BRAKING NEWS

অসম : অন্তঃসত্ত্বা সাংবাদিক ছাঁটাই, প্রতিবাদ ডিওয়াইএফআই, মানবাধিকার ও সাংবাদিক সংগঠনের

গুয়াহাটি, ২২ মে (হি.স.) : টানা তেরো বছর ধরে এক বৈদ্যুতিন সংবাদ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাংবাদিক রঞ্জিতা রাভাকে ‘অন্যায়ভাবে ছাঁটাই’ করার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে সোচ্চার হয়েছে ডিওয়াইএফআই। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক নয়ন ভুইয়াঁ এবং সভাপতি লোকনাথ অধিকারী শুক্রবার এক প্রেস বিবৃতিতে বলেছেন, লকডাউনের ফলে গোটা দেশে সংকট নেমে এসেছে। এর মধ্যে রঞ্জিতার মতো একজন দক্ষ ও নিরপেক্ষ সাংবাদিককে ছাঁটাই করে দিয়েছে গুয়াহাটির একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল কর্তৃপক্ষ। সাংবাদিক রঞ্জিতা বর্তমানে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তিনি মাতৃত্বকালীন ছুটির জন্য আবেদন করেছিলেন মালিকপক্ষের কাছে। কিন্তু মালিকপক্ষ তাঁর আবেদন গ্রাহ্য না করে উল্টো চাকরি থেকে বরখাস্ত করে দিয়েছে। যা অত্যন্ত অমানবিক কাজ। 

ডিওয়াইএফআই-এর রাজ্য সম্পাদক এবং সভাপতি আরও বলেন, এছাড়া দেশের আইনকেও বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ প্রদর্শন করেছেন চ্যানেল কর্তৃপক্ষ। দ্য মেটারনিটি বেনিফিট (সংশোধিত) আইন-২০১৭ অনুযায়ী একজন কর্মরত গর্ভবতী মহিলা বারো সপ্তাহ পর্যন্ত মাতৃত্বকালীন ছুটি পেতে পারেন। সেই আইন বলে রঞ্জিতার ছুটি পাওয়ার কথা। দেশে আইন থাকা সত্ত্বেও সেই সুবিধা রঞ্জিতাকে দেননি কর্তৃপক্ষ। এখন একদিকে কর্মহীন, এই মুহূর্তে অন্তঃসত্ত্বা মহিলাটি নিয়মিত চেকআপ এবং পুষ্টিকর খাবার কীভাবে জোগাড় করবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রঞ্জিতা ও তাঁর পরিবার। 

ডিওয়াইএফআই-এর অভিযোগ, শুধু রঞ্জিতা রাভাই নন, বহু সাংবাদিকের চাকরিজীবনে অনিশ্চয়তা নেমে এসেছে। দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত সাংবাদিক বা সংবাদকর্মীদের দুই-তিন মাসের বেতন ধরিয়ে ছাঁটাই করে দেওয়ার খবরও তাঁদের কাছে আছে। গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলে দাবিদার সংবাদমাধ্যম বেঁচে আছে কেবল সাংবাদিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের বলে। ফলে সাংবাদিকদের জীবনে অনিশ্চয়তা নেমে এলে এর প্রভাব সমাজজীবনে পড়বে বলে মনে করেন ডিওয়াইএফআই নেতা নয়ন ভুইয়াঁ ও লোকনাথ অধিকারী।

তাঁদের স্পষ্ট দাবি, রঞ্জিতা রাভাকে চাকরিতে বহাল রাখতে হবে কর্তৃপক্ষকে। এছাড়া, রাজ্যের সকল সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের কাজের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

প্রসঙ্গত, গত ১৯ মে তাঁর ব্লগে তাঁকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন সাংবাদিক রঞ্জিতা রাভা। সংশ্লিষ্ট চ্যানেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কিছু প্রশ্ন তুলে তিনি লিখেছেন, গৰ্ভবতী হওয়ার জন্যই তাঁকে সাংবাদিকতার চাকরি থেকে অব্যাহতি নিতে বাধ্য করা হয়েছে। ব্লগে তিনি তাঁর আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। এতে তিনি লিখেছিলেন, এই প্রতিষ্ঠানের হয়ে টানা ১৩ বছর আপসহীন সাংবাদিকতা করে গেছেন। তাঁর কাজে সন্তুষ্ট হয়ে মালিক তথা কর্তৃপক্ষ বহুবার বাহবাও দিয়েছেন। কিন্তু পরিণতি এমন হবে ভাবতে পারছেন না। তাঁকে রিজাইন দিতে বাধ্য করা হয়েছে।

এ ঘটনার পর হিন্দুস্থান সমাচার-এর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মানবাধিকার কৰ্মী ড. দিব্যজ্যোতি শইকিয়া জানান, ‘আমি বিস্মিত, বহু বছর ধরে দেখছি, সংবাদ প্ৰতিষ্ঠানের মালিকগোষ্ঠী কী ধরণে সাংবাদিকদের ওপর মানসিক চাপ দেয়। সেই সাংবাদিক হাউজটির বিরুদ্ধে দাঁড়ান না। সাংবাদিকরা অন্যের ন্যায় বা অন্যায়ের কথা বলেন। কিন্তু নিজের বেলায় যখন অন্যায় সংগঠিত হয় তখন তাঁরা নীরব থাকেন বা নিজের লাইন পরিবর্তন করতে হয়। অন্যের ক্ষেত্ৰে যেভাবে সাংবাদিকরা গুরুত্বপূৰ্ণ ভূমিকা পালন করেন, নিজের বেলায় সেই দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে প্রত্যেক সাংবাদিকের।’ 

ড. দিব্যজ্যোতি শইকিয়া আরও বলেন, ‘রঞ্জিতা রাভাকে বহুবার পেয়েছি। তাঁর কর্মোদ্যম প্রশংসনীয়। তিনি বিনা বেতনে মেটারনিটি লিভ চেয়েছিলেন। কিন্তু তাতে রাজি না হয়ে রিজাইন করতে বাধ্য করা হয়েছে। এটা তাঁর বিরুদ্ধে গুরুতর অন্যায় হয়েছে।’ 

এদিকে ঘটনাটি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলে প্ৰতিক্ৰিয়া প্ৰকাশ করেছেন কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন জাফা-র প্ৰধান সম্পাদক কুঞ্জমোহন রায়। এক বিবৃতি জারি করে তিনি বলেন, ‘অসমে সাংবাদিকতা জগতে প্ৰায় দুই দশক ধরে সংবাদ পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত একজন সাহসী তথা দায়িত্ত্বশীল ও নিষ্ঠাবান বলে খ্যাত মহিলা সাংবাদিক রঞ্জিতা রাভাকে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার জন্যই যদি চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়, তা হলে এটা চূড়ান্ত অমানবিক এবং আইন বিরুদ্ধ কাজ হয়েছে।’ কুঞ্জমোহন বলেন, ‘সাংবাদিক রঞ্জিতা রাভাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘটনা সম্পৰ্কে সংশ্লিষ্ট টিভি চ্যানেলের কৰ্তৃপক্ষকে শীঘ্ৰ নিজের স্থিতি জনস্বার্থে প্রকাশ করা উচিত।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট টিভি চ্যানেল প্ৰাগ নিউজের প্রধান পরিচালন অধিকর্তা (সিএমডি) সঞ্জীব নারায়ণের বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়েছিল। তাঁর বক্তব্য, ‘তাঁকে আমরা বাধ্য করিনি। তিনি নিজে রিজাইন দিয়েছেন।’ তাছাড়া তিনি উল্টো প্রশ্ন করেন, ‘তিনি এখজন অন্তঃসত্ত্বা মহিলা। সে ক্ষেত্রে কোভিড-১৯-এর প্রকোপ যখন চলছে, তখন তাঁকে রিপোৰ্টিং করতে দেওয়া যায় না কি? যদি কেউ কোভিড-১৯-এর আবহে রিপোৰ্টিং করলেই তাঁর (রঞ্জিতা) কোনও ক্ষতি হবে না বলে দায়িত্ব নেন, তা হলে তাঁকে আমরা নিতে প্ৰস্তুত।’ মেটারিনিটি লিভ প্রসঙ্গে সঞ্জিব নারায়ণ বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠান বেসরকারি। তাই বেসরকারি প্ৰতিষ্ঠানে মেটারনিটি লিভে পে করার কথা নয়। তিনি যে রেজিগন্যাশন লেটার দিয়েছেন তাতে স্পষ্ট করে লিখেছেন, সন্তান জন্ম নেওয়ার পর আবার এসে কাজে যোগদান করবেন তিনি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *