নিজস্ব প্রতিনিধি, বিশালগড়, ৬ মার্চ৷৷ মানুষ যে পণের জন্য কত নীচে নামতে পারে তার জলজ্যান্ত উদাহরণ ২০১৫ সালেই দেখতে পেয়েছিল বিশালগড়ের চিকনছড়াস্থিত ভাটিলারমার মানুষ৷ কিন্তু শুক্রবার আদালতের একটি রায় শুনতে পেয়ে সকলেই আনন্দিত৷ উল্লেখ্য, চিকনছড়ার বাসিন্দা পার্থ ভৌমিকের সাথে সামাজিক ভাবেই বিয়ে হয়েছিল গীতা নাথ দত্তের৷ বিয়ের সময় গীতা নাথ দত্তের পরিবারের কাছে পার্থর পরিবার ৩৫ হাজার টাকা সহ বিভিন্ন আসবাবপত্র পন চেয়েছিল৷ দাবি মোতাবেক সবই দেওয়া হয়েছিল বিয়েতে৷
তারপরেও পণের জন্যই গৃহবধূ গীতা নাথ ভৌমিককে নিজের জীবন নিজেই দিতে হয়েছে৷ জানা গেছে, বিয়ের প্রায় ৫/৬ মাস পর থেকেই গৃহবধূর বাবার বাড়িতে তার স্বামী পার্থ ভৌমিক একটি বাইক কিনে দেওয়ার জন্য টাকা চেয়েছিল৷ কিন্তু গৃহবধূর উপর নির্যাতন কমেনি৷ স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ী সহ সবাই এই গৃহবধূর উপর শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন করতে থাকে৷ অনেকদিন ধরে গৃহবধূ নির্যাতন সহ্য করে আসছিল৷ কিন্তু শেষে নির্যাতনের মাত্রা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে একসময় গৃহবধূর মাথায় আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোন উপায় আসেনি৷ শেষে গৃহবধূ নিজেই ফাঁসিতে আত্মহত্যা করেছিল৷ ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১৫ সালের চার ফেব্রুয়ারিতে৷ তারপরই গৃহবধূর বাবা বিশালগড় মহিলা থানায় অভিযুক্ত স্বামী পার্থ ভৌমিক, শাশুরী কানন ভৌমিক ও শ্বশুর নিতাই ভৌমিকের বিরুদ্ধে লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করেন৷
তারপর বিশালগড় মহিলা থানার পুলিশ তিন অভিযুক্তকেই গ্রেফতার করেছিল৷ মামলার তদন্তকারী অফিসার ছিল বিশালগড় মহিলা থানার পুলিশ ৷ তিন অভিযুক্তকেই গ্রেফতার করেছিল৷ মামলার তদন্তকারী অফিসার ছিল বিশালগড় মহিলা থানার সাব -ইনস্পেক্টর শিপ্রা দাস৷ তাদেরকে গ্রেফতার করার পর কোন অদৃশ্য কারণে শাশুড়ী কানন ভৌমিক ও শ্বশুর নিতাই ভৌমিক বেকসুর খালাস পেয়ে যায়৷ তারপর আদালতের কাছে অভিযুক্ত স্বামী পার্থ ভৌমিকের আইনজীবী জামিনের আবেদন করলে বিচারক তার জামিন মঞ্জুর করে দেয়৷ কিন্তু শুক্রবার অভিযুক্ত স্বামী পার্থ ভৌমিকের আদালতে হাজির হওয়ার কথা ছিল৷ সে মোতাবেক পার্থ আদালতে হাজির হয়৷
এদিনই বিশালগড় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ্-এর বিচারক অংশুমান দেববর্মা অভিযুক্ত স্বামীর সাজা ঘোষণা করে৷ ঘটনার পাঁচ বছরের মাথায় আদালতের অভিযুক্ত স্বামীর এই রায়ের খবরে খুশি সকলেই৷ আদালত অভিযুক্তকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮-এধারায় তিন বছরের কারাবাস ও ৫০০০ টাকা জরিমানা করে৷ অনাদায়ে তিন মাসের অতিরিক্ত কারাবাসের নির্দেশ দেয় এবং ভারতীয় দন্ডবিধির ৩০৬ ধারায় ১০ বছরের কারাবাস ও ৫০০০ টাকা জরিমানা করে৷ অনাদায়ে আরও তিনমাসের কারাবাসের নির্দেশ দেয়৷ এই কথা জানিয়েছেন সরকারী আইনজীবী জ্যোতি প্রকাশ সাহা৷ পাঁচ বছরের মাথায় এ রায়ে খুশী গৃহবধূর বাবার বাড়ির লোকজনরাও৷