BRAKING NEWS

কিডনি রোগ : জানুন ও সুস্থ্য থাকুন

ডাঃ অনুপম মজুমদার
কনস্যালট্যান্ট নেফ্রোলোজিস্ট এন্ড রেনাল ট্রান্সপ্ল্যান্ট ফিজিসিয়ান
(Consultant Nephrologist & Renal Transplant Physician)
AMRI (Mukundapur), Kolkata.

কিডনির প্রয়োজনীয়তা কি
আমাদের শরীরের খুবই প্রয়োজনীয় অঙ্গ কিডনি। কিডনি আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ ঠিক রাখার সাথে সাথে শরীরের সমস্ত বর্জ্য পদার্থ মূত্রের মাধ্যমে দেহ থেকে বার করে দেয়। এছাড়া অম্ল–ক্ষারক ভারসাম্য রক্ষা করা
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা, হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করা এবং
হাড় মজবুত রাখার মত আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে কিডনি।

কাদের কিডনি রোগ হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে
কিছু রোগ আছে যেগুলো সরাসরি কিডনির ক্ষতি করে। আবার এমন কিছু রোগ আছে যেগুলিকে স্টিস্টেমিক রোগ বলে, সেগুলো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে দেহের অন্যান্য অঙ্গের সাথে সাথে কিডনিরও ক্ষতি করে।
১. যদি বংশে কিডনি রোগী থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে পরিবারের অন্য কারও সেই রোগ হতে পারে।
২.তাছাড়া যাদের খুব ঘন ঘন সর্দি, কাশি, জ্বর হয় ও বারে বারে ত্বকের সংক্রমণ হয় তাদেরও হতে পারে।
৩.যাদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে না
৪. যাদের রক্তে সুগারের (ডায়াবেটিস) পরিমান নিয়ন্ত্রণে থাকে না
৫. যাদের মূত্রে সংক্রমণ থাকে
৬.যাদের কিডনিতে বার বার পাথর হয়
৭.যাদের জন্মগত কোনো ত্রুটি থাকে তাদের ক্ষেত্রে কিডনির রোগ হতে পারে।

ডাঃ অনুপম মজুমদার

বিশ্বে/এদেশে কিডনি রোগে আক্রান্তের সংখ্যা কত
মানুষের গড় আয়ু বাড়ার সাথে সাথে কিডনি রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। গোটা বিশ্বে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ কোটি কিডনি রোগে আক্রান্ত এবং ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১২ থেকে ১৫ কোটি। ভারতে বেশী হওয়ার মূল কারণ হল অন্যান্য দেশের তুলনায় এখানে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা সব থেকে বেশী। তাই অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতে কিডনি রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশী।

ক্রমশ এ রোগে আক্রান্ত হবার সংখ্যা বাড়ার কারণ কি
মানুষের বেড়ে যাওয়া রোজকার ব্যস্ততা
নিয়মিত জাঙ্ক ফুড খাওয়া,
পরিবেশ দূষণ,
জীবনশৈলীর পরিবর্তন,
ক্রমাগত বেড়ে যাওয়া ডায়াবেটিস/ উচ্চ রক্তচাপ
এবং নিয়মিত চেক আপ না করানো।
পর্যাপ্ত পরিমানে জল না খাওয়া
সকালের ও রাত্রিবেলার খাবার ঠিকমত না খাওয়া/ বেশী খাবার খাওয়া।

কিডনি রোগের প্রাথমিক লক্ষণ কি কি
প্রাথমিক অবস্থায় অনেক সময় এই রোগে কোন লক্ষণ দেখা যায় না। তবে কিছু কিছু লক্ষণ হল
চোখের পাতা ফুলে যাওয়া সকালে দিকে
পা ফুলে যাওয়া
হঠাৎ করে উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়া
অ্যানিমিয়া হওয়া
ক্ষিদে কম হওয়া
সামান্য পরিশ্রম করলে কষ্ট হওয়া
প্রস্রাব কম হওয়া বা পরিমানে কম হওয়া
গায়ের রং পরিবর্তন হওয়া
সারা শরীরে চুলকানি হওয়া
মাঝে মাঝে হাড়ে ব্যথা হওয়া

কি ভাবে এটা নির্ণয় করা হয়
নিয়মিত উচ্চ রক্তচাপ, ব্লাড সুগার চেক আপ করতে হবে
হেলথ চেক আপ করতে হবে
রক্তে ইউরিয়া, ক্রিয়োটোনিন, হিমোগ্লোবিন, ক্যালসিয়াম, ইউরিক অ্যাসিড এর পরিমান ঠিক আছে কিনা দেখতে হবে
আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করে দেখতে হবে কিডনির আকার ও আকৃতি ঠিক আছে কি না।

কি কি সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন
উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে শর্করা (ডায়াবেটিস) নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
যারা উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাঁদের নিয়মতি নেফ্রোলোজিস্টকে দেখাতে হবে।
চিকিৎসকের পরামর্শমত নিয়মিত ব্যায়াম ও পরিমান মত জল খেতে হবে
শাকসবজি বেশী করে খাওয়া
খাদ্য তালিকায় রোজ রোজ মাছ, মাংস না রাখা
লবণ কম খাওয়া
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
মাদক দ্রব্য, অ্যালকোহল না খাওয়া
স্ট্রেস যতটা পারা যায় এড়িয়ে চলা। এক্ষেত্রে যোগ সাধনা করলে লাভ হতে পারে।
বংশে যদি কেউ কিডনি রোগ মারা যায় বা থাকে তাহলে পরিবারের সবাইকে নেফ্রোলোজিস্টকে দেখাতে হবে।
মূত্রনালীতে কোন রকম সংক্রমণ হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তার চিকিৎসা করা।
বয়স্কদের প্রোস্টেট বেড়ে গেলে অনেক সময় urine flow ভাল না হয়ে urine Bainflow হলে কিডনি খারাপ হতে পারে। অবহেলা না করে নেফ্রোলোজিস্ট এর পরামর্শ নিতে হবে।
চিকিৎসা
একবার কিডনি খারাপ হয়ে গেলে আর পূর্বের অবস্থায় নিয়ে যাওয়া যায় না। খারাপ হওয়ার আগে, খারাপ হতে না দেওয়াটাই হল চিকিৎসা। তাই সতর্কতা তালিকায় যা যা বলা হয়েছে সেটাই মেনে চলতে হবে। একবার খারাপ হয়ে গেলে Dialysis, Transplant ছাড়া উপায় নেই।

আধুনিক জীবনশৈলীর পরিবর্তন কি কিডনি সমস্যা বাড়ার কারণ
ব্যস্তময় ইঁদুর দৌড় জীবনযাপন, মানসিক চাপ, উত্তেজনা, ফাস্ট ফুড খাওয়া, শাকসবজিতে কীটনাশক, পরিবেশ দূষণ- নিঃসন্দেহে আধুনিক এই জীবনশৈলী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কিডনি খারাপ হওয়ার জন্য অনেকাংশে দায়ী।

একটা কিডনি নষ্ট হলে কি স্বাভাবিক জীবনে কোন প্রভাব পড়তে পারে
একটা কিডনি নষ্ট হয়ে গেলেও মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। তবে সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে।
কিডনি খারাপ হওয়া শুরু হলে পাঁচটা stage দিয়ে যায়। সেটা GFRদেখে Staging করতে হয়। Stages টা হল ESRD, সেই সময় Dialysis এর দরকার হয়। তখনই dialysis নেবার আগে বা শুরু হবার পর Kidney Tx করতে হয়।

খাওয়া দাওয়া কি রকম হওয়া উচিৎ
স্বাস্থ্যসম্মত খাবার
ফাস্ট ফুড না খাওয়া
লবণ কম পরিমানে খাওয়া
ফ্যাট কম পরিমানে খাওয়া
উচ্চ রক্তচাপ/ সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
নেশা জাতীয় জিনিস একদম এড়িয়ে চলা

জল কম খেলে কিডনির সমস্যা / আবার বেশি খলে ও সমস্যা- এবিষয়ে আপনার মতামত
দরকার অনুযায়ী জল পান করা দরকার। গরমকালে বেশী আর ঠান্ডার সময় একটু কম। তবে ২.৫ থেকে ৩ লিটার জল সবার জন্য নূন্যতম পরিমান।
প্রস্রাবের ইনফেকশন বা স্ট্রোন হলে জল বেশী পরিমানে খেতে হতে পারে, আর কিডনি বিকল হলে কম জল খেতে হয়।

কোমরে ব্যথা কি কিডনি রোগের প্রাথমিক লক্ষণ
কিছু কিছু কিডনির সমস্যায় কোমরে ব্যথা হতে পারে। যেমন পাথর হলে, পলিসিস্টটিক রোগ হলে বা কিডনি রোগ থেকে ক্যালসিয়াম কমে গেলে। তবে কোমরে ব্যথা মানে কিডনির সমস্যা তা নয়।
ঘন ঘন ব্যথার ওষুধ খায় তাদের কি কিডনির সমস্যা বেশি হয়
অধিকাংশ ওষুধ কিডনি দিয়ে বের হয়। এই প্রক্রিয়াতে কিছু ওষুধ বা ওষুধ থেকে রূপান্তরিত পদার্থ থেকে কিডনি খারাপ হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া পেন কিলার না খাওয়াই উচিত।
বিশেষজ্ঞ হিসাবে পরামর্শ
নিয়মিত উচ্চ রক্তচাপ / রক্তে শর্করা চেক আপ করা। এবং চিকিৎসকের পরামর্শমত চলা
পর্যাপ্ত পরিমানে জল খাওয়া
নুন কম খাওয়া
ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলা
মাদক দ্রব্য না খাওয়া
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
সকাল বিকালের খাবার সঠিক সময়ে খাওয়া
যতটা সম্ভব মানসিক চাপ, উত্তেজনাকে এড়িয়ে চলা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *