নয়াদিল্লি, ৬ এপ্রিল (হি.স.) : মারণ করোনাভাইরাসে দেশে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা ।ভারতে ৪০০০-এর বেশি মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত। এই পরিস্তিতিতে করোনা মোকাবিলায় তৎপর দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সংস্থাগুলি । সোমবার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের তরফে জানান হয়েছে কোভিড-১৯ এর মোকাবিলায় টেস্ট কিট, মাস্ক, অ্যালকোহল ভিত্তিক স্যানিটাইজার, ব্যক্তিগত সুরক্ষার কাজে ব্যবহার্য সামগ্রী, যে সব স্বাস্থ্যকর্মীরা সরাসরি রোগীদের চিকিৎসা করবেন, তাঁদের জন্য উপযুক্ত পোষাক, রোগীদের জন্য ভেন্টিলেটরের সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মেক ইন ইন্ডিয়া কর্মসূচীর আওতায় দেশ জুড়ে গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থাগুলি নানা কাজ হাতে নিচ্ছে।
ভারতের বিজ্ঞানী ও প্রতিষ্ঠানগুলি কি কি করছে তা তুলে ধরেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দফতরের প্রবীন বিজ্ঞানী জ্যোতি শর্মা এবং ইন্টারন্যাশনাল বাইল্যাটারাল কোঅপরেশন ডিভিশনের প্রধান এস কে ভারসানয়। তিনি জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সারা বিশ্বে বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের তার সম্পদ দিয়ে এই ভাইরাস মোকাবিলায় সম্ভাব্য ওষুধ ও টীকা তৈরি করার কাজে লাগিয়েছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে আগামী ১২-১৮ মাসের মধ্যে কোন প্রতিষেধক পাওয়ার কোন সম্ভাবনাও নেই। পৃথিবীর গবেষকরা ট্যুইটার, ফেসবুক, লিঙ্কেডিনের মত সামাজিক মাধ্যমে স্বেচ্ছাশ্রমের মধ্য দিয়ে তাঁদের পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছেন। স্পষ্টতই এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধটি সবে শুরু হয়েছে।
কেন্দ্রের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দফতর এই মহামারী আটকাতে বিভিন্ন গবেষণাগারগুলির মধ্যে সমন্বয়ের উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। দফতরের অধীনস্থ স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ বোর্ড প্রয়োজন অনুযায়ী অগ্রাধিকারের তালিকা তৈরি করেছে। সস্তায় রোগ নির্ণায়ক কিট ও যন্ত্র তৈরির পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কি কি ওষুধ ব্যবহার করা যায় বোর্ড অনুসন্ধানমূলক সেই কাজ করছে।
শ্বাসকষ্টের সমস্যা থেকে রোগীদের রক্ষা করতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দফতরের অধীনস্থ আরেকটি স্বায়ত্ত্বশাসিত সংস্থা প্রযুক্তি উন্নয়ন পর্ষদ, দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলির থেকে এ সংক্রান্ত কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির জন্য প্রস্তাব আহ্বান করেছে।
ত্রিবান্দমের শ্রী চিত্র তিরুনাল ইন্সটিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি স্বল্প মূল্যের ভেন্টিলেটর ও ডিজিট্যাল এক্স রে তৈরি করেছে। এগুলিকে এখন রোগীদের উপর ব্যবহার করার আগের পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে।
জওহরলাল নেহরু সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড সায়েন্টিফিক রিসার্চ, অ্যাণ্টি মাইক্রোবিয়াল আস্তরণ নিয়ে কাজ করছে। এই আস্তরণ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস,সারস-সিওভি-১৯ ভাইরাস, স্টেফালোকক্কাস আউরেসাস ফ্লুকোনাজোল প্রতিরোধি সি –র মত ফাঙ্গিকে ধ্বংস করতে পারে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দফতরের অধীনস্থ আরেকটি স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা ন্যাশনাল ইনোভেশন ফাউন্ডেশন কোডিড-১৯ এর মোকাবিলায় তৃণমূলস্তরে কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পুষ্টিকর ও রোগ প্রতিরোধী খাবার, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হ্রাসের জন্য মানুষের শরীর, বাড়িঘরকে জীবানুমুক্ত করার ব্যবস্থা করা ও এই সব সামগ্রী বন্টন। এছাড়া করোনা সংক্রমণ থেকে যারা সেরে উঠবেন, তাঁদের জন্য নানা ব্যবস্থাও ফাউন্ডেশন করছে।
কোভিড -১৯ টাস্ক ফোর্স নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য কেন্দ্রের নানা মন্ত্রক, দফতর এবং সংস্থার সঙ্গে একযোগে কাজ করছে। ইতিমধ্যেই এই টাস্ক ফোর্স ৫০০টি ক্ষেত্র চিহ্নিত করেছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দফতর বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠানকে এই উদ্যোগে সামিল করেছে। এর মধ্যে মাইল্যাব ডিসকভারি সলিউশনস নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে একটি টেস্ট কিট তৈরি করেছে। এই টেস্ট কিট মাত্র আড়াই ঘণ্টায় সংক্রমণ নির্ণয় করতে পারে। সেরাম ইন্সটিটিউট ও এপি গ্লোবাল এই উদ্যোগে সামিল হবার পর বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে ২০ লক্ষ নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে।
সরকারী গবেষণাগারগুলিও এই প্রক্রিয়ায় পিছিয়ে নেই। তারা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ দেবার পাশাপাশি এটা নিশ্চিত করছে একই কাজ যেন দুটি গোষ্ঠী না করে। প্রত্যেকে যেন আলাদা আলাদা দিকে কাজ করেন।