গুয়াহাটিতে বনধ সর্বাত্মক, স্তব্ধ জনজীবন, টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ, পুলিশের লাঠি চালনা

গুয়াহাটি, ১০ ডিসেম্বর (হি.স.) : নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (ক্যাব) বাতিলের দাবিতে মঙ্গলবার উত্তর-পূর্ব ছাত্র সংস্থা সংক্ষেপে নেসো ও সারা অসম ছাত্র সংস্থা (আসু)-র যৌথ আহ্বানে ১১ ঘণ্টা অসম ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল বনধ-এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। আহূত বনধ-এ সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে গুয়াহাটিরও জনজীবন স্তব্ধ হয়ে পড়েছিল। দোকান-হাট, স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল। বন্ধ ছিল তেল ডিপোও।

মঙ্গলবার সকাল থেকেই মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে পথ অবরোধ করে প্রতিবাদ প্রদর্শন করেন বিক্ষোভকারীরা। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের সাথে গুয়াহাটিতেও বনধ-এর সর্বাত্মক প্রভাব পড়েছিল। শুধু দু-চাকার বাহন ও ব্যক্তিগত বাহন চলাচল ছাড়া সমস্ত বাণিজ্যিক যাত্রীবাহী ও মালবাহী গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল। হাতিগাঁওয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে দু-চাকার বাহন।

এদিকে নেসো-র ডাকা বনধ-এর সমর্থনে রাজ্যের সমস্ত তেল ডিপো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে নর্থ-ইস্ট পেট্রোলিয়াম ডিলার অ্যাসোসিয়েশন। তেল ডিপো বন্ধ থাকার ফলে মহাফ্যাশাদে পড়েছিলেন সংশ্লিষ্টরা। সকালের দিকে জালুকবাড়ি বাসস্ট্যান্ডে বিক্ষোভকারীরা ঢিল ছোঁড়ে ও মারুতি গাড়ির কাঁচ ভেঙে দিয়েছে। এর পর প্রতিবাদকারীরা মালিগাঁও, আদাবাড়ি, জালুকবাড়ি, সাতমাইল, খানামুখ প্রভৃতি জায়গায় টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ সাব্যস্ত করা হয়েছে। প্রতিবাদকারীদের বিক্ষোভের ফলে কিছু কিছু জায়গায় আটকে পড়ে অ্যাম্বুলেন্স ও সংবাদ মাধ্যমের গাড়ি।

আজকের বনধ-এর জেরে গোপীনাথ বরদলৈ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিতরে দেশ বিদেশের হাজারো যাত্রী আটকে পড়েন। তাঁরা বাইরে বেরোতে পারেননি।  বশিষ্ঠ, খানাপাড়া, কুমারপাড়ায়ও বনধ-এর সর্বাত্মক প্রভাব পড়েছে আজ। প্রতিবাদকারীরা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে ও সরকারি বিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ প্রদর্শন করেন। মালিগাঁওয়ে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য কার্যালয়়ে কর্মচারীরা ঢুকতে গেলে পিকেটাররা তাঁদের বাধা প্রদান করেন। তখন আরপিএফ এবং পিকেটারদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে সাধারণ পুলিশ ও আরপিএফ। চানমারি, জু-তিনালি, বামুনিমৈদাম রেলওয়ে কলোনিতে টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ সাব্যস্ত করেন ক্যাব বিরোধীরা। জু-তিনালিতে একটি রেস্টুরেন্ট লণ্ডভণ্ড করে দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া দিশপুরে ডাউন-টাউনের কাছে প্রতিবাদকারীদের নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য শূন্যে গুলি চালনা করে পুলিশ। এর আগে কাঁদানে গ্যাসেও ছোঁড়া হয়েছে। নুনমাটিতে একাংশ বনধ সমর্থক কয়েকটি যানবাহনের ওপর হামলা চালিয়েছে। ভেঙে ফেলা হয়েছে গাড়ির কাঁচ। সেখানেও টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ প্রদর্শন করা হয়েছে।

এদিকে এক অনুষ্ঠানে যেতে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল ও শিক্ষামন্ত্রী সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্যের কনভয় রাস্তা বদলে অন্য রাস্তা দিয়ে গিয়েছে। মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা, সাংসদ কুইন ওজার বাড়ির সামনেও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন প্রতিবাদকারীরা। পুলিশের শীর্ষ অধিকারিকও প্রতিবাদকারীর কবল থেকে ছাড় পাননি। প্রতিবাদকারীরা তাঁদেরও ঘেরাও করেন। কুইন ওঝার বাড়ির সামনে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়েছে। বিকেলের দিকে কয়েকটি জায়গায় উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।