BRAKING NEWS

দক্ষিণ শালমারার ভারত-বাংলা সীমান্তে আক্রান্ত বিএসএফ, গুলিবিদ্ধ গরু পাচারকারী হত, আহত দুই জওয়ান

দক্ষিণ শালমারা (অসম), ১২ ডিসেম্বর (হি.স.) : ফের বিএসএফ-এর গুলিতে মৃত্যু হয়েছে এক গরু পাচারকারীর। গত ১০ জানুয়ারির পর আজ রবিবার ভোররাতে নিম্ন অসমের দক্ষিণ শালমারা-মানকাচর জেলার অন্তর্গত ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী সৈতনবাড়ি বিএসএফ ক্যাম্প এলাকার ফুলকাকাটায় এই ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। টহলদারী সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে গরু পাচারকারীর সংঘৰ্ষ হলে গুলি চালাতে বাধ্য হয় বিএসএফ। বিএসএফ-এর গুলিতে বিদ্ধ হয়ে গরু পাচারকারী শমেজ আলির মৃত্যু হয়। পাশাপাশি পাচারকারীদের সশস্ত্র হামলায় দুই জওয়ান আহত হয়েছেন। তাদের ধুবড়ি সিভিল হাসপাতালে নিয়ে ভরতি করা হয়েছে। এর মধ্যে এক জওয়ান সুনীল কুমারের শারীরিক অবস্থ আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ, দক্ষিণ শালমারা-মানকাচর জেলার অন্তর্গত দক্ষিণ শালমারা থানা এলাকার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবৰ্তী ফুলকাকাটা প্ৰথমখণ্ড গ্রামের বাসিন্দা জনৈক সকের আলির ছেলে শমেজ আলি অন্য সঙ্গীদের নিয়ে আজ ভোররাতের দিকে বাংলাদেশ সীমান্তে গরু পাচার করতে যায়। ভোররাত তখন প্ৰায় ৩.৪০ মিনিট। তারা ফুলকাকাটা সীমান্ত পার করে বাংলাদেশে কয়েকটি গরু পাচার শুরু করে। তখন সীমান্তে টহলধারী বিএসএফ জওয়ানরা ছুটে গিয়ে পাচারকারী শমেজের হেফাজত থেকে চারটি গরু আটক করেন। তা দেখে গরু পাচারকারীরা সম্মিলিতভাবে হাতে হাতে দা-ড্যাগার, খুরপি, ভোজালি ইত্যাদি ধারালো অস্ত্র নিয়ে বিএসএফ-এর ওপর হামলা চালাতে তেড়ে আসে।

গরু পাচারকারীদের হামলার মোকাবিলা করতে সৈতনবাড়ি বিএসএফ ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী ওসি ওমবীর প্ৰকাশ শূন্যে গুলি চালনা করেন। এর পরও গরু পাচারকারীরা সীমান্ত ছেড়ে না গিয়ে উল্টো ওমবীর প্রকাশের মাথায় এবং জওয়ান সুনীল কুমারের শরীরে ধারালো অস্ত্ৰ দিয়ে উপর্যুপরি ঘা বসিয়ে দেয়। এতে দুজনেই ঘায়েল হন। এই সুযোগে গরু পাচারকারীরা সুনীল কুমারের হাত থেকে একে ৪৭ রাইফেল কেড়ে নিয়ে গেলে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত ওমবীর প্ৰকাশ কয়েক রাউন্ড গুলি বৰ্ষণ করেন। এতে শমেজ আলি নামের গরু পাচারকারী ধরাশায়ী হয়ে যায়। এরই মধ্যে বিএসএফকে আক্ৰমণকারী কতিপয় পাচারকারী শমেজ আলির লাশ কাঁধে তুলে সুনীল কুমারের হাত থেকে ছিনতাই করা রাইফেল নিয়ে ঘটনাস্থল ছেড়ে পালিয়ে যায়।

এদিকে গুলির শব্দ শুনে ঘটনাস্থলের পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে শ শ মানুষ ঘন কুয়াশার মধ্যে রাতের অন্ধকারে ছুটে আসেন। ইত্যবসরে গুলিবিদ্ধ হয়ে শমেজ আলি মারা গেছে দেখে সবাই দৌড়ে পালিয়ে নিজের নিজের ঘরে নিরাপদ আশ্রয় নেয়। আন্তর্জাতিক সীমান্তে সংঘটিত এই ঘটনায় এলাকায় উত্তজনার সৃষ্টি হয়।

খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্ৰণের জন্য দক্ষিণ শালমারা-মানকাচরের পুলিশ সুপার কঙ্কনজ্যোতি শইকিয়া, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফ আহমেদ, দক্ষিণ শালমারা থানার এএসআই আবু শামা-সহ পুলিশের এক বিশাল বাহিনী সীমান্তে গিয়ে হাজির হন। সকাল প্ৰায় ৭-টা নাগাদ পৌঁছে তাঁরা ফুলকাকাটা গ্রামে শমেজের মৃতদেহ এবং বিএসএফ-এর রাইফেলের সন্ধানে তালাশি অভিযান শুরু করেন।

অবশেষে গ্রামের এক জঙ্গল থেকে বিএসএফ-এর জওয়ানরা তাদের রাইফলটি উদ্ধার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। এর সঙ্গে গোটা গ্রাম জুড়ে চলে শমেজ আলির মৃতদেহের তালাশি। শেষ পর্যন্ত এক তথ্যের ভিত্তিতে গ্রামের একটি ছোট্ট ছড়ার ওপারে অবস্থিত গ্রামের জনৈক গৃহস্থের ঘর থেকে বেলা প্রায় ২-টায় শমেজের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশের দল। এর পর লাশটির ময়না তদন্তের জন্য ধুবড়ি সিভিল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয় পুলিশ।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, গত ৩ জানুয়ারি রাত প্ৰায় ১১-টায় ফুলকাকাটা গ্রাম থেকে প্ৰায় দেড় কিলোমিটার দূরে মহামায়ার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে পুলিশের সঙ্গে গরু পাচারকারীদের সংঘৰ্ষ সংঘটিত হয়েছিল। এতে দক্ষিণ শালমারা পুলিশের গুলিতে নুরজামাল শেখ নামের এক গরু পাচারকারীর মৃত্যু ও অন্য তিন গরু পাচারকারী আহত হয়েছিল। একইভাবে জেলার দক্ষিণ শালমারা থানা এলাকার খারুয়াবান্ধা পুলিশ ফাঁড়ির অধীনস্থ আসামের আলগার আন্তর্জাতিক সীমান্তে গত ১০ জানুয়ারি বিএসএফ-এর গুলিতে দয়ারচর গ্রামের জনৈক শুকুর আলি নামের গরু পাচারকারীর মৃত্যু হয়েছিল। গত এক মাসের মধ্যে জেলার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বিভিন্ন স্থানে ছয় গরু পাচারকারীর মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *