আগরতলা, ২৬ এপ্রিল (হিঃসঃ)৷৷ গোটা বিশ্ব আজ করোনা মহামারির বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হতে চাইছে৷ কিন্তু ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দেখানো পথেই যুদ্ধ জয় সম্ভব, দেশের প্রান্তিক রাজ্য ত্রিপুরার এক অনামি প্রযুক্তিবিদ সেটাই প্রমাণ করে দেখিয়েছেন৷ সামাজিক দূরত্ব, প্রধানমন্ত্রীর এই আবেদনে সাড়া দিয়ে আস্ত একটি বাইক বানিয়ে ফেললেন ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার আরালিয়া এলাকার বাসিন্দা পার্থ সাহা। বাইকেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব, সেটাই তিনি প্রমাণ করেছেন৷
পুরনো বাইকের কিছু যন্ত্রপাতি এবং রড ও মোটর ব্যবহার করে তিনি সামাজিক দূরত্ব-বাইক বানিয়েছেন৷ ব্যাটারি চালিত ওই বাইকের চালক এবং সহ-যাত্রীর মধ্যে দূরত্ব রাখা হয়েছে ২ মিটার৷ পার্থবাবুর দাবি, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যাব কীভাবে, সেই চিন্তা থেকেই এই বাইক বানিয়েছি৷ দেশে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেলে এই বাইকের প্রয়োজনীয়তাও ফুরিয়ে যাবে৷
করোনা মোকাবিলায় দেশ আজ একজোট, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বিরল এই আবিষ্কারে সেটাই প্রমাণিত হয়েছে৷ পার্থ সাহার কথায়, পুঁথিগত বিদ্যা আমার তেমন নেই। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তির প্রতি আমার ভীষণ ঝোক ছিল৷ তাই ব্যতিক্রমী কিছু আবিষ্কারের নেশা ছিল বরাবরই৷ তিনি বলেন, মাধ্যমিক পাশ করতে পারিনি৷ কিন্তু তাতে আমার কোনও আক্ষেপ নেই৷ ইলেকট্রনিক্স নিয়ে বেসরকারি কোচিং সেন্টার থেকে শিক্ষা নিয়েছি৷ ভালো কাজের জন্য সেখানে চাকরিও পেয়েছি৷ কিন্তু অভিনব কিছু আবিষ্কার করি, সেই নেশায় চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলাম৷ তাঁর কথায়, প্রযুক্তির নানা কলা-কৌশল ব্যবহার করে অনেক কিছুই বানিয়েছি৷ ইউটিউব চ্যানেলে সেই সব আবিষ্কার প্রকাশ করেছি। আজ বেশ ভালোই আছি৷
পার্থের মতে, জীবিকা নির্বাহের জন্য সামান্য আয়োজনই যথেষ্ট৷ বাবা, মা, স্ত্রী ও এক কন্যা সন্তান নিয়ে ছোট্ট সংসারে প্রয়োজন সামান্যই৷ তাই, অর্থের প্রতি কখনওই মোহ নেই। তিনি বলেন, ইতিপূর্বে ইলেকট্রিক বাইক বানিয়েছি৷ যার গতি প্রতি ঘণ্টায় ৬০ কিমি। তিনি চাইছেন, সরকারি সহায়তা মিললে ইলেকট্রিক চালিত ট্রেন বানাবেন৷ স্বদেশী প্রযুক্তির ওই ট্রেন অনেক সাশ্রয়ী হবে বলে দাবি করেন পার্থ সাহা৷
এমনই এক আবিষ্কার সম্পর্কে তিনি বলেন, করোনা মোকাবিলায় এখন লকডাউন চলছে। ফলে আমাদের সকলের সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা খুবই জরুরি৷ তাই সামাজিক দূরত্বের বাইক তৈরি করেছি৷ বাইকের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি জানান, পুরনো বাইকের যন্ত্রপাতি আলাদা করে মাঝখানে রড বসিয়ে দিয়েছি৷ তাতে, সামনের চাকার সাথে পেছনের চাকার দূরত্ব রেখেছি ৩ মিটার৷ তাছাড়া, দুই আসনের মধ্যেও দূরত্ব রেখেছি ২ মিটার। কারণ, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য ওইটুকু ব্যবধান থাকতেই হবে৷ তাঁর কথায়, ব্যাটারি এবং মোটরের মেলবন্ধনে বাইক তৈরি হয়ে গেছে৷ এই বাইক চালানোর জন্য পেছনের চাকা যান্ত্রিকভাবে ঘুরতে হবে৷ তাই পেছনের চাকায় ৭৫০ ওয়াট এবং ৪৮ ভোল্টের একটি মোটর লাগিয়েছি৷ তাছাড়া, বাইকের যাবতীয় যন্ত্রপাতি প্রয়োজন অনুযায়ী লাগানো হয়েছে৷ উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, চাকায় শক-অ্যাবজর্ভার এবং গতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ক্ষমতাসম্পন্ন ব্রেক৷
সাহাবাবু বলেন, পেছনের আসনে একটি রড দিয়ে হ্যান্ডল বানিয়ে বসানো হয়েছে৷ তাতে ওই আসনে যে বসবে, অন্তত বাইক থেকে যাতে পড়ে না যায়, সেই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তাঁর কথায়, এই বাইক তৈরি করতে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে৷ খরচের বিস্তারিত হিসাবও দিয়েছেন তিনি৷ তাঁর দাবি, ব্যাটারি ১৫ হাজার টাকা এবং মোটর ও পুরনো বাইকের জন্য ১৫ হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছে৷ তিনি বলেন, ওই বাইক তৈরি করতে ১ দিন সময় লেগেছে৷
ছেলের বিস্ময়ী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে গর্বিত মা বলেন, ছোটবেলা থেকেই পার্থ নানা যন্ত্রপাতি নিয়ে খেলাধুলা করত৷ ইলেকট্রনিক্সের প্রতি তার অসম্ভব আকর্ষণ৷ তাই আমরাও তাকে কখনও আটকাইনি৷