নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৫ মে৷৷ করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন ক্লাব-র সহযোগিতা চেয়েছে ত্রিপুরা সরকার৷ আজ বিভিন্ন ক্লাব-র কর্মকর্তাদের নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী সভা করেছেন৷
সভায় মন্ত্রী রতনলাল নাথ বলেন, বর্তমানে সারা বিশ্বে, দেশে ও রাজ্যে যে পরিস্থিতি রয়েছে তাতে সকল ত্রিপুরাবাসী প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন৷ এই সমস্যায় বিভিন্ন ক্লাবগুলিকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান তিনি৷ তাঁর কথায়, করোনা সংক্রমণ বাতাসে ছড়ায় না দৈহিক সংস্পর্শে মানুষ সংক্রমিত হন৷ তিনি বলেন, রাজ্যের বহু মানুষ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ও বিদেশে রয়েছেন৷ আবার অন্যান্য রাজ্যের মানুষ যেমন ইটভাট্টা শ্রমিক, অন্যান্য নির্মাণ শ্রমিক ও গোলবাজারে নিত্য কর্মরত বহু শ্রমিক আমাদের রাজ্যে রয়েছেন৷ আমাদের রাজ্যেরও বহু লোক বিভিন্ন কাজে, চিকিৎসার কাজে, পড়াশুনার কাজে বহির্রাজ্যে রয়েছেন৷ তাঁর বক্তব্য, লকডাউন সামান্য শিথিল হওয়ায় ট্রেন, বিমান ও বাস পরিষেবা কিছুটা চালু হয়েছে৷ অথচ, কিছু কিছু অংশে স্থানীয় মানুষের অসচেতনতার কারণে বাইরে থেকে এসে ত্রিপুরার নাগরিকরা নিজের বাড়িতে ঢুকতে পারছেন না৷ এক জটিল সমস্যা দেখা দিয়েছে৷ এ-ক্ষেত্রে ক্লাবগুলির ভূমিকা নেওয়া ও সাহায্যের দরকার রয়েছে৷
তিনি বলেন, সব কাজ আইন বা পুলিশ দিয়ে হয় না৷ আইন সৃষ্টি ও লাগু করা যায়, কিন্তু সামাজিক উন্নয়ন ও সামাজিক সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে ক্লাবগুলির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে৷ তাঁর দাবি, বর্তমানে রাজ্য সরকার যেকোন পরিস্থিতির জন্য তৈরি আছে এবং বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছে৷ করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য রাজ্য সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে৷ তিনি বলেন, এখন লকডাউনের চতুর্থ স্তর, তাতে বিভিন্ন স্থানে শিথিলতা আনা হয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রীর মতে মানুষকে বাঁচিয়ে রেখে আমরা আগামীদিনে এগিয়ে যাব, বলেন তিনি৷
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নতুন গাইডলাইন অনুযায়ী করোনা সংক্রমণের চিকিৎসা পরিষেবায় কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারকে কিছুটা ছাড় দিয়েছে৷ ত্রিপুরা একমাত্র রাজ্য যেখানে বাড়িতে আবদ্ধ থাকা এবং প্রাতিষ্ঠানিক একান্তবাসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে৷ তাঁর দাবি, ৭দিন ধরে যদি কোন ব্যক্তির সর্দি, কাশি, জ্বর থাকে তাহলে তাকে প্রাতিষ্ঠানিক একান্তবাসে রাখা হবে অর্থাৎ উপসর্গ থাকলে যতক্ষণ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষায় নেগেটিভ রিপোর্ট না আসবে ততদিন পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক একান্তবাসে থাকতে হবে৷
তিনি জানান, আগামী ২৮মে বাংলাদেশ থেকে মোট ১০৫ জন আখাউড়া হয়ে রাজ্যে আসবেন৷ তাঁদের সকলকে প্রাতিষ্ঠানিক একান্তবাসে রেখে নমুনা সংগ্রহ করা হবে৷ তারপর রিপোর্ট নেগেটিভ হলে ১৪ দিনের জন্য বাড়িতে একান্তবাসে থাকবেন৷ আর পজিটিভ হলে ট্রিটমেন্ট সেন্টারে পাঠানো হবে৷ সাথে তিনি যোগ করেন, উপসর্গ নাই কিন্তু হটস্পট যেমন কোলকাতা, দিল্লি, মহারাষ্ট্র, চেন্নাই থেকে আসার সঙ্গে সঙ্গে স্টেশন থেকে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক একান্তবাসে নিয়ে যাওয়া হবে৷ যদি একান্তবাসে থাকা ব্যক্তির নমুনা নেওয়ার পর উপসর্গ দেখা দেয় তাহলে তার কাছাকাছি আসা সব ব্যক্তিকে ১৪দিনের জন্য একান্তবাসে এবং পরে প্রয়োজনে ১৪দিন বেশি বা ল্যাবটেস্টে নেগেটিভ না হওয়া পর্যন্ত একান্তবাসে থাকতে হবে৷
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরা সরকার এই লকডাউনে বিপিএল ভুক্ত পরিবারদের ৩ মাসের বিনা পয়সায় রেশন দিয়েছে৷ এমনকি এপি এল ভুক্ত পরিবারদেরও এক মাসের রেশন দেওয়া হয়েছে৷ এছাড়া যেসকল লোক বহির্রাজ্যে আটকে রয়েছে তাদের সহায়তায় প্রথম দফায় ৩ কোটি টাকা খরচ হয়েছে৷ এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার বিভিন্ন বিষয়ে খতিয়ে দেখছে ও সহযোগিতা করছে৷ বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজ্যের জনগণ যাতে কোনও রকম সমস্যার সম্মখীন না হয় তারজন্য মন্ত্রী রতনলাল নাথ সদর মহকুমার অন্তর্গত বিভিন্ন ক্লাবগুলিকে সহযোগিতা করার জন্য আহ্বান রেখেছেন৷
প্রসঙ্গত, এদিন সদর মহকুমার অন্তর্গত সমস্ত ক্লাব, আরক্ষা দপ্তর, স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলাশাসকের কনফারেন্স হলে নোভেল করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত সচেতনতার জন্য মহকুমা শাসকের আহ্বানে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে৷