গুয়াহাটি, ২০ এপ্রিল (হি.স.) : আগামী ৩ মে পর্যন্ত যথারীতি লকডাউন চলবে অসমে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিধিনিষেধের মধ্যে শিথিলতা দিলেও অনেক ক্ষেত্রে কড়া ওষুধ প্রয়োগের ব্যবস্থাও রয়েছে। সোমবার খানাপাড়ায় আসাম অ্যাডমিনিসট্রেটিভ স্টাফ কলেজের মিলনায়তনে রাজ্যের মুখ্যসচিব ও পুলিশপ্রধান এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন।
পুলিশপ্রধান ভাস্করজ্যোতি মহন্তকে পাশে বসিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যসচিব কুমার সঞ্জয় কৃষ্ণ জানান, আগামী কাল থেকে রাজ্যের সরকারি কার্যালয়গুলি খুলবে। উপসচিব পদমৰ্যাদা থেকে অন্য সব আধিকারিকদের উপস্থিত থাকতে হবে নিজের নিজের দফতরে৷ এছাড়া নির্দিষ্ট মেয়াদে গ্ৰেড ফোর, গ্ৰেড থ্ৰি ৩০ শতাংশ উপস্থিত থাকেবন। কর্মচারীদের যাতায়াতের জন্য সরকারি বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কেউ ব্যক্তিগত যানবাহন নিয়ে কার্যালয়ে আসতে পারবেন না। এছাড়া আগামী ৩ মে পর্যন্ত সচিবালয়ে বাইরের কোনও ব্যক্তি বা অন্য কার্যালয়ের আধিকারিকের যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। অন্যদিকে সচিবালয় সহ অন্য সব কাৰ্যালয়ের আধিকারিক ও কর্মচারী, এমন-কি সাধারণ নাগরিকদের সামাজিক ব্যবধান বজায় রেখে মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তিনি জানান, পাঁচজনের বেশি মানুষ কোথাও জড়ো হতে পারবেন না৷
মুখ্যসচিব জানান, কৃষিকৰ্মে কোনও বাধা আরোপ করা হয়নি। এছাড়া কিছু কিছু উদ্যোগ ক্ষেত্ৰে শিথিলতা দেওয়া হয়েছে, যেমন সার, বীজ, কীটনাশক ওষুধ উৎপাদন কেন্দ্র ও দোকান, চা উৎপাদন এবং প্যাকেজিং কেন্দ্র, পাটশিল্পকে লকডাউনের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। চলবে ২৩০টি খাদ্য প্ৰস্তুতকারী উদ্যোগ। তবে এগুলিতে ৫০ শতাংশ কর্মী কাজে যেতে পারবেন| গোশালার ক্ষেত্ৰেও বিধিনিষেধ নেই। খোলা থাকবে ইটভাট্টা। শ্ৰমিকদের একটি নিৰ্দিষ্ট জায়গায় রাখার নিৰ্দেশও দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এলাকার জেলাশাসকের কাছে অগ্ৰিম আন্ডারটেকিং দিতে হবে। জানান, ই-কমাৰ্চ এবং ডিজিটাল অৰ্থনীতির কাজকর্ম চলবে। এককথায় অত্যাবশক সামগ্ৰী ছাড়া বাকি বাণিজ্যিক প্ৰতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। খোলা থাকবে হিমঘরও। এছাড়া প্রয়োজনে ইলেক্ট্ৰিশিয়ান, জলের মিস্ত্ৰি, মোটর মেকানিক, কাঠমিস্ত্ৰি প্রভৃতি স্বনিয়োজিত কৰ্মীরা নিয়মের মধ্যে তাঁদের কাজ করতে পারবেন।
এভাবে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সব ক্ষেত্ৰের বাধা প্রত্যাহার করা হয়েছে। পানীয় জল এবং জলসেচের সঙ্গে জড়িত কাজেও বাধা নেই। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থানকারী শ্রমিকদের একদিনের জন্য তাঁদের নিজের নিজের বাড়িঘরে যাতায়াতের ব্যবস্থাও করে দেওয়া হবে। এছাড়া সপ্তাহে ৩ দিন, ৩ ঘণ্টার জন্য প্ৰয়োজনীয় পাঠ্যক্ৰমের বিপণি খোলা থাকবে বলে জানান মুখ্যসচিব।
রাজ্যের মুখ্যসচিব বলেন, এককথায় অসমে লকডাউন শিথিল হচ্ছে না৷ লকডাউনের নিয়ম মানতেই হবে৷ না মানলে কঠোর ব্যবস্থার সম্মুখিন হতে হবে৷ কেবল ডিজেস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্টই নয়, ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ২৬৯/২৭০ ধারায় মামলার মুখোমুখি হতে হবে লকডাউন ভঙ্গকারীর। মিথ্যা অজুহাত দেখিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসলে, ধরা পড়লে রক্ষে নেই। তাছাড়া পরিচয়পত্ৰ রাখতে হবে সকলকে। সর্বাবস্থায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতেই হবে। এছাড়া স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে জড়িত কাউকে পুলিশ বাধা দেবে না৷ যদি কোনও পুলিশ কর্মী এ ধরনের কাজ করেন তা হলে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রকাশ্য স্থানে পানের পিক বা প্ৰস্ৰাব করলে ভরতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ২৬৯/২৭০ ধারায় মামলা নেওয়া হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন মুখ্যসচিব।
কী কী বন্ধ থাকবে, তা-ও জানান মুখ্যসচিব। জানান, রেল, গণপরিবহণের বাস, টেক্সি, ক্যাব, শিক্ষা প্ৰতিষ্ঠান, সিনেমা হল, শপিং মল, জিমখানা, সুইমিং পুল, পাৰ্ক, থিয়েটার, বার, ধৰ্মীয় স্থান ইত্যাদি বন্ধ থাকবে। এছাড়া সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজন এবং জনসমাগমে বাধা আরোপ করা হয়েছে। কোনও মৃত ব্যক্তির শেষকৃত্যের জন্য ২০ জনের বেশি মানুষকে জমায়েত হতে দেওয়া হবে না। পরিযায়ী শ্ৰমিকরা এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যেতে চাইলে একবার অনুমতি পাবেন।
এক জিজ্ঞাসার উত্তরে মুখ্যসচিব জানান, অসমের বিভিন্ন প্রান্তে ১৬৪১ জন মানুষ লকডাউনের বলে আটকে পড়েছেন। তাঁদের বেশিরভাগ ঝাড়খণ্ড, মেঘালয়, ওড়িশার। এছাড়া অসমের ৯০০০ শ্ৰমিক রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় আবদ্ধ।