অসমে প্রথম, জীবনযুদ্ধে পরাজিত হাইলাকান্দির ষাটোর্ধ্ব করোনা-আক্রান্ত ফয়জুল হক

শিলচর (অসম), ১০ এপ্রিল (হি.স.) : করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অসমে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। ষাটোর্ধ্ব প্ৰয়াত প্রবীণ ব্যক্তিটি সৌদি আরব থেকে উমরাহ হজ পালন করে দিল্লির মরকজ নিজামউদ্দিনে তবলিগ-ই জামাতে যোগদান করেছিলেন। মরকজের জামাতে কারও সংস্পর্শে আসায় তিনি সংক্রমিত হয়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

হাইলাকান্দি জেলার আলগপুর বিধানসভা এলাকার বড়জুরাই গ্রামের বাসিন্দা ফয়জুল হক বড়ভুইয়াঁ (৬৫) বৃহস্পতিবার রাত ১টা ৫৪ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি অসমের ২৮-তম করোনা রোগী ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাত ২.১৬ মিনিটে টুইট করে ফয়জুল হক বড়ভুইয়াঁর মৃত্যুর খবর প্রথম সরকারিভাবে জানান রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। তাঁর চিকিৎসা চলছিল শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

শুক্ৰবার ভোররাতেই তাঁর বাড়িতে দুঃসংবাদটি প্রশাসনের তরফ থেকে জানানো হয়। এদিকে ভোরে হাইলাকান্দি জেলার আলগপুর বিধানসভা এলাকায় প্রয়াতের গৃহগ্রাম বড়জুরাইয়ের পার্শ্ববর্তী গ্রামে জনাকয়েকের উপস্থিতিতে প্রশাসনিক বিধি বলে জানাজা সম্পন্ন করে মৃতদেহ কবরস্থ করা হয়েছে।

প্ৰসঙ্গত গত ১৭ মার্চ তিনি সৌদি আরব থেকে উমরাও হজ পালন করে দিল্লির মরকজ নিজামউদ্দিনে তবলিগ-ই জামাতে যোগদান করেছিলেন। দিল্লি থেকে বাড়ি আসার পর হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন ফয়জুল হক বড়ভুইয়াঁ। পরবর্তীতে তাঁকে নিয়ে ভরতি করা হয় হাইলাকান্দির সন্তোষ কুমার রায় সিভিল হাসপাতালের আইসোলেশনে। চিকিৎসা চলে যথারীতি। কিন্তু তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি হলে দুদিন আগে স্থানান্তর করা হয় শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। গতকাল শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত উপসর্গ দেখা দিলে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় আইসিইউতে। মৃত্যুর আগে তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁকে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে বলে গতকাল সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন মন্ত্রী ড. শর্মা।

এদিকে ফয়জুল হক বড়ভুইয়াঁর পরিবারের পাঁচ সদস্যকে হাইলাকান্দির কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। তাঁর সংস্পর্শে কমপক্ষে ৯২ জন এসেছিলেন। তাঁদের ৩৫ জনকে শনাক্ত করে কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজে তালাশি চলছে। প্রসঙ্গত, সৌদির হজ থেকে দিল্লির মরকজ নিজামউদ্দিনে তবলিগ-ই জামাতে যোগদান করার তথ্য গোপন করেছিলেন তিনি। তাই বিলম্বে সংক্রমণের তথ্য আসায় করোনার সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হাইলাকান্দি জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, প্রথমে উমরাহ হজ, এবং শেষে দিল্লির নিজামউদ্দিন মরকজ থেকে বাড়ি ফেরার পর তিনি যাদের সংস্পর্শে গিয়েছিলেন, এমন ৩৫ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে৷ তাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে৷ পাশাপাশি তাঁর পরিবারের পাঁচ সদস্যকে সরকারি কোয়রান্টাইনে রাখা হয়েছে৷ সকলের লালারস সংগ্রহ করে শিলচর মেডিক্যাল কলেজের পরীক্ষাকেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে৷ রিপোর্টের অপেক্ষায়৷ তাঁর বাড়িকে কেন্দ্র করে চারদিক থেকে এক কিলোমিটার এলাকাকে কোয়ারেন্টাইন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে৷ সংশ্লিষ্ট এলাকায় প্রায় দেড় হাজার মানুষ রয়েছেন। তাদের জরুরি প্রয়োজনে পুলিশ বা কর্তব্যরত সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তাকে জানাবেন৷ হাইলাকান্দি জেলার জনসংযোগ দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, আলগাপুর থানাধীন পুরো বড়জুরাই এলাকাকে স্যানিটাইজ করা হয়েছে৷ ফয়জুলের বাড়ি সংলগ্ন একশো মিটার এলাকায় নিজেদের গাড়ি দিযে সেই কাজ করেছে দমকলবাহিনী৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *