আর কে সিনহা
আজ সারা বিশ্বে দুঃখ ও নিস্তব্ধতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। করোনার সংক্রমণ চক্র ভাঙার জন্য বিশ্বের ১৭৫ টি দেশে লকডাউন চলছে। কিন্তু চিনে পরিস্থিতি ক্রমশই স্বাভাবিক হচ্ছে। করোনার সূতিকাগার চিনের উহান শহরে অফিস এবং কারখানায় ধীরে ধীরে কাজ করতে শুরু করে দিয়েছে। মেট্রোরেলও চলতে শুরু করেছে। এই শহরেই করোনার ভাইরাসের কারণে কয়েক হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল।উহান কঠোরভাবে লকডাউন জারি করা হয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা শহরটির রয়েছে। চিনের বাকি অংশগুলিতে কখনও এক সঙ্গে লকডাউন জারি হয়নি। তাই এখন সন্দেহ বিশ্বাসে পরিবর্তিত হচ্ছে যে উহানের গবেষণাগারে মানব- নির্মিত করোনার ভাইরাস বিশ্বকে দিয়েছে চিন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন প্রকাশ্যে অভিযোগ করছেন যে চিনের কারণে বিশ্বজুড়ে করোনার ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি দাবি করেছেন যে তার কাছে তার কাছে শক্তপক্ত প্রমাণও রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের মধ্যে উত্তেজনা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট করেই বলছেন যে চিনই করোনার ভাইরাস ছড়িয়ে দিয়েছে।এই ভাইরাসটিকে উহান ইনস্টিটিউট অফ বায়োলজির ল্যাবে তৈরি করা হয়েছিল।
১ মে এক সংবাদ সম্মেলন চলাকালীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে করোনার সঙ্গে উহান যোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি সরাসরি চিনের দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তোলেন। বলা বাহুল্য, নির্দিষ্ট প্রমাণ হাতে আছে বলেই এই ধরণের অভিযোগ তুলছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। অযথা কোনও কারণ ছাড়াই চিনের বিরুদ্ধে এত মারাত্মক অভিযোগ তো তিনি তুলবেন না।
একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন যা রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প উত্থাপন করেছেন তার জবাব চিন দিতে পারবে না। ট্রাম্প জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে করোনা যখন উহানে ছরিয়ে পড়েছিল, তখন চিনি নববর্ষ উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল চিন। উহানের নাগরিকরা ঘুরে বেড়ানোর জন্য বাইরে যেতে চেয়েছিল। বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিলেও, দেশের মধ্যে ঘুরে বেড়াবার অনুমতি তাদের দেওয়া হয়নি। গোটা বিশ্বে করোনা ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা মাফিক চক্রান্ত ছাড়া আর কি হতে পারে?
কতটা নির্দয় রাষ্ট্র চিন
এই পরিস্থিতিতে এটাও ভাববার বিষয় যখন গোটা বিশ্ব করোনার জেরে নাজেহাল। তখন মারণ এই ভাইরাসের উপর কি ভাবে প্রায় নিয়ন্ত্রণে করে ফেলেছে চিন। এই প্রশ্নের উত্তর চিনকে দিতে হবে। চিন অত্যন্ত ধূর্ত ও অত্যাচারী রাষ্ট্র। আপনি এদের কাছ থেকে যে কোনও ধরণের নিপীড়ন আশা করতে পারেন। চিনা সরকার যে কতটা অত্যাচারী তার নির্দশন হচ্ছে তিয়েন আমেন স্কোয়ারের গণহত্যার ঘটনা। বর্তমান প্রজন্ম নাও জানতে পারে যে চিনা সামরিক বাহিনী ১৯৮৯ সালের জুনে গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারীদের ট্যাঙ্ক – এ পিষে মেরে দিয়েছিল। কয়েক হাজার যুবককে ঘিরে ধরে হত্যা করা হয়েছিল। চিনে নিযুক্ত তৎকালীন ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত অ্যালান ডোনাল্ড জনসমক্ষে দাবি করেছিলেন যে এই সামরিক অভিযানে ১০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়ে ছিল। বর্তমানে যে চিন গোটা বিশ্বকে করোনা ভাইরাসের জালে আটকে রেখেছে। সেই দেশের বামপন্থী সরকার এই গণহত্যা নিয়ে কোন আলোচনা করার অনুমতি পর্যন্ত দেয়নি. এখন চিনের অন্ধকার দিক গোটা বিশ্বের সামনে প্রস্ফুটিত হয়ে উঠেছে।
ট্রাম্প বলার আগেই গোটা বিশ্ব বলতে শুরু করেছিল যে চিন বিশ্বকে করোনার ভাইরাস দিয়েছে। তবে এখনও পরিষ্কার নয় যে করোনার মাধ্যমে চিন কেন বিশ্বকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেল? করোনার ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আগে পুরো বিশ্বে তো নিজের আধিপত্য প্রায় প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছিল চিন। গোটা আফ্রিকাজুড়ে চিন এত বেশি বিনিয়োগ করেছে যে সেখানকার বহু দেশ তার দাসে পরিণত হয়েছে। ভারতের উৎপাদন শিল্পের বেশিরভাগ কাঁচামাল চিন দেশ থেকে আসে। আমাদের বেশিরভাগ উত্পাদনকারী ইউনিট চিন থেকে কাঁচামাল কিনছে এবং তাদের ব্র্যান্ডিংয়ের সাথে এখানে বিক্রি করছে। আমাদের শিল্পপতিরা এক কথায় চিনের কাছে আত্মসমর্পণ করে দিয়েছে।
সতর্ক করেছিলন জর্জ ফার্নান্ডেজ
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ সম্পর্কে যখন কেউ ভাবতও না, তখন সমাজবাদী নেতা জর্জ ফার্নান্ডেজ বলতেন যে আমাদের প্রথম শত্রু চিন। এমন কোন জিনিস নেই যা আমরা চিন থেকে আমদানি করি না। বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। ভারতকে এখন চাইনিজ পণ্যের প্রলোভন এড়াতে হবে। মনে রাখবেন পাকিস্তানকে এগিয়ে রেখে ভারতকে দুর্বল করার কোনও সুযোগ ছাড়বে না চিন। হাফিজ সইদের মতো সন্ত্রাসবাদীকে রাষ্ট্রসংঘ যখন সন্ত্রাসবাদীদের তালিকায় রাখার কথা বলে তখন ক্রমাগত চিন বাধা দিয়ে যায়।
আমাদের জমি জবর দখল করেছে চিন
করোনার বাইরে গিয়ে আলোচনা করলে দেখা যাবে ভারতের সঙ্গে চিনের সম্পর্ক সবসময়ই শত্রুর মতই ছিল। ১৯৬২ সালের যুদ্ধের সময় ৩৭২৪৪ বর্গকিলোমিটার জমি দখল করেছিল চিন। সেই জমি দখল এখনও তারা ছাড়েনি। সেই যুদ্ধের ৫৮ বছর পরেও ভারতের আকসাইচিন নিজের দখলে রেখেছে চিন। এখন সারা বিশ্বের মতো ভারতও চিনের করোনার জালে আটকে পড়েছে। ভারতেও রোগীদের সংখ্যা বাড়ছে। তবে চিন কারও আপন নয়। করোনার জেরে পাকিস্তানও ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছে। সেখানেও করোনার ভাইরাসের কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। চিন এখন আর তার সঙ্গে নেই। অন্যথায়, যে কোনও সংকটকালে চিনের কাছে হাত পাতে ও ছুটে যায় পাকিস্তানি শাসকরা।এখন পাকিস্তানেরও চোখ খোলা উচিত। যাই হোক, সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা করোনার ভাইরাস নিরাময়ের জন্য প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন প্রস্তুত করার জন্য দিনরাত চেষ্টা করছেন।
করোনা যখন ভারতে কড়া নাড়ালে আমরা তখন প্রস্তুত ছিলাম না।আমাদের কাছে মাস্ক, পিপিই কিট, পরীক্ষা করার সুবিধা, ভেন্টিলেটর কোনওটাই ছিল না। মোদী জির শক্তিশালী নেতৃত্ব এবং সংকল্পের জেরে আজ আমরা প্রায় সবকিছুতে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপশি, অন্যান্য দেশকেও রফতানি করতে পারছি।
সুতরাং, আশা করা যায় যে শিগগিরই ভারতে করোনার ভাইরাস নির্মূল করতে পারবে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা করোনার ভ্যাকসিনের বাণিজ্যিক উৎপাদন চালু করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে খবর রয়েছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাকসিনের পরীক্ষাগুলি তাদের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সব ঠিকঠাক থাকলে জুনের মধ্যে ভ্যাকসিন আসবে।একবার করোনার উপর বিজয়ী হওয়ার পর, গোটা বিশ্বের উচিত চিন কে উচিত শিক্ষা দেওয়া। তাকে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। শাস্তির অর্থ যুদ্ধ নয়। তবে বিশ্ব সম্প্রদায় উচিত তাদের সঙ্গে সমস্ত অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে দেওয়া। তবেই চিন বুঝতে পারবে সে পৃথিবীকে কতটা কষ্ট দিয়েছিল। শুধু এটিই নয়, কোনও দেশ যদি চিনের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখে, বিশ্বের উচিত তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা। সারা বিশ্বের উচিত চিনকে বয়কট করা। এটাই স্থায়ী সমাধান। হিন্দুস্থান সমাচার / শুভঙ্কর/ কাকলি
(লেখক রাজ্যসভার প্রাক্তন সংসদ)