নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৬ এপ্রিল ৷৷ লকডাউনের ফলে মোটর শ্রমিকরাও রাস্তায় যানবাহন নিয়ে বের হতে পারছেন না৷ ফলে তাদের পরিবারে অভাব অনটন চরম আকার ধারণ করেছে৷ শ্রমিকদের এই দুঃসময়ে খাদ্য সামগ্রী প্রদান করে সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করেছে নাগেরজলা অটো স্ট্যান্ডের কর্মকর্তারা৷ রবিবার শ্রমিকদের হাতে খাদ্য সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়৷ অক্ষয় তৃতীয়ার শুভলগ্ণে নাগেরজলা অটোস্ট্যান্ডে কর্মকর্তারা শ্রমিকদের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করলেন৷ এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন৷ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন বলেন, গোটা দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করায় গরিব অংশের মানুষ এবং মোটর শ্রমিকরা অভাব অনটনে পড়েছেন৷
সেক্ষেত্রে এ ধরনের উদ্যোগ খুবই সময়োপযোগি তিনি বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে অনাহারের হাত থেকে রক্ষা করতে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগীদের এগিয়ে আসার যে আহ্বান জানিয়েছেন নাগেরজলা অটোস্ট্যান্ডের কর্মকর্তাদের এই উদ্যোগ তারই স্বার্থক রূপায়ণ৷ দুঃসময়ে খানিকটা সাহায্যের হাত সম্প্রসারিত করলেন যারা অসহায় তারা কিছুটা হলেও সমস্যা থেকে উত্তোরনের পথ খুঁজে পায়৷ বিশেষ করে অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করায় উদ্যোক্তাদের সাধুবাদ জানিয়েছেন বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন৷ তিনি আরও বলেন, সারা রাজ্যেই গরিব অংশের মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ক্লাব, স্বেচ্ছাসেবী ও সমাজসেবী সংগঠন এবং ব্যক্তিবর্গ খাদ্য সামগ্রী প্রদান করে চলেছেন৷ এ ধরনের উদ্যোগ মানবতাবোধের পরিচায়ক বলেও তিনি উল্লেখ করেন৷ বর্তমানে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিহত করার জন্য গোটা দেশজুড়ে যে যুদ্ধ চলেছে সেই যুদ্ধে জয়লাভ করতে হলে প্রত্যেককেই একে অপরের পাশে দাঁড়াতে হবে বলে উল্লেখ করেন বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন৷ নাগেরজলা অটোস্ট্যান্ডের কর্মকর্তারা জানান, অটো শ্রমিকদের মধ্যে চাল, ডাল, ভোজ্য তেল, সয়াবিন সহ অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী প্রদান করা হয়েছে৷ লকডাউনের সময়সীমা আরও বাড়লে তারা পুনরায় এ ধরনের খাদ্য সামগ্রী বিতরণের উদ্যোগ নেবেন বলেও তারা জানান৷
লকডাউনের ফলে গ্রাম পাহাড়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখীন৷ পাহাড়ি এলাকায় জনজাতিদের মধ্যে খাদ্য সমস্যা দেখা দিয়েছে৷ বাজারহাট বন্ধ থাকায় ওইসব এলাকায় নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসও মিলছে না৷ এইসব কথা বিবেচনা করেই বিধায়ক সুরজিৎ দত্ত রবিবার কৃষ্ণপুর বিধানসভা কেন্দ্রে জনজাতিদের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বণ্টন করলেন৷ বিধায়ক সুরজিৎ দত্ত রামনগর বিধানসভা কেন্দ্রের গণ্ডি পার হয়ে খাদ্য সামগ্রী বিতরণের জন্য ছুটে গেলেন জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায়৷ রবিবার কৃষ্ণপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক ডা. অতুল দেববর্মাকে সঙ্গে নিয়ে কৃষ্ণপুর বিধানসভা কেন্দ্রের রূপাছড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের করবং পাড়া সুকলমাঠে জনজাতিদের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন৷ প্রায় ২০০০ দুস্থ উপজাতির মধ্যে খাদ্য সামগ্রী তুলে দেন বিধায়ক সুরজিৎ দত্ত ও বিধায়ক ডা. অতুল দেববর্মা, ত্রিপুরা সড়ক পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যান দীপক কুমার মজুমদার সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ৷
রূপাছড়া গ্রাম পঞ্চায়েত, দক্ষিণ কৃষ্ণপুর গ্রাম পঞ্চায়েত, চাকমাঘাট, নয়নবাড়ি প্রভৃতি এলাকার জনজাতিরা ত্রাণ সংগ্রহের জন্য আসেন৷ বিধায়ক সুরজিৎ দত্ত বলেন, শুধু শহর এলাকাতেই ত্রাণ বণ্টন করলে চলবে না, জনজাতি অংশের মানুষও আমার ভাই-বোন৷ তারাও লকডাউনের ফলে মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন৷ তাদের জন্য মানবিক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে এগিয়ে আসা উচিত৷ সে কারণেই তিনি কৃষ্ণপুর বিধানসভা কেন্দ্রে খাদ্য সামগ্রী প্রদানের জন্য এগিয়ে এসেছেন৷ লকডাউনের সময়সীমা আর্য বাড়লে তিনি আরও ব্যাপক সংখ্যায় জনগণকে ত্রাণ প্রদান করবেন বলে জানিয়েছেন৷ বিধায়ক সুরজিৎ দত্তের এ ধরনের মহতী উদ্যোগে জনজাতি অংশের মানুষ রীতিমতো আপ্লুত৷ ত্রাণ বণ্টন অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা সড়ক পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যান দীপক কুমার মজুমদার বলেন, বিধায়ক সুরজিৎ দত্ত তার নিজ বিধানসভা এলাকায় চতুর্থ রাউন্ড পর্যন্ত ত্রাণ বণ্টন করেছেন৷ কৃষ্ণপুর বিধানসভা এলাকায় ত্রাণ বণ্টনের মধ্য দিয়ে তিনি জনজাতিদের প্রতি তার আত্মিক সম্পর্কের বার্তা দিয়েছেন৷
করোনা সংক্রমণ রোধে লকডাউনের ফলে কর্মহীন হয়ে পড়া গরিব দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াল রাজধানীর উত্তর বনমালীপুরের ইয়ংস কর্নার ক্লাব৷ রবিবার অক্ষয় তৃতীয়া শুভ দিনে গরিব ও দুস্থ মানুষের হাতে শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীই নয়, মিষ্টি ও বিসুকটের প্যাকেটও তুলে দেন ক্লাব কর্মকর্তারা৷ এদিন সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক৷ সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক অক্ষয় তৃতীয়া উপলক্ষ্যে রাজ্যবাসীকে শুভেচ্ছা জানান৷ পাশাপাশি সঙ্কটময় মুহূর্তে গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ানোয় ধন্যবাদ জানান৷ অনুষ্ঠানে ২০৩ জনের হাতে বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়৷
লকডাউনে কর্মহীন দরিদ্র শ্রমিক পরিবারের হাতে ত্রাণ তুলে দিলেন কংগ্রেস নেতা সুবল ভৌমিক৷ রবিবার কুমারঘাটে স্থানীয় কংগ্রেস নেতা কর্মীদের সহযোগিতায় দুস্থ মানুষের হাতে চাল, ডাল সহ অন্যান্য ভোজ্য দ্রব্য তুলে দেন৷ এক সাক্ষাৎকারে কংগ্রেস নেতা সুবল ভৌমিক বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের দ্বারা প্রচারিত বিভিন্ন পদক্ষেপের বাস্তবায়ন না ঘটায় তার তীব্র সমালোচনা করেন৷ পাশাপাশি এদিন কংগ্রেস দলের তরফে কুমারঘাটে ১৫০ পরিবারকে ত্রাণ বন্টন করা হয়েছে বলেও দাবি করলেন কংগ্রেস নেতা সুবল ভৌমিক৷ কিন্তু ছবি অন্য কথা বলছে৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে ৪০থেকে ৫০জনকে দেওয়া হয়েছে ত্রাণ আর এর প্রচার করতে গিয়ে কংগ্রেস নেতারা বলেছেন ১৫০ পরিবারের কথা৷ এদিনের ত্রাণ বন্টনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী প্রকাশ দাস, নারী পান্না দেব, প্রদেশ কংগ্রেস সম্পাদক চূড়াচাদ শর্মা প্রমুখরা৷
বাধারঘাট শ্রীপল্লী এলাকায় কল্পতরু উৎসবের অর্থ সাশ্রয় করে রবিবার গরিব মানুষের মধ্যে খাদ্য পণ্য সামগ্রী প্রদান করেছে কল্পতরু উৎসব কমিটি৷ এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠের সম্পাদক হিতকামানন্দ মহারাজ৷ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে হিতকামানন্দ মহারাজ বলেন, কল্পতরু উৎসব গত কয়েকবছর ধরেই ভক্তরা করে আসছেন৷ কল্পতরু উৎসবের অর্থ সাশ্রয় করে সমাজসেবায় খরচ করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল৷ তাতে সাড়া দিয়েই উৎসবের অর্থ সাশ্রয় করে রবিবার এলাকার ১২০টি দুস্থ পরিবারের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়৷ এ ধরনের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন হিতকামানন্দ মহারাজজী৷ তিনি বলেন, লকডাউন চলাকালে তিনমাস পর্যন্ত সরকারি সাহায্য মিলবে৷ কিন্তু তারপর সমস্যা আরও বাড়বে৷ ঘরে বসে থাকলে পরিবার চলবে না, রাজ্য চলবে না, দেশ চলবে না৷ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রত্যেককেই কাজকর্মে শামিল হতে হবে৷ সরকারি নিয়মবিধি মেনে সকলকে চলার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন হিতকামানন্দ মহারাজজী৷

