নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২১ ডিসেম্বর৷৷ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের সমর্থনে সংসদে ভোট দেওয়ার জন্য পূর্ব ত্রিপুরার সাংসদ রেবতীমোহন ত্রিপুরাকে সামাজিকভাবে বয়কটের হুলিয়া জারি করেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন এনএলএফটি৷ এই ঘটনাকে অত্যন্ত দুঃখজনক এবং এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে সাংসদ রেবতী ত্রিপুরা বলেন, জনজাতি স্বার্থে নয়, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরোধিতা করতে এ-ধরনের হুমকি দিয়েছে এনএলএফটি৷ তাঁর সাফ কথা, কেন্দ্রে বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শক্তিশালী নেতৃত্বে ত্রিপুরা-সহ সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নতি হচ্ছে৷ সেই উন্নয়ন এনএলএফটি-সহ মেকি জনজাতি দরদিদের সহ্য হচ্ছে না, উষ্মা প্রকাশ করে বলেন তিনি৷

নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন এনএলএফটি গত ১৮ ডিসেম্বর সাংসদ রেবতীমোহন ত্রিপুরাকে লেখা চিঠিতে বলেছে, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের সমর্থনে ভোট দিয়ে জনজাতিদের সাথে অন্যায় করেছেন৷ শুধু তা-ই নয়, জনজাতি সংরক্ষিত আসনে ভোটে জয়ী হয়ে সংসদে দাঁড়িয়ে তাঁদের বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগ এনেছে এনএলএফটি৷ তাই তাঁকে সামাজিকভাবে বয়কট করার ডাক দিয়েছে জঙ্গি সংগঠনটি৷
এ-বিষয়ে সাংসদ রেবতী ত্রিপুরা বলেন, এনএলএফটি-র এমন কোনও চিঠি এখনও পাইনি৷ তবে, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছি৷ তিনি বলেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের সমর্থন করায় এমন আরও হুমকি পেয়েছি৷ তবে, এ-ধরনের হুমকি অত্যন্ত দুঃখজনক৷ তিনি বলেন, বিষয়টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টিতে নেওয়া হবে এবং তাঁর পরামর্শ মতোই পদক্ষেপ নেব৷
সাংসদ রেবতীমোহনের বক্তব্য, সংসদে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের সমর্থনে ভোট দেওয়ার হুইপ জারি হয়েছিল৷ ফলে দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাওয়ার প্রশ্ণই আসে না৷ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারি না, বলেন তিনি৷ সাংসদের কথায়, ত্রিপুরায় ইতিপূর্বে একাধিকবার নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে৷ রাজ পরিবার এবং বিভিন্ন সময়ে ত্রিপুরা সরকার প্রতিবেশী রাষ্ট্র থেকে ছিন্নমূল উদ্বাস্তু হয়ে আগত মানুষদের নাগরিকত্ব দিয়েছে৷ তা-হলে, তাঁদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত আমরা কেন করব, প্রশ্ণ ছুঁড়ে দেন তিনি৷
তাঁর বক্তব্য, জনজাতিদের ভাবাবেগ নিয়ে আমরাও ওয়াকিবহাল৷ তবে, জঙ্গিদের কায়দায় উগ্র চিন্তা করা সম্ভব নয়৷ তাঁর সাফ কথা, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের সমর্থন যদি অন্যায় হয়ে থাকে তা-হলে অতীতে যাঁরা অনুপ্রবেশকারীদের নাগরিকত্ব দিয়েছেন প্রত্যেকেই অন্যায় করেছেন৷ তাঁদের আগে বিচার হোক, কটাক্ষের সুরে বলেন তিনি৷
সাংসদ রেবতী ত্রিপুরার দাবি, এই প্রথম সংসদে ত্রিপুরার জনজাতিদের জন্য একাধিকবার আলোচনা হয়েছে৷ জনজাতিদের স্বার্থ রক্ষায় সোচ্চার হয়েছি৷ তিনি বলেন, নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ত্রিপুরা-সহ সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য ভাবছেন৷ তাঁর দাবি, এডিসিতে ৫০টি আসন চেয়েছি৷ শুধু তা-ই নয়, এডিসি-র অধিক ক্ষমতায়ন খুবই দরকার, সেই দাবিও জানিয়েছি৷ সাথে তিনি যোগ করেন, সংবিধান সংশোধন করে এডিসিকে সরাসরি অর্থ প্রদানেরও চিন্তাভাবনা চলছে৷ তবুও জনজাতি-বিরোধী বলে সমালোচিত হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি৷
তাঁর সাফ কথা, জনজাতিদের প্রতি মেকি দরদ দেখাতেই হুমকিভরা চিঠি পাঠাচ্ছে এনএলএফটি৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চাপে রাখা যেখানে উদ্দেশ্য সেখানে ভোটের রাজনীতির খেলা হবেই, কটাক্ষের সুরে বলেন তিনি৷

