BRAKING NEWS

ছেলের চিন ফেরতের তথ্য গোপন, এফআইআর হাইলাকান্দির সরকারি কৰ্মচারীর বিরুদ্ধে

হাইলাকান্দি (অসম), ২৪ মার্চ (হি.স.) : চিন ফেরত ছেলের তথ্য গোপন করার অপরাধে সরকারি কর্মচারী-বাবার বিরুদ্ধে হাইলাকান্দি সদর থানায় এফআইআর করেছে জেলা প্রশাসন। সারা বিশ্বে মহামারি কোভিড-১৯ আক্ৰান্তের সংখ্যা দ্রুতগতিতে বাড়ছে। এই ধারা ভারতেও অব্যাহত। ইতিমধ্যে মণিপুরের ইমফলের জনৈক মেডিক্যাল-গবেষক ২৩ বছর বয়সি যুবতীর শরীরে কোভিড-১৯-এর অবস্থিতি ধরা পড়েছে। এমতাবস্থায় দক্ষিণ অসমের হাইলাকান্দি জেলার জনৈক সরকারি কৰ্মচারী পঞ্চায়েত সচিবের ছেলে গত সোমবার করোনা ভাইরাসের উৎস-দেশ চিন থেকে বাড়ি ফিরেছেন। কিন্তু এই তথ্য ছেলের বাবা বা তাঁর পরিবারের সদস্যরা সরকারের কাছে গোপন রেখে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, করোনা ভাইরাসের সংক্ৰমণ ঠেকাতে সরকার কর্তৃক বেঁধে দেওয়া বাধ্যতামূলক থাৰ্মাল স্ক্ৰিনিংয়ের নিৰ্দেশ মেনে চলা হয়নি।

মূলত, সোমবার চিন থেকে বাড়ি ফিরেছেন জনৈক সরকারি কৰ্মচারীর ছেলে। কিন্তু গোপন সূত্রের ভিত্তিতে জেলা প্ৰশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিকরা ছেলের বাবাকে ঘটনার সত্যতা জানতে চাইলে তিনি ওই খবর ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছিলেন। কেবল তা-ই নয়, তিনি বা তাঁর পরিবারের লোকজন নাকি অনুসন্ধানকারীদের জানিয়েছিলেন, ছেলে এখনও আসেনি, তবে তিনদিন পর আসবে। কিন্তু বাবার বক্তব্যের সত্যতা জানতে মঙ্গলবার স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিক, চিকিৎসক-সহ রেপিড রেসপন্স টিম নিয়ে তাঁদের বাড়িতে সশরীরে গিয়ে হানা দেন হাইলাকান্দির সার্কল অফিসার তথা প্রশাসনিক ম্যাজিস্ট্রেট ত্রিদীপ রায়।

নির্দিষ্ট বাড়িতে গিয়ে বিদেশ ফেরত ছেলেকে হাতেনাতে শনাক্ত করে ম্যাজিস্ট্রেট ত্রিদীপ রায় নেতৃত্বাধীন রেপিড রেসপন্স টিম। সঙ্গে সঙ্গে চিন ফেরত ছেলেকে তুলে পাঠিয়ে দেওয়া হয় শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। জানা গেছে, তার শরীরের প্রয়োজনীয় সেম্পল সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছে পরীক্ষাগারে। পাশাপাশি ছেলের বিদেশ সফর সম্পর্কে তথ্য গোপন করার অভিযোগে সরকারি কর্মচারী-বাবার বিরুদ্ধে অ্যাপিডেমিক ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যাক্ট ১৮৯৭-এর ধারা ১৮৮ এবং ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির উপযুক্ত ধারায় হাইলাকান্দি সদর থানায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এফআইআর করা হয়েছে। ওই বাড়ির সব সদস্যকেও সরকারি নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে হাইলাকান্দি জেলা তথ্য ও জনসংযোগ আধিকারিক সাবির নিশান্ত হিন্দুস্থান সমাচার-কে জানান, ‘প্ৰশাসনের তরফ থেকে বার বার বলা হচ্ছে, বিদেশ ফেরতদের অবশ্যই স্ক্ৰিনিং করাতে হবে। কেউ যদি দেশের অন্য প্রান্ত অথবা বিদেশ থেকে আসেন, তা হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কিংবা তার পরিবারের পক্ষ থেকে নিকটবর্তী থানা বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিষয়টি অবগত করাতে হবে। কিন্তু ছেলের চিন থেকে ফেরতের বিষয়টি এই পরিবার এবং পরিবারের সদস্যরা প্ৰশাসনের কাছে গোপন করেছেন। তাই তথ্য গোপন করার দায়ে সরকারি কৰ্মচারী বাবার বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে। তাঁর চাকরিও যেতে পারে।’

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, সারা বিশ্বে মারণ ভাইরাস কোভিড-১৯ থেকে মানব সমাজকে বাঁচাতে বিদেশ ফেরতদের স্ক্ৰিনিং করা হচ্ছে। এই স্ক্ৰিনিং ব্যবস্থা গোটা বিশ্ববাসী গ্ৰহণ করেছেন। তার মধ্যেই দক্ষিণ অসমের হাইলাকান্দির সরকারি কৰ্মচারীর ছেলে চিন থেকে ফেরতের বিষয়টি প্ৰশাসনের কাছে গোপন রাখার ঘটনায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে রাজ্য জুড়ে। বিষয়টি নিয়ে ভাবনায় পড়েছে অসম সরকারও।

এদিকে জেলাশাসক কীৰ্তি জল্লি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, কোনও ব্যক্তি যদি কোভিড-১৯ সংক্ৰমিত কোনও রাজ্য অথবা দেশ থেকে স্বগৃহে আসেন, তা হলে সংশ্লিষ্টকে স্বেচ্ছায় তাঁর বাড়ির নিকটবর্তী থানা অথবা স্বাস্থ্য কেন্দ্ৰে অবশ্যই জানাতে হবে। না-হলে তাঁর বিরুদ্ধে প্ৰশাসনের পক্ষ থেকে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে প্ৰশাসনকে সহযোগিতা না করলে পরিবারের সব সদস্যকেও একই দোষী দুষ্ট বলে ধরে আইনি ব্যবস্থা নিতে দুবার ভাববে না প্রশাসন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *