা এর প্রতি আগে ততো বেশি মনোযোগ দিত না।  তারাও এখন অনলাইনে ভিডিও দেখে বাড়িতে নিজের মত করে যোগাভ্যাস করে চলেছে।করোনা মানুষের শরীরে সব থেকে বেশি ক্ষতি করে ফুসফুসের।আর যোগাভ্যাস করলে ফুসফুসের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। ফুসফুস আরো শক্তিশালী হয়ে ওঠে। যোগাভ্যাস মানুষের মধ্যে কমিউনিটি, ইমিউনিটি, ইউনিটি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দেশের আয়ুশ মন্ত্রক অনলাইন একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করবে। যার নাম হবে মাই লাইফ মাই যোগ। আপনার যোগাভ্যাসের তিন মিনিটের ভিডিও করে পাঠাতে হবে। বিশ্বের সমস্ত প্রান্তের মানুষ এতে যোগ দিতে পারবে।উদ্ভাবনের কথা বলতে গিয়ে ধ্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, মহারাষ্ট্রের নাসিকে ট্রাক্টর চালক রাজেন্দ্র নিজের ট্রাক্টর মেশিনের সাহায্যে স্যানিটেশন মেশিন তৈরি করেছেন। বিভিন্ন মুদি দোকানে দোকানদার পাইপের মাধ্যমে ক্রেতাদের পণ্য সরবরাহ করছেন।করোনা মোকাবিলায় ইচ্ছাশক্তির পাশাপশি উদ্ভাবনও একান্তভাবে প্রয়োজন। দেশের বিভিন্ন পরীক্ষাগারে করোনা প্রতিষেধকের আবিষ্কারের কাজ চলছে।

পূর্ব ভারত এবং শ্রমজীবী ​​মানুষের উন্নয়নের ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর ভারত যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে রবিবার মন কি বাত অনুষ্ঠানে তা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই সকল পরিযায়ী শ্রমিকদের দুঃখ-দুর্দশার কথা ভাষায় ব্যক্ত করা যায় না। তাদেরকে বাড়ি ফেরানোর ক্ষেত্রে রেল অসাধারণ কাজ করেছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের খাবার, পানীয় জলের ব্যবস্থা মতো বিপুল আয়োজন রেলকর্মীরা নিষ্ঠা সহকারে করে গিয়েছে।এক কথায় চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মতো রেলকর্মীরা ফ্রন্টলাইন ওয়ারিয়র। পরিযায়ী শ্রমিকদের শারীরিক পরীক্ষা করেই ট্রেনে তোলা হয়েছে। এই সকল দৃশ্য আমাদের অতীতকে স্মরণ করিয়ে দেয়। আর ভবিষ্যতের ভিত্তি স্থাপন করে।বর্তমান পরিস্থিতিতে পূর্ব ভারতের উন্নয়ন একান্ত ভাবে প্রয়োজন।পূর্বের উন্নয়ন হলেই গোটা দেশের উন্নয়ন হবে। এই সংকট কাল অনেকগুলো দিক আমাদের সামনে খুলে দিয়েছে। এখন কথা চলছে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য পৃথক কমিশন গঠন করার।স্কিল ম্যাপিং এর প্রসঙ্গ উঠছে। ফলে আত্মনির্ভর ভারতের গুরুত্ব অনেক বেড়ে গিয়েছে। স্থানীয় অঞ্চলে পণ্য তৈরি করা এবং কেনা অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিশারী হতে পারে। এতে করে গ্রাম, জেলা, মফস্বল, ছোট শহর আত্মনির্ভর হয়ে উঠবে। কয়েকজন এমন রয়েছেন যারা স্থানীয় এলাকায় কি কি পণ্য তৈরি হচ্ছে তার তালিকা ও ইতিমধ্যে প্রস্তুত করে ফেলেছেন।প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ” বিহারের হিমাংশু জানিয়েছে যে সে এমন ভারতের স্বপ্ন দেখে যে ভারত বিদেশ থেকে আমদানি কমিয়ে দেবে।”পেট্রোল, ডিজেল, ইউরিয়া মত জিনিস এখনো ভারতকে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। করদাতাদের বিপুল অর্থ এতে খরচ হয়। এর বিকল্প ব্যবস্থা এবং বিকল্প পথ দেখাবে আত্মনির্ভর ভারত। ” অসমের সুদীপ জানিয়েছেন যে সে বাঁশের তৈরি নির্মিত পণ্যের ব্যবসা করেন। আগামী দিনে তার স্বপ্ন এই পাশের পণ্যগুলোকে আন্তর্জাতিক স্তরে মেলে ধরা। “উল্লেখ করা যেতে পারে পরিযায়ী শ্রমিকদের বেশিরভাগ অংশই থাকে ঝাড়খন্ড, বিহার, পশ্চিমবঙ্গের। আর্থিক বিকল্প না থাকায় বাধ্য হয়েই বাস্তুচ্যুত হয়ে ভিন রাজ্যে গিয়ে কাজ করতে হয় এইসব রাজ্যের মানুষদের। ফলে প্রধানমন্ত্রীর মতে আত্মনির্ভর ভারত এই সকল মানুষদের নতুন আর্থিক বিকল্প পথে নিয়ে যাবে।

দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আয়ুষ্মান ভারত যে এক যুগান্তকারী মাইলফলক হিসেবে প্রতিপন্ন হয়েছে। রবিবারের মন কি বাতে তা দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মাসের শেষ রবিবারে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে দেওয়া মন কি বাত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছেন, অসুস্থ হলে আগে গরীবরা ভাবত যে সংসার চলবে কি করে আর চিকিৎসার খরচই বা আসবে কোথা থেকে। গরিবদের এই ভাবনা দূর করার জন্যই দেড় বছর আগে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের সূচনা করা হয়। এক কোটিরও বেশি মানুষ এই প্রকল্প থেকে উপকৃত হয়েছে। নরওয়ে ও সিঙ্গাপুরের মতো দেশের মোট জনসংখ্যার থেকেও বেশি মানুষ এই প্রকল্পের থেকে উপকৃত হয়েছে। আয়ুষ্মান ভারত না থাকলে চিকিৎসা খাতে গরীব মানুষের পকেট থেকে ১৪০০০ কোটি টাকা খরচ হতো। গরীবদের সেবা করার জন্য চিকিৎসক-নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের ধন্যবাদ জানাই।এই প্রকল্পে পোর্টেবিলিটি কথা উল্লেখ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন আয়ুষ্মান ভারত এর সুবিধাভোগী কোন ব্যক্তি চাইলে এক রাজ্য থেকে অন্যত্র গিয়ে চিকিৎসা করাতে পারে। বিহারের একজন বাসিন্দা ইচ্ছা করলে কর্নাটকে গিয়ে চিকিৎসা করতে পারে। আয়ুষ্মান ভারত থেকে উপকৃত হয়েছে ৮০ শতাংশ গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দা। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ হচ্ছে মহিলারা। ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। ফলে কঠিন রোগ সারানোর ক্ষেত্রে আয়ুষ্মান ভারত গরীবের সহায় হয়ে দেখা দিয়েছে। বহু কঠিন রোগের চিকিৎসা এই সাহায্যে হয়েছে। এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মনিপুর এবং পুদুচেরি দুই দিনমজুরের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। যাদের পরিবারের এক সদস্যের চিকিৎসা এই প্রকল্পের মাধ্যমে হয়েছে।  এখন তারা প্রত্যেকেই সুস্থ রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *