গুয়াহাটি, ৪ জানুয়ারি (হি.স.) : নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন (সিএএ)-এর বলে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি বা এনআরসি-ছুট মাত্র ৩.৫ থেকে ৪.৫ লক্ষ হিন্দু ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবেন। বলেছেন নর্থ-ইস্ট ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (নেডা)-এর আহ্বায়ক তথা অসমের বহু দফতরের মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা।
শনিবার গুয়াহাটির খানাপাড়া পশু চিকিৎসা বিজ্ঞান মহাবিদ্যালয়ের ময়দানে দলের ন্যূনতম ৮০ হাজার বুথ সভাপতি, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি-সহ অন্যান্য কার্যকর্তা ও সমর্থকের সমাবেশে উদাত্ত ভাষণ দিয়ে বিজেপি-র কার্যকৰ্তাদের মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন মন্ত্ৰী হিমন্তবিশ্ব। অন্যদিনের মতো আজও তিনি বলেন, সিএএ সম্পর্কে ভুয়ো প্রচার করে রাজ্যের মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন আন্দোলনকারীরা। জয় আই অসম এবং ভারত মাতা-কি জয় ধ্বনি দিয়ে প্রদত্ত ভাষণে মন্ত্ৰী ড. শর্মা বলেন, অসমের মাটি-বায়ু-জল থেকে কোনও শক্তি নেই ভারতীয় জনতা পাৰ্টিকে উৎখাত করবে। তা যতই মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হোক। রাজ্যের মানুষ দেখছেন, বিজেপি জোট সরকারের আমলে কতটা পরিবর্তন এসেছে। সিএএ বা এনআরসি-ছুট মাত্র ৩.৫০ থেকে ৪.৫০ লক্ষ হিন্দু ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবেন। তবু বলছি, ৫ লক্ষের বেশি যদি একজনে নাম ঢুকে পড়ে তা হলে আমি রাজনীতিই ছেড়ে দেব, দৃঢ়তার সঙ্গে অঙ্গীকার করেছেন বক্তা।
স্পষ্ট করে তিনি এ-ও বলেন, যাঁরা নাগরিকত্ব পাবেন, তাঁদের কেউই অন্যত্র বসবাস করছেন না, এই রাজ্যের কোথাও না-কোথাও বসবাস করছেন, জীবিকা নির্বাহ করছেন তাঁরা। ১৯৭২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত যাঁরা এসেছেন তাঁরা ইতিমধ্যে জমি কিনে বাড়িঘর বানিয়ে সংসার করছেন। সিএএ-র বলে এঁরা অন্য কারোর জমি দখল করতে যাবেন না। কেউ যদি দেখিয়ে দেন যে উজান অসমে একটি নতুন পরিবার এসেছে, তা-হলে সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে, একজন নতুন বাংলাদেশিকে অসমে আসতে দেওয়া হবে না, জোরের সঙ্গে বলেন মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব।
তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা অগপ নেতা প্ৰফুল্লকুমার মহন্তকে এক হাত নিয়ে তাঁর একাদার সহকারী মন্ত্ৰী হিমন্তবিশ্ব শর্মা বলেন, বিদেশির ভিত্তিবর্ষ ’৫১ সালের বদলে ’৭১ করা কি জাতির প্রতি বিশ্বাসঘতকতা নয়? অথচ আশ্চর্যের বিষয়, এক বিশ্বাসঘাতক আমাদের বিশ্বাসঘাতক বলে আখ্যা দিচ্ছেন! প্ৰফুল্ল মহন্তকে এবার বঢ়মপুরের মানুষ তাড়াবে, আর তিনি বিধায়ক হতে পারবেন না। কেননা তিনি যে বিশ্বাসঘাতক, তা এখন সকলে বুঝে গেছেন।
তিনি যে আসু-র সঙ্গে ছিলেন, সেই পুরনো ইতিহাস টেনে আনেন হিমন্তবিশ্ব। বলেন, “সমুজ্জ্বলকুমার ভট্টাচার্য, আপনি আমার চেয়ে বড়। আপনার হাত ধরে আসু করেছিলাম। কিন্তু ১৯৮৭ সালে যে আইন সংশোধনী প্ৰফুল্লকুমার মহন্ত করেছেন, তার বলে বাংলাদেশির ছেলেমেয়েরা ভারতীয় হবেন। তা-হলে অসম চুক্তির মূল্য কোথায় থাকলো? জবাব দিন সমুজ্জ্বল।” অটলবিহারী বাজপেয়ীই অসম চুক্তির আত্মা ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন বলে উদাত্ত ভাষণে সকলকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন বক্তা ড. শর্মা। আরেক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রবীণ কংগ্রেস নেতা তরুণ গগৈকেও ছেড়ে কথা বলেননি নেডা-র আহ্বায়কটি। বলেন, “তরুণ গগৈ বলছেন, ২০১৪-এর আগে আগত সব বিদেশিরই ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়া উচিত। এ কেমন কথা?”
সিএএ-বিরোধী আন্দোলনকারীদের বেলুন ধীরে ধীরে চুপসে যাচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, অসমের আকাশ থেকে কালো মেঘ সরে গেছে। গত ১১ ও ১২ ডিসেম্বর গুয়াহাটির যে অদ্ভুত পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছিল, এক মাসের মধ্যে ভারতীয় জনতা পাৰ্টি তা পরিবর্তন করে চমৎকার সৃষ্টি করেছে। ‘সিএএ-বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে জনৈক শিল্পী হিমন্ত এবং সনোয়ালের মতো সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য তাঁদের মায়ের আজ অনুতপ্ত বলে মন্তব্য করেছিলেন। অথচ হিতেশ্বর শইকিয়ার মাকে কিন্তু কেউ গালাগাল দেননি। কারোর প্রয়াত মায়েদের গালি দিয়ে আন্দোলন কী ধরনের?’ বলেন, কেউ যদি বলেন আমি ভগবান বিশ্বাস করি না, ভগবান বলে কিছু নেই, তা-ও কি হয়? অসমের মানুষ ভগবানে বিশ্বাসী, তিনি নিজে তো বটেই। তাই ভগবানে বিশ্বাসী অসমের মানুষ এদের ঝেটে তাড়াবেন। তাছাড়া কারোর বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া কী ধরনের আন্দোলন? প্রশ্ন তুলেছেন মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা।
অন্য দিনের মতো আজও বদর উদ্দিন আজমলের এআইইউডিএফ-এর সঙ্গে সিএএ-বিরোধী আন্দোলনের নামে সংগঠিত দুষ্কর্মের তীব্র নিন্দা করেছেন নেডা-র আহ্বায়ক ড. শর্মা। বলেন, “যাঁরা আজমলকে ভোট দেন তাঁরা গুয়াহাটির শংকরদেব কলাক্ষেত্ৰে আক্ৰমণ করবেন ভাবতে পারিনি। হাতিগাঁওয়ে পিএফআই তাদের কাৰ্যালয় খুলবে ভাবতে পারিনি, অসম মিয়াঁ কবিতা যারা লিখেছে তারা তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সিএএ-বিরোধী আন্দোলন সংগঠিত করবে, তা-ও কোনওদিন ভাবিনি, কাজিরঙা এবং বটদ্ৰবা সত্ৰ বেদখলকারীরা অসমের অভিভাবক হওয়ার পথে। অতএব সাধু সাবধান।”
গায়ক জুবিন গাৰ্গ এবং আসু-র উপদেষ্টা সমুজ্জ্বল ভট্টাচার্যকে কটাক্ষ করে মন্ত্ৰী হিমন্তবিশ্ব বলেন, ‘কেউ যদি এই আন্দোলনের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্ৰী, মন্ত্ৰী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন, সে গুড়ে বালি। তবে বিজেপি এর প্রত্যুত্তর রজনৈতিকভাবে দেবে, হিংসার আশ্রয় নিয়ে নয়। আন্দোলনকারীদের স্রমণ করিয়ে তিনি বলেন, লতাশিল ময়দানে সিএএ-বিরোধী আন্দোলন এক নৃত্যনাটিকা। এই নাটক বিজেপি নিঃশেষ করবে বলেছিলাম। আমার দাবি অক্ষরে অক্ষরে সত্যে পরিণত হয়েছে, বলেন মন্ত্ৰী হিমন্তবিশ্ব।
কংগ্ৰেসের আমলে মন্ত্ৰিত্ব লাভ করাকে সৌভাগ্য আখ্যা দিলেও বিজেপিতে এসে মন্ত্ৰী হওয়া অধিক মূল্যবান বলে হিমন্ত বলেন, “২০০১ সাল থেকে মন্ত্ৰী হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। কিন্তু বিজেপি আমলে গত তিন বছরে বিকাশের গঙ্গা প্রবাহিত হচ্ছে। ২১ লক্ষ শিক্ষাৰ্থী বিনামূল্যে ভৰ্তি হতে পেরেছেন, গৃহ নিৰ্মাণ হয়েছে, ৭ লক্ষ মানুষ নতুন করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলেছেন, অটল অমৃত যোজনার অধীনে বহুজনের নাম অন্তৰ্ভুক্ত হয়েছে, ৪,০০০ শিশুরোগীর হাৰ্ট অপারেশন হয়েছে ইত্যাদি বহু পরিবর্তনীয় কর্মযজ্ঞ চলছে বিজেপির তিন বছরের শাসনে, বলেন মন্ত্রী। বিশাল জনতাকে সাক্ষী রেখে বলেন, “আগামীদিনেও দিবারাত্র অসমের বিকাশে কাজ করে যাব।” এছাড়া তাঁর দাবি, ২১-এর বিধানসভা নিৰ্বাচনে ১০০টি আসন নরেন্দ্ৰ মোদীকে উপহার দিতে বিজেপি-র কার্যকৰ্তারা প্রস্তুত।