গুয়াহাটি, ২২ মার্চ (হি.স.) : আন্তৰ্জাতিক মহামারি নোভেল করোনা ভাইরাসের সংক্ৰমণে গত মাস দুয়েকে সারা বিশ্বে ১৩ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কোভিড-১৯ এর শৃঙ্খল ভাঙতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে রবিবার গোটা দেশে ‘জনতা কাৰ্ফু’ পালিত হয়েছে। সর্বস্তরের মানুষ স্বতঃস্ফূৰ্তভাবে সাড়া দিয়ে এদিন ‘জনতা কাৰ্ফু’ পালন করেছেন। পাশাপাশি আরেকটি ছবিও দেখা গেছে আজ। এদিন জনতা কাৰ্ফু যখন চলছে, তখন দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে, বিশেষ করে দক্ষিণ ভারত ও দিল্লি থেকে উত্তর-পূৰ্বাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ নোভেল করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে ভিড়ভাট্টার মধ্যেই ট্ৰেনে চেপে নিজের বাড়ি এসেছেন।
গোটা দেশে করোনা ভাইরাসে মহারাষ্ট্ৰের পর অন্যতম আক্রান্ত রাজ্য কেরল। কেরলের মতো করোনা সংক্ৰমিত রাজ্য থেকে যাত্ৰীবাহী ট্ৰেন আসার বিষয়টি অসমবাসীর উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। অবশ্য সে রাজ্য থেকে এখন পৰ্যন্ত ট্ৰেন, বিমান, যাত্ৰীবাহী বাস সমেত যত যানবাহন এসেছে সমস্ত যাত্ৰীদের বিশেষ যাচাই করে নেওয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।
ইতিমধ্যেই অসম স্টেট ট্ৰান্সপোৰ্ট কৰ্পোরেশন (এএসটিসি)-এর বেশ কয়েকটি বাস রাজ্যে এসেছে। যাত্ৰীদের স্ক্ৰিনিং করতে প্ৰশাসনের তরফ থেকে প্ৰস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। বাসস্ট্যান্ড চত্বরে বেশ কয়েকজন নিরাপত্তা ও চিকিৎসাকৰ্মীকে নিয়োজিত করা হয়েছে।
রবিবার দুপুরে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া এবং আনন্দবিহার থেকে হাজার হাজার যাত্ৰী নিয়ে দুটি ট্ৰেন এসেছে গুয়াহাটি। এদের মধ্যে অনেকেই ভাইরাস সংক্ৰমণের ভয়ে চাকরি ছেড়ে এসেছেন। জনৈক যাত্ৰী আশঙ্কা প্ৰকাশ করে বলেছেন, ‘এই যে যাত্ৰীবাহী ট্ৰেনগুলি অসমে এল, এতে উত্তর-পূৰ্বাঞ্চলে ভবিষ্যতে দুঃসংবাদ বয়ে আনতে পারে। তার কারণ একেকটি ট্ৰেনে কম পক্ষেও ২০০০ যাত্ৰী এসেছেন। এঁরা অন্যান্য রাজ্যে এতদিন ছিলেন। এতদিনে করোনা ভাইরাস দেশের বিভিন্ন প্ৰান্তে মানুষের শরীরে সংক্ৰমিত হয়েছে। আর এই সব যাত্ৰীরা করোনার ভয়ে আতঙ্কে কোনওরকম নিজের বাড়ি ফিরতে মরিয়া। ট্ৰেনের মধ্যে ভিড়ে ঠাসাঠাসি করে যাত্ৰীরা এসেছেন। একজন অন্যজনের মধ্যে অন্তত পক্ষে এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখার সরকারি যে বিধি বেঁধে দেওয়া হয়েছে তা মানা হয়নি। কাজেই হাইজিন মেনে চলার তো কোনও বিকল্পই নেই। তাছাড়া যাত্ৰীদের মধ্যে পরবৰ্তীকালে ট্ৰেন না পাওয়ার ভয়ও ছিল।’
মরিগাঁওয়ের এক যাত্ৰী হিবজুর রহমান জানান, নোভেল করোনা ভাইরাসের সংক্ৰমণের ভয়ে তাঁকে বিনা বেতনে এক মাসের ছুটিতে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। তিনি এবং তার সঙ্গীরা হোটেল এবং বিল্ডিংয়ে কাজ করতেন। এছাড়া কয়েকটি কোম্পানিকে সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়ায় সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কর্মচারীরা বাধ্য হয়ে চলে এসেছেন।
এদিকে জানা গেছে, বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজন যাত্ৰীকে স্ক্ৰিনিং করতে স্টেশনে রাখা হয়েছে। মেঘালয়ের যাত্ৰীদের সাময়িকভাবে মেঘালয় হাউসে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন জনকে আইএসবিটিতে নিয়ে যাওয়া হবে।
প্ৰসঙ্গত, বেশ কয়েকটি কোভিড ১৯ পজিটিভ কেস ধরা পড়ার বিষয়টি ভারতীয় রেলের তরফে আগেই জানানো হয়েছে। কেন্দ্ৰীয় রেলমন্ত্ৰকের তরফে জানানো হয়েছে, আগামী ৩১ মাৰ্চ পৰ্যন্ত দেশ জুড়ে সমস্ত যাত্ৰীবাহী ট্ৰেন বন্ধ থাকবে।