গুয়াহাটি, ১৩ মে (হি.স.) : নয়াদিল্লি থেকে অসমের ডিব্রুগড়গামী ০২৪২৪ নম্বরের রাজধানী এক্সপ্রেস (বিশেষ ট্রেন) ৮৮১ জন যাত্রী নিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় গুয়াহাটি এসে পৌঁছবে। আগত যাত্রীদের নিয়ে প্রচণ্ড উদ্বেগে রাজ্য সরকার। আজ থেকে রাজ্য সরকারের আসল চ্যালেঞ্জ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। নবাগতদের করোনাজনিত স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বহু ঝুঁকি সামাল দিতে হবে সরকারকে, জানান মন্ত্রী।
ইতিমধ্যে কোকরাঝাড় রেলস্টেশন ছেড়ে দিয়েছে রাজধানী এক্সপ্রেস। কোকরাঝাড়ে নেমেছেন ৮ যাত্ৰী। বিপরীতে কোকরাঝাড় থেকে আরও পাঁচ যাত্রী ডিব্ৰুগড়গামী এই রাজধানী এক্সপ্রেসে উঠেছেন। দিল্লি সহ অন্য রাজ্য থেকে আগত যাত্রীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে তাঁদের গৃহজেলার প্রশাসন সতৰ্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছে।
কোকরাঝাড়ের নবনিযুক্ত জেলাশাসক ভাস্কর ফুকন জানান, যে আট যাত্রী কোকরাঝাড়ে নেমেছেন স্টেশনেই তাঁদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। এর পর তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক নিভৃতবাসে। জানান, কোকরাঝাড়ে এখন পর্যন্ত ১,৮০০ জনের বেশি সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে।
মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা জানান, আজ থেকে আমাদের কাছে আসল প্ৰত্যাহ্বান শুরু হবে। কেননা, নয়াদিল্লি থেকে ডিব্ৰুগড় পর্যন্ত আজ (১৩ মে) বিশেষ ট্রেনটি আসার পরও এই সপ্তাহে একাধারে বহিঃরাজ্যে আটক অসমের বাসিন্দারা আসতে থাকবেন। সাত হাজারের বেশি মানুষকে এক সঙ্গে কোয়ারেন্টাইন করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে। হিমন্তবিশ্ব বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম কেবল একটি ট্রেনেই অসমে আসবেন যাত্রীরা। কিন্তু সোমবার রাতে রেলওয়ে বোৰ্ডের সঙ্গে কথা বলার পর জানলাম এক সপ্তাহ ট্রেন চলবে অসম ও ত্রিপুরা পর্যন্ত। এই সব ট্রেনে রাজ্যে মানুষের স্রোত বইবে।’
মন্ত্রীর উদ্বেগের কারণ, ট্রেনগুলি সরাসরি অসমে আসবে না। উত্তরপ্ৰদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ইত্যাদি রাজ্যের করোনা আক্ৰান্ত এলাকা হয়ে যাত্ৰী নিয়ে অসমে আসতে থাকবে ট্রেনগুলি। তাই এই বিষয়কে যথেষ্ট প্ৰত্যাহ্বান বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম, দুটি ট্রেনের যাত্ৰার মধ্যে কয়েকদিনের ব্যবধান রাখা হোক। কিন্তু কেন্দ্ৰ ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছে, যে সকল রাজ্যে বহিঃরাজ্যের মানুষ আটকে পড়েছেন তাঁদের স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলো। তাঁরা অতিরিক্ত দায়িত্ব নিতে অপারগতার কথা জানালে কেন্দ্রীয় সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
মন্ত্রী জানান, পরিযায়ী শ্ৰমিকদের জন্য বিশেষ ট্রেন ছাড়াও দিল্লি থেকে দেশের ১৫টি বিশেষ শহরে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এগুলিরই একটি আজ গুয়াহাটি হয়ে ডিব্ৰুগড়ে যাবে। আগামী এক সপ্তাহে মোট ৭০০০ জন এই সকল ট্রেনে অসমে আসবেন। আজকের রাজধানী এক্সপ্রেসে অসমের মোট ৮৮৯ জন যাত্ৰী দিল্লি থেকে উঠেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৮৪২ জন নামবেন ডিব্ৰুগড়ে। এঁদের একাংশ যাবেন প্রতিবেশী অরুণাচল প্ৰদেশে। আট জন কোকরাঝাড়ে এবং ৩৭ জন গুয়াহাটির যাত্ৰী। ইতিমধ্যে রাজ্য সরকার তৎপরতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারদের সঙ্গে কথা বলে অসমে আগত যাত্ৰীদের নিজের নিজের জেলায় কোয়ারেন্টাইন করারা ব্যবস্থা করেছে।
তবে কোয়ারেন্টাইন করার ক্ষেত্ৰেও ড. শৰ্মাই শুনিয়েছেন বিশেষ সতর্কতা। বলেন, ‘কেন্দ্ৰের নিৰ্দেশ অনুযায়ী কেবল লক্ষণ আছে এমন যাত্রীকে শনাক্ত করে করোনা ভাইরাসের টেস্ট করা হবে। বাকিদের পাঠানো হবে ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টাইনে। ওই সব কোয়ারেন্টাইন সেন্টার করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলার স্কুল, কলেজ, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্ৰে। ওই সব কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে খুব বেশি সুবিধা দেওয়া যাবে সে আশা না করার আহ্বানও জানিয়ে রেখেছেন মন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে বলেন, শৌচাগার থেকে শয্যা, খাওয়া দাওয়া খুব একটি ভালো না-ও হতে পারে বলে আগাম জানিয়ে রেখেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা।