নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২০ মার্চ৷৷ রাজ্যে ২০২০-২১ অর্থ বছরের জন্য ১৯,৮৯১.৬০ কোটি টাকার বাজেট পেশ করা হয়েছে৷ এবারের বাজেটে ২০১৯-২০ অর্থ বছরের সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দের তুলনায় ১৩.৪৬ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে৷ উপ-মুখ্যমন্ত্রী তথা অর্থমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মা শুক্রবার এই বাজেট পেশ করে বলেন, বাস্তববাদী এবং উন্নয়নের দিশা নির্ণয়ে সহায়ক হবে এই বাজেট৷ তবে, ঘাটতি রয়েছে ৫১১.৪১ কোটি টাকা৷ তাঁর দাবি, কর সংগ্রহ এবং আর্থিক শৃঙ্খলার মাধ্যমে ঘাটতি পূরণ করা হবে৷ তিনি বলেন, এবারের বাজেটে ১৯টি নতুন প্রকল্পের ঘোষণা করা হয়েছে৷ সাথে তিনি দাবি করেন, বাজেটে কোনও নতুন কর আরোপ করা হয়নি৷
অর্থমন্ত্রী বলেন, গত দুই বছর যাবৎ ত্রিপুরা ২৩ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে৷ সে-জন্য বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে৷ তাঁর কথায়, জিএসটি পরিধি প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে৷ কর ফাঁকি দেওয়া বন্ধ করার জন্য ও সঠিকভাবে কর সংগ্রহে ট্যাক্স ইন্টেলিজেন্স ইউনিট গঠন করা হয়েছে৷ সাথে তিনি বলেন, কর জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে কর প্রদানকারীদের সহায়তা ও পরামর্শ দান ও সচেতনতা মূলক কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে৷ তাঁর দাবি, পেট্রোপণ্য ও মদের ওপর সরকার উপযুক্ত হারে ভ্যাট বসিয়েছে এবং রাজ্যে রাস্তা উন্নয়ন সেস ও ত্রিপুরা ইলেকট্রিসিটি ডিউটি চালু করা হয়েছে৷
অর্থমন্ত্রী আজ বলেন, ২০২০-২১ অর্থ বছরের বাজেটে নতুন কোনও কর-এর প্রস্তাব রাখা হয়নি৷ তবে এই অর্থ বছরের কর বাবদ রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি করা হবে মূলত উপযুক্ত কর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে৷ এদিন অর্থমন্ত্রী বিধানসভায় ২০২০-২১ অর্থ বছরে বাজেটে সম্ভাব্য প্রাপ্তি ও ব্যয়ের চিত্র তুলে ধরেন৷ তিনি জানান, বাজেটে রাজ্যের নিজস্ব কর বাবদ রাজস্ব সংগ্রহের পরিমাণ ২,৪৩৯ কোটি টাকা ধরা হয়েছে৷ তা ২০১৯-২০ অর্থ বছরের সংশোধিত বাজেট বরাদ্দের তুলনায় ১১.৬১ শতাংশ বেশি হবে৷
অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০২০-২১ অর্থ বছরের বাজেটে মোট প্রাপ্তির পরিমাণ প্রায় ১৯,৮৩০.১৯ কোটি টাকা ধরা হয়েছে৷ তেমনি ব্যয়ের পরিমাণ ১৯,৮৯১.৬০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে৷ এই ব্যয়ের মধ্যে ১৭,২৫২ কোটি টাকা রাজস্ব সংক্রান্ত ব্যয় এবং ২,৬৩৯.৪৮ কোটি টাকা মূলধনী খাতে ব্যয়ও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে৷ তাঁর দাবি, এই বাজেটের সাথে আমরা এক নতুন অধ্যায়ের সুচনা করতে চলেছি৷ জনজাতি ও তফশিলি জাতির জন্য আলাদা বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়েছে৷ জনগণের কাছ থেকে মতামত সংগ্রহ করেই এই বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে৷
এদিকে, এবার বাজেটে ১৯টি নতুন প্রকল্পের ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী৷ তাছাড়া ১৫টি দফতরের বরাদ্দ গত বাজেটের তুলনায় বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি৷
বাজেটে মহিলাদের বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে৷ এছাড়া বাজেট অধিবেশনের প্রথম দিনে ২০১৯-২০ অর্থ বছরের অতিরিক্ত ব্যয় বরাদ্দের প্রস্তাব পেশ করছেন তিনি৷ পাশাপাশি গত পাঁচ বছরের অতিরিক্ত খরচের হিসাব পেশ করা হয়েছে বিধানসভায়৷
বিধানসভায় করোনা ভাইরাসের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে স্বাস্থ্যকর্মীরা ইনফ্রারেড থামর্োমিটার দিয়ে সকলকে পরীক্ষা করেছেন৷ রাজ্যে সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর ইতিমধ্যে বিজেপি-আইপিএফটি জোট সরকার গত দুটি বাজেট ঘাটতিহীন পেশ করেছে৷ ধারণা করা হচ্ছে, ২০২০-২১ অর্থ বছরের বাজেটও ঘাটতিহীন পেশ করবেন উপমুখ্যমন্ত্রী৷
আজ বিধানসভা অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব-সহ প্রত্যেক সদস্যকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণমুক্ত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে৷ বিধানসভায় প্রবেশের আগে অ্যালকোহল যুক্ত স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ এবার বাজেটে ত্রিপুরা সরকার মহিলাদের অধিক গুরুত্ব দিয়েছে৷ গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টি, সুকলগুলিতে ছাত্রীদের স্যানিটারি ন্যাপকিন বিনামূল্যে প্রদান করার ঘোষণা রয়েছে৷