নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩০ এপ্রিল৷৷ চেন্নাই থেকে অ্যাম্বুলেন্স-এ ত্রিপুরায় ফিরে আসা দুই পরিবারকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়েছে৷ কারণ, গতকাল যে অ্যাম্বুলেন্সে করে তারা রাজ্যে এসেছিলেন সেই অ্যাম্বুলেন্স-চালকের শরীরে করোনা পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে৷ এছাড়া উদয়পুর নিবাসী এক পরিবারের বাড়ির আশপাশের চারটি বাড়ির সকলকে বাড়িতেই কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে৷ অতি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন গোমতির জেলাশাসক টি কে দেবনাথ৷ দক্ষিণ ত্রিপুরার জেলাশাসক দেবপ্রিয় বর্ধনের কথায়, বাইখোরার ওই পরিবারের বাড়ির আশেপাশে কাউকে কোয়ারেন্টাইনে নেওয়ার প্রয়োজন পড়েনি৷ কারণ, ত্রিপুরায় ফেরার পর তাদের সাথে কারোর যোগাযোগ হয়নি৷
প্রসঙ্গত, বহিঃরাজ্য থেকে রাজ্যে ফিরে করোনার সংকেত চিন্তা বাড়িয়েছে বলে স্বীকার করেছেন শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ৷ তিনি সাংবাদিকদের বলেন, রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সমস্ত ঘটনা বহিঃরাজ্য থেকে প্রবেশের কারণেই ঘটেছে৷ এই বিষয়ে গোমতির জেলাশাসক টি কে দেবনাথ বলেন, গত সোমবার চেন্নাই থেকে অ্যাম্বুলেন্সে রাজ্যের দুই পরিবার ফিরেছেন৷ ওইদিন অনেক রাতে তারা উদয়পুরে পৌঁছেছিলেন৷ তাই ওইদিন উদয়পুর এবং বাইখোরার দুই পরিবারকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছিল৷ সাথে অ্যাম্বুলেন্সের দুই চালককেও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়৷ তিনি জানান, তাদের করোনা আক্রান্তের কোনও লক্ষণ না হওয়ায় গতকাল নমুনা সংগ্রহের পর পঞ্চায়েতরাজ ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন থেকে বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়৷
গোমতির জেলাশাসক বলেন, অ্যাম্বুলেন্স চালকদের ২৮ এপ্রিলের মধ্যেই ত্রিপুরা ছাড়তে হবে, এই শর্তের কারণে তারা মঙ্গলবারই তামিলনাড়ুর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন৷ গতকাল তাদের রিপোর্ট এসেছে৷ তাতে অ্যাম্বুলেন্সের একজন চালকের শরীরে করোনা পজেটিভ হিসেবে পাওয়া গিয়েছে৷ বাকিদের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে৷
গোমতির জেলাশাসক বলেন, টিএন ০৭ এবি ৭২২১ নম্বরের অ্যাম্বুলেন্সটি গতকাল পশ্চিমবঙ্গের নিউ জলপাইগুড়ি জেলার ধুপগুড়ি এলাকায় আটকানো হয়েছে৷ তাদের এখন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছেঊ তাঁর কথায়, উদয়পুর নিবাসী ওই পরিবারকে বাড়িতে কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছিল৷ কিন্তু রাতেই তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়ঊ তাঁর দাবি, উদয়পুরের অমরসাগর দক্ষিণপাড়াস্থিত পুলিশ সুপারের সরকারি আবাসনের বিপরীতে অবস্থিত ওই পরিবারের প্রতিবেশী চারটি বাড়ি আজ কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে৷
দিকে, বাইখোরা নিবাসী চেন্নাই থেকে ফেরা ওই পরিবারকেও প্রথমে বাড়িতে কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছিল৷ কিন্ত চালকের রিপোর্ট পজিটিভ হওয়ায় তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছেঊ এ-বিষয়ে দক্ষিণ ত্রিপুরার জেলাশাসক দেবপ্রিয় বর্ধন বলেন, ওই পরিবারের দুই সদস্যের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছেঊ তবুও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছেঊ তবে, ওই পরিবারের সাথে আশপাশের কারোর কোনও যোগাযোগ হয়নিঊ তাই, অন্য কাউকে কোয়ারেন্টাইন করার প্রয়োজন পড়েনিঊ
এদিকে, শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ এ-বিষয়ে বলেন, ত্রিপুরা এখনও বিপদমুক্ত বলেই মনে করা হচ্ছে৷ কিন্তু নিশ্চিন্তে থাকার সুযোগ নেই৷ তাঁর বক্তব্য, লক্ষণহীন অনেকেই দেশে করোনা আক্রান্ত হিসেবে চিহিণত হয়েছেন৷ ফলে, কোয়ারেন্টাইনের সময়সীমা সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত ত্রিপুরা বিপদমুক্ত বলে মনে করা যাচ্ছে না৷ তাঁর কথায়, এই ঘটনা বহিঃরাজ্যে যারা আটকে রয়েছেন তাদের ফিরিয়ে আনার বিষয়েও প্রশ্ণ তুলেছে৷ কারণ, ত্রিপুরায় এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্তের সমস্ত ঘটনাই বহিঃরাজ্য থেকে আসার ফলেই ঘটেছে৷
শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে বহিঃরাজ্য থেকে যারা ত্রিপুরায় ফিরছেন তারা কতটা বিপদমুক্ত সেই প্রশ্ণ ওঠা অস্বাভাবিক নয় বলেই মনে হচ্ছে৷ কারণ, বহিঃরাজ্যে লকডাউনে দিশেহারা ত্রিপুরার নাগরিকদের বোঝার সুযোগ নেই, যে গাড়িতে তারা ত্রিপুরায় ফিরবেন ওই গাড়ির চালক করোনা মুক্ত কি না৷ ফলে, নিজ উদ্যোগে রাজ্যে ফেরাও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে৷ এক্ষেত্রে রাজ্য সরকার নতুন চিন্তাধারা করবে কিনা সেই প্রশ্ণও উঠেছে৷ কারণ, শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, গতকাল সর্বদলীয় বৈঠকেও এই বিষয়টি নিয়ে নানা প্রশ্ণ উঠেছে৷