নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১ ডিসেম্বর৷৷ রাজ্যের চিকিৎসকগণ যে যে জায়গায় কর্তব্যরত বা দায়িত্বে রয়েছেন সেখানকার পরিকাঠামোর মধ্যে থেকেই পারদর্শিতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে৷ ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে চিকিৎসকদের৷ আজ আগরতলা সরকারি মেডিক্যাল কলেজের কার্ল ল্যাণ্ডস্টেইনার অডিটোরিয়ামে অল ত্রিপুরা গভর্মেন্ট ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশনের ৩৬তম বার্ষিক রাজ্য সম্মেলনের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷

তিনি বলেন, একত্রিত হয়ে কাজ করার জন্যই অ্যাসোসিয়েশন৷ চিকিৎসকগণ সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত৷ তাদের পেশাগত যোগ্যতাও রয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরাকে মডেল স্টেট বানানোর দিশায় সরকার কাজ করছে৷ দেশের মধ্যে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেও ত্রিপুরাকে প্রথম স্থানে নিয়ে যেতে রাজ্য সরকার বদ্ধপরিকর৷ আগামী দিনে ত্রিপুরাকে হেলথ হাব হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্য সরকারের৷ ইতিমধ্যে সারা দেশের ১১টি ছোট রাজ্যগুলির মধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে সবচেয়ে উন্নত ছোট রাজ্য হিসাবে ত্রিপুরাকে পুরসৃকত করেছে ইণ্ডিয়া টুডে গ্রপ৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকারের আমলে রাজ্যে রাজস্ব আয় বেড়ে ২৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে৷ তিনি বলেন, এম জি এন রেগায় কেন্দ্রীয় সরকার ত্রিপুরার জন্য শ্রম দিবস ৩ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৪ কোটি শ্রমদিবস করার মঞ্জরী দিয়েছে৷ যা গ্রামীণ এলাকার অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে৷ বর্তমান সরকারের সময়ে রাজ্যের মানুষের গড় মাথা পিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে৷ আগামী দিনে এই আয় আরো বাড়বে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন৷ তিনি বলেন, রাজ্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র সহ প্রায় ১১৬৫টি হাসপাতাল রয়েছে৷ এর মধ্যে ৫৬৫টি জনজাতি অধ্যষিত এলাকায়৷ রাজ্যের স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিকে শক্তিশালী এবং উন্নীতকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে রাজ্য সরকার৷ জনজাতি অধ্যষিত এলাকার চিকিৎসা পরিষেবার মান উন্নয়নেও সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রোগীর রোগ নির্ণয় করে তার নিরাময়ের ব্যবস্থা করাই চিকিৎসকের পেশাগত কর্তব্য৷ সেইক্ষেত্রে প্রয়োজনে বোর্ড বসিয়ে যদি সমাধানের পথ খঁুজে না পাওয়া যায় তবেই রেফারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে৷ তিনি বলেন, ত্রিপুরার জি ডি পি হার তখই বৃদ্ধি পাবে যখন পর্যটন, পরিকাঠামো, রাস্তাঘাট উন্নয়ন হবে৷ রাজ্যে যখন বেসরকারী হাসপাতাল গড়ে তুলতে বেসরকারী পঁজিপতিরা লগ্ণি করতে এগিয়ে আসবে তখন রাজ্যের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হারও বাড়বে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন৷ চিকিৎসকরা হাসপাতালগুলির উন্নয়নের পাশাপাশি ত্রিপুরার উন্নয়ন, এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রহিতে কাজ করবেন বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন৷
অনুষ্ঠানে সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক বলেন, মানবজাতি চিকিৎসকদের ভগবান হিসেবে সম্মান করেন৷ সমাজের জন্য কাজ করা, নতুন দিশায় সমাজকে নিয়ে যাওয়া এবং কঠিন পরিস্থিতিতে মানুষকে সাহায্য করার শক্তি চিকিৎসকদের রয়েছে৷ তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের কাছে রাজ্যের মানুষের প্রচুর প্রত্যাশা রয়েছে৷ এই সরকারও মানুষের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে কাজ করছে৷ রাজ্যকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নুতন আঙ্গিকে তুলে ধরার প্রয়াস করছে রাজ্য সরকার৷ স্বাস্থ্য পরিষেবায় গরিবদের সুুবিধার্থে রাজ্য সরকার আয়ুমান ত্রিপুরা প্রকল্প চালু করেছে৷
অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন, ডা. দিলীপ কুমার দাস, স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব দেবাশিষ বসুু, হেলথ সার্ভিসেস দপ্তরের অধিকর্তা ডা. সুুভাশিষ দেববর্মা, এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পরিবার কল্যাণ ও রোগ প্রতিরোধক দপ্তরের অধিকর্তা ডা. রজত দেববর্মা৷ আগরতলা সরকারী মেডিক্যাল কলেজর প্রিন্সিপল অধ্যাপক ডা. কে কে কুণ্ডু উপস্থিত ছিলেন৷ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অল ত্রিপুরা গভর্মেন্ট ডা. অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ডা. রাজেশ চৌধুরী৷ সভাপতিত্ব করেন ডা. রঞ্জিত কুমার দাস৷ অনুষ্ঠানে ডা. বিবেকানন্দ রায়কে আজীবন সম্মাননায় সংবর্ধনা প্রদান করা হয়৷ এছাড়াও চিকিৎসকরা যারা পেশাগত ক্ষেত্রে অসামান্য কাজ করেছেন এবং মেডিক্যাল কোর্সে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীদেরকে অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা দেওয়া হয়৷ মুখ্যমী সহ অতিথিগণ সংবর্ধনাস্বরূপ মারক তাদের হাতে তুলে দেন৷ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীত্রাণ তহবিলের জন্য অল ত্রিপুরা গভর্মেন্ট ডা. এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এক লক্ষ টাকার চেক মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হয়৷

