নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৬ ফেব্রুয়ারী৷৷ ত্রিপুরায় ছড়াতে পারে করোনা ভাইরাস৷ সেই আশঙ্কায় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর ত্রিপুরার আট জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং আগরতলার জিবি হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপারকে সতর্ক করেছে৷ স্বাস্থ্যসচিব ডা. দেবাশিস বসু সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়ে সতর্কতা অবলম্বনের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন৷
স্বাস্থ্যসচিবের চিঠিতে বলা হয়েছে, চিনের বুহান শহরে নভেল করোনা ভাইরাস প্রথম চিহ্ণিত হয়েছে৷ ভারতের কেরালায় তিনজন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী পাওয়া গিয়েছে৷ এছাড়াও বেশ কয়েকজন সন্দেহজনক ব্যক্তিকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে৷ তাই, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক একাধিক নির্দেশিকা জারি করে সব রাজ্যকে সতর্ক করেছে৷ তাঁর কথায়, ওই ভাইরাস ত্রিপুরায় ছড়িয়ে পড়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছেঊ তাই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে হবে৷
তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের সতর্কতা এবং প্রতিরোধবার্তা সারা ত্রিপুরায় সমস্ত স্বাস্থ্য আধিকারিকদের অবগত করা হয়েছে৷ সে মোতাবেক সারা রাজ্যকে কঠোর নজরদারিতে রাখতে হবে৷ তাঁর আবেদন, জেলাস্তরে প্রয়োজনীয় সমস্ত প্রস্তুতি চূড়ান্ত করতে হবে৷ আগরতলা বিমানবন্দর, রেল স্টেশন, আন্তঃরাজ্য এবং আন্তর্জাতিক সীমান্তে নজরদারির ব্যবস্থা রাখতে হবেঊ এর দ্বারা ওইসব স্থান দিয়ে আসা-যাওয়া করছেন মানুষের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করতে হবে৷ পাশাপাশি, জিবি হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ড ব্যবহারের উপযোগী রাখার জন্য স্বাস্থ্যসচিব মেডিক্যাল সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন৷
করোনা ভাইরাস থেকে উদ্ভূত যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় ত্রিপুরার স্বাস্থ্য দফতর কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে৷ প্রতিদিন অন্তত ১০০০ জনের স্ক্রিনিং করা হচ্ছে৷ সাথে, বিমানবন্দর এবং ইন্টিগ্রেটেড চেক পোস্টেও কঠোর নজরদারি চালানো হচ্ছে৷ সম্প্রতি, চিন থেকে চারজন পর্যটক এসেছেন৷ এছাড়া, থাইল্যান্ড থেকে এক দম্পতি এবং দুই ছাত্র চিন থেকে এসেছেন৷ তাঁদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কিনা প্রাথমিক পরীক্ষায় অবগত হয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মীরা৷
এ-বিষয়ে ত্রিপুরা সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ দফতরের অধিকর্তা ডা. রাধা দেববর্মা বলেন, প্রতিনিয়ত ত্রিপুরার বাইরে থেকে পর্যটক-সহ বিভিন্ন ধরনের মানুষ রাজ্যে আসছেনঊ তাঁদের মধ্যে অনেকে ত্রিপুরার বাসিন্দা, তাঁরা ভ্রমণ কিংবা জরুরি প্রয়োজনে রাজ্যের বাইরে গিয়েছিলেন, তাঁরা ফিরছেন৷ এছাড়া, বাংলাদেশ থেকে অনেক পর্যটক এবং ব্যবসায়ী প্রতিদিন ত্রিপুরায় আসছেন৷ তাঁদের প্রত্যেকের ওপর কঠোর নজরদারি চালানো হচ্ছে, দাবি করেন তিনি৷ তাঁর কথায়, ওয়ার্ল হেলথ অর্গানইজেশনের নির্দেশিকা অনুযায়ী বিমানবন্দরে সকল যাত্রীদের স্ক্রিনিং করার প্রয়োজনিয়তা নেই৷ কারণ, বিদেশ থেকে বিমানে যাঁরাই ত্রিপুরায় আসছেন তাঁদের অন্য জায়গায় ইমিগ্রেশন স্ক্রিনিং করছে৷ ফলে, আগরতলা বিমানবন্দরে প্রত্যেক যাত্রীর স্ক্রিনিং করার বিশেষ প্রয়োজনীয়তা নেই৷ তবুও, সকলকে সতর্ক রাখার জন্য বিমানবন্দরে হেলথ ডেস্ক বসানো হয়েছে৷ বিদেশ থেকে আগত পর্যটক কিংবা ত্রিপুরার বাসিন্দা ওই ডেস্কে যোগাযোগ করছেন, দাবি করেন তিনি৷
ডা. দেববর্মা জানিয়েছেন, গত সোমবার চিন থেকে চার পর্যটক ত্রিপুরায় এসেছেন৷ তাঁদের মধ্যে একজন পুরুষ, বাকি তিনজন মহিলা৷ তবে, তাঁরা ডিসেম্বরে চিন থেকে বেরিয়েছিলেন এবং ভারতে প্রবেশের পর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনে তাঁদের স্ক্রিনিং করা হয়েছে৷ তাঁর কথায়, ওই চার চিনা পর্যটকের করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই৷ তবুও তাঁদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে৷ কোনও শারীরিক সমস্যা অনুভব হলে হেলথ ডেস্কে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হয়েছে৷ ডা. দেববর্মা আরও জানিয়েছেন, সম্প্রতি থাইল্যান্ড থেকে এক দম্পতি ত্রিপুরায় এসেছেন৷ তাঁরা বিলোনিয়ার বাসিন্দা৷ কিন্ত, বহুদিন ধরে তাঁরা থাইল্যান্ডে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন৷ তাঁদের মধ্যেও করোনা ভাইরাসের কোনও লক্ষণ আপাতত পাওয়া যায়নি৷ তবে সতর্ক থাকার জন্য তাঁদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷
এছাড়া, চিন থেকে দুই ছাত্র ত্রিপুরায় ফিরেছেন বলে জানিয়েছেন ডা. দেববর্মা৷ তাঁর কথায়, এক জনের সাথে স্বাস্থ্য কর্মীরা যোগাযোগ করেছেন এবং তাঁকে সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছেন৷ কিন্ত অপর ছাত্রের সাথে এখনো যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি৷ তবে, স্বাস্থ্য তাঁর সাথেও যোগাযোগ করে প্রাথমিক পরীক্ষা এবং সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেবেন বলে তিনি জানিয়েছেন৷
ডা. দেববর্মা আজ অভয় দিয়ে বলেন, করোনা ভাইরাসের যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় ত্রিপুরা সবরকম প্রস্তুতি নিয়েছে৷ তবে সকলের শুধু সতর্কতা অবলম্বন করে চলতে হবেঊ তিনি জানান, ত্রিপুরায় প্রতিদিন গড়ে ১০০০ জনের স্ক্রিনিং করা হচ্ছে৷ মূলত, ইন্টিগ্রেটেড চেক পোস্ট দিয়ে যাঁরা আসছেন তাঁদের স্ক্রিনিং সবচেয়ে বেশি হচ্ছে৷ তাঁর দাবি, বিমান সংস্থাগুলিকে অনুরোধ করা হবে, বিমান অবতরণের পর লাগেজ নেওয়ার জন্য ঘোষণার সাথে যাত্রীদের হেলথ ডেস্কে যোগাযোগ করার পরামর্শ যেন দেওয়া হয়৷
এদিকে, পরিস্থিতি পর্যালোচনায় আগামীকাল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক ভিডিও কনফারেন্সিং-এ ত্রিপুরার স্বাস্থ্য দফতরের কাছ থেকে সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করবে৷ সেক্ষেত্রে, বিশেষ কোনও সহায়তার প্রয়োজন হলে সে-বিষয়ে কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে৷