হাফলং (অসম), ৫ ফেব্রুয়ারি (হি.স.) : অধিকৃত ভূমির ক্ষতিপূরণের দাবিতে এনসি হিলস ইন্ডিজেনাস স্টুডেন্টস ফোরাম আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে লামডিং-শিলচর ব্রডগেজ রেল অচল করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল। পাহাড়ে রেল অবরোধ ঠেকাতে বুধবার বেলা ১-টায় ডিমা হাসাওয়ের জেলাশাসক অমিতাভ রাজখোয়া তাঁর কার্যালয়ের সভাকক্ষে ক্ষতিপূরণের ইস্যু নিয়ে আলোচনার জন্য উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেল কর্তৃপক্ষ এবং আন্দোলনকারী এনসি হিলস ইন্ডিজেনাস স্টুডেন্টস ফোরাম, ইন্ডিজেনাস পিপলস ফোরাম ও ইন্ডিজেনাস উইমেন ফোরামের প্রতিনিধিদের নিয়ে এক বৈঠক ডেকেছিলেন। কিন্তু বৈঠকটি সম্পূর্ণ নিষ্ফলা বলে জানা গেছে। নিষ্ফলা বৈঠকের জন্য উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেল কর্তৃপক্ষকে কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে।
জেলাশাসক আহূত আজকের বৈঠকে গুয়াহাটির মালিগাঁওয়ে অবস্থিত উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য কার্যালয় এবং উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের লামডিং ডিভিশনের কোনও উচ্চপদস্থ আধিকারিক উপস্থিত হননি। তাদের বদলে হাফলঙে অবস্থিত রেলের এডিএন মহীপাল ওই বৈঠকে উপস্থিত হয়েছেন। রেলের এমন উদাসীনতায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন জেলাশাসক অমিতাভ রাজখোয়া ও পুলিশ সুপার বীরবিক্রম গগৈ। বৈঠকে রেলের পক্ষ থেকে এমন একজন অফিসারকে পাঠানো হয়েছে যিনি কি না ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দেওয়া নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে অপারগ। উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের এ ধরনের উদাসীনতার পরিপ্রেক্ষিতে জেলাশাসক আহূত বৈঠক উত্তপ্ত হয়ে উঠে।
বৈঠক সম্পূর্ণ ভেস্তে গেছে। রেল অবরোধ প্রত্যাহার নিয়েও কোনও সিদ্ধান্তই হয়নি। বৈঠকে ইন্ডিজেনাস স্টুডেন্টস ফোরামের সভাপতি ডেভিড কেভম সোজাসুজি জানিয়ে দেন, ১৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রেল কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্থ গ্রামবাসীদের ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে না দিলে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ হবেই। কিন্তু বৈঠকে উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের এডিএন মহীপাল ১৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে কোনও প্রতিশ্রুতি দিতে পারেননি। ক্ষুব্ধ জেলাশাসক অমিতাভ রাজখোয়া বলেন, আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে যদি রেল কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্থ গ্রামবাসীদের ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দিতে পদক্ষেপ না নেয় পরবর্তীতে ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে পাহাড়ে প্রস্তাবিত রেল অবরোধের ফলে যদি কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তার জন্য উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেল কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণভাবে দায়ী থাকবে।
এমন-কি বৈঠকে পুলিশ সুপার বীরবিক্রম গগৈও একই কথা শুনিয়েছেন উপস্থিত উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের এডিএন মহীপালকে। বুধবারের বৈঠক থেকেই প্রমাণিত, ক্ষতিপূরণের ইস্যু নিয়ে সমস্যা সমাধান করা নিয়ে উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে।
এদিকে বৈঠক শেষে ইন্ডিজেনাস স্টুডেন্টস ফোরামের সভাপতি ডেভিড কেভম বলেন, এখন পর্যন্ত রেলের সঙ্গে প্রায় ২২ বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও বৈঠকই ফলপ্রসূ হয়নি। এমন-কি অসমের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ক্ষতিপূরণ ইস্যু নিয়ে উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের দুবার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর পরও রেল কর্তৃপক্ষ মুখ্যমন্ত্রীর কথায় আমল দেয়নি। রেল ইচ্ছা করেই এই ক্ষতিপূরণের ইস্যুকে জিইয়ে রাখতে চাইছে বলে অভিযোগ করে ডেভিড কেভম বলেন, লামডিং-শিলচর ব্রডগেজ নির্মাণ কাজ করতে গিয়ে নিউহাফলং থেকে নিউহারাঙ্গাজাও পর্যন্ত যে সব গ্রামের বাসিন্দাদের ক্ষেতের জমি, বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এ সব গ্রামবাসীর ক্ষতিপূরণ বাবদ ৪ কোটি ৫৮ লক্ষ টাকা আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেল কর্তৃপক্ষ মিটিয়ে না দিলে কোনও অবস্থায় রেল অবরোধ প্রত্যাহার করা হবে না। ১৭ ফেব্রুয়ারি সকাল ৫ টা থেকে পাহাড়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য রেল পরিষেবা সম্পূর্ণ ভাবে অচল করে দেওয়া হবে, আজও স্পষ্ট করে দেন ইন্ডিজেনাস স্টুডেন্টস ফোরামের সভাপতি ডেভিড কেভম।