নয়াদিল্লি, ১৪ এপ্রিল (হি.স.): ভারতে প্রতিদিনই হু হু করে বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। একইসঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুও। করোনার প্রকোপে ত্রস্ত সমগ্র দেশবাসী। প্রত্যাশা ছিলই ভারতে বাড়ানো হতে পারে লকডাউনের মেয়াদ, সেই মতো আগামী ৩ মে পর্যন্ত ভারতে লকডাউনের মেয়াদ বাড়িয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবার সকাল দশটা নাগাদ জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, করোনা বৈশ্বিক মহামারির বিরুদ্ধে ভারতের লড়াই অত্যন্ত শক্তিশালীভাবে এগিয়ে চলেছে। সমস্ত দেশবাসীর তপস্যা, আপনাদের ত্যাগের জন্যই ভারত এখনও পর্যন্ত করোনার দ্বারা সম্ভাব্য সমস্ত ক্ষতি থেকে কিছুটা এড়িয়ে যেতে সফল হয়েছে। আপনারা কষ্ট সহ্য করেও, দেশকে বাঁচিয়েছেন। আমাদের এই ভারতকে বাঁচিয়েছেন। আমি জানি আপনাদের কতটা কষ্ট হয়েছে, কারও খাওয়ার কষ্ট, কারও আসা-যাওয়ার কষ্ট, কেউ ঘর-পরিবারের থেকে দূরে রয়েছেন। আমি আপনাদের প্রত্যেককে প্রণাম জানাচ্ছি। আমাদের সংবিধানে ‘we the people of india’ শক্তির কথা বলা হয়, এটাই তো সেই শক্তি।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই মুহূর্তে সমগ্র বিশ্বে করোনা মহামারির যা পরিস্থিতি, আমরা সবাই সে বিষয়ে মোটামুটি ওয়াকিবহাল। অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতে সংক্রমণ ঠেকানোর প্রচেষ্টা করা হয়েছে, আপনার তার সাক্ষী। আমাদের এখানে যখন করোনার একটি সংক্রমণ ছিল না, আর আগেই ভারত করোনা প্রভাবিত দেশ থেকে আগত যাত্রীদের বিমানবন্দরের স্ক্রিনিং শুরু করে দিয়েছিল। আমাদের এখানে যখন করোনার ৫৫০ সংক্রমণ ছিল, তখন ভারত ২১ দিনের লকডাউনের বড় পদক্ষেপ নিয়েছিল। ভারত সমস্যা বাড়ার অপেক্ষা করেনি, সমস্যা দেখা মাত্রই দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে, ওই সময়ই প্রচেষ্টা করা হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে করোনা-পরিস্থিতির প্রসঙ্গ টেনে এনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারত এখন অনেকটাই স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। প্রায় দেড় মাস আগে বেশ কিছু দেশ করোনা-সংক্রমণের ক্ষেত্রে প্রায়ই ভারতের সমান-সমান ছিল। এখন সেই সমস্ত দেশে ভারতের তুলনায় করোনা সংক্রমণ ২৫-৩০ গুন বেশি। হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ভারত হোলিস্টিক উপায় না নিলে, যথা সময়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত না নিলে এখন ভারতের পরিস্থিতি কী হত, সে বিষয়ে কল্পনা করতেই শরীর শিহরিত হয়ে উঠছে। ভারত সমস্যা বাড়ার অপেক্ষা করেনি। আমরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেটাই আমাদের জন্য একেবারে সঠিক।
এরপরই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সামাজিক দূরত্ব ও লকডাউনের লাভ পেয়েছে দেশ। যদি শুধু আর্থিক দৃষ্টিতে দেখতে হয়, এর জন্য দেশকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। কিন্তু দেশবাসীর জীবনের কাছে এই ক্ষতি কিছু নয়।সারা বিশ্বে অনেক আলোচনা চলছে, দেশেও চলছে। দেশের রাজ্য সরকারগুলি অত্যন্ত দায়িত্বের সঙ্গে কাজ করেছে। সমস্ত প্রচেষ্টা সত্বেও করোনা যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও সরকারকে আরও সতর্ক করে তুলেছে। আমরা কীভাবে জয়ী হব, কীভাবে ক্ষতি কম হবে, মানুষের সমস্যা কীভাবে কম করা যায় এ সব বিষয়ে রাজ্যগুলির সঙ্গে প্রতিনিয়ত আলোচনা করা হয়েছে। সারা দেশ, নাগরিকদের থেকে একটাই পরামর্শ এসেছে লকডাউন বাড়ানো হোক। বেশ কিছু রাজ্য তো আগে থেকেই লকডাউন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। তাই ৩ মে পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে লকডাউন। অর্থাৎ ৩ মে পর্যন্ত আমাদের সবাইকে, প্রতিটি দেশবাসীকে লকডাউনেই থাকতে হবে। এই সময়ে একইভাবে অনুশাসন মেনে চলতে হবে। করোনাকে এবার যেভাবেই হোক অন্যত্র ছড়াতে দেওয়া যাবে না। স্থানীয়ভাবে যদি একজন রোগীর সংখ্যা বাড়ে তাহলে তা আমাদের জন্য চিন্তার বিষয়। করোনায় কারও যদি মৃত্যু হয়, তাহলে আমাদের চিন্তা আরও বেড়ে যাওয়া উচিত। এজন্য হটস্পটগুলিকে নির্ধারিত করে আগের থেকেও আরও কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যে স্থানগুলি হটস্পটে পরিণত হতে পারে, সেগুলির উপরেও কড়া নজর রাখতে হবে। নতুন হটস্পট হলে আমাদের দায়িত্ব ও পরীক্ষা আরও বেড়ে যাবে। হটস্পটগুলিতে বাইরে বেরনোর উপর কড়া নিয়ন্ত্রণ থাকবে। কাল (বুধবার) এ বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশিকা জারি হবে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কঠোরতা আরও বাড়ানো হবে। ২০ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিটি থানা, প্রতিটি জেলা, প্রতিটি রাজ্যকে পরখ করা হবে। লকডাউন কতটা মানা হচ্ছে, ওই ক্ষেত্র করোনা থেকে নিজেকে কতটা বাঁচিয়েছে, লাগাতার মূল্যায়ন করা হবে। যেই ক্ষেত্র এই অগ্নিপরীক্ষায় সফল হবে, সেখানে ২০ এপ্রিল থেকে কিছু জরুরি গতিবিধি, অনুমতি দেওয়া হতে পারে। মনে রাখবেন করোনার পা যদি ওই এলাকায় পড়ে যায় তাহলে সমস্ত অনুমতি প্রত্যাহার করা হবে। যাঁরা দিন আনে দিন খায়, তাঁদের জন্যই সবচেয়ে বেশি চিন্তা। নতুন গাইডলাইনে সেই বিষয়টি মাথায় রাখা হয়েছে। এই সময় রবিশষ্য কাটার কাজ চলছে। কৃষকদের যতটা সম্ভব ছাড় দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ওষুধ থেকে খাদ্যশষ্য, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত রয়েছে।
২১.৫০ মিনিটের বার্তায় প্রধানমন্ত্রী আবেদন করেছেন, দেশে ৬০০-রও বেশি হাসপাতাল তৈরি রয়েছে কোভিড-১৯ মোকাবিলার জন্য। সেই সংখ্যা আরও বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। ভারতের যুব বিজ্ঞানীদের কাছে আমার আর্জি, আপনারা এগিয়ে আসুন মানবকল্যাণে। করোনার ভ্যাকসিন বানানোর জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ুন। আমরা এটাই চাই। বক্তব্য শেষ করার আগে মোদী বলেছেন, বাড়ির প্রবীণ সদস্যদের বিশেষ খেয়াল রাখুন, বিশেষ করে যাঁদের আগে থেকে সমস্যা রয়েছে। লকডাউন আর সোশ্যাল ডিসট্যান্সের লক্ষ্মণরেখা পুরো মেনে চলুন, মাস্ক পরুন। ইমিউনিটি বাড়ানোর জন্য আয়ুষ মন্ত্রকের নির্দেশিকা মেনে চলুন। করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় আরোগ্য সেতু মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করুন। যতটা সম্ভব গরিব পরিবারের দেখভাল করুন, তাঁদের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করুন। ছোট উদ্যোক্তাদের বলছি, কাউকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করবেন না। যাঁরা সেবার কাজে নিয়োজিত, চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী সবার সম্মান করুন, ওঁদের জন্য গর্ব করুন। এগুলো নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করুন।