নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৬ নভেম্বর৷৷ দেশের সর্ববৃহৎ টেলিকম সংস্থা বিএসএনএল-ছর আর্থিক দৈন্যতা কাটাতে কর্মীদের স্বেচ্ছাবসরে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷ এতে বাদ যাবে না ত্রিপুরাও৷ সারা দেশে প্রায় ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কর্মী বিএসএনএল-এ কর্মরত রয়েছেন৷ তাঁদের মধ্যে প্রায় ১ লক্ষ ৪ হাজার ৪৭১ জন স্বেচ্ছাবসরে যাওয়ার জন্য যোগ্য৷ শুধু তা-ই নয়, এখন পর্যন্ত ৭৮ হাজার ৯১৭ জন স্বেচ্ছাবসরে যেতে আবেদন জানিয়েছেন৷ অবশ্য, কর্মীদের যে কোনও ধরনের লোকসান এড়ানোর সবর্োত প্রয়াস নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ এ-ক্ষেত্রে বিএসএনএল কর্মীরাও খুব একটা অসন্তুষ্ট নন৷ কারণ, স্বেচ্ছাবসরে যে স্কিম এনেছে কেন্দ্র, এতে কর্মীদের লোকসানের বিষয়টি এড়ানো গেছে বলে মনে করা হচ্ছে৷ এদিকে, ত্রিপুরায় প্রায় ১৭৯ জন এমন কর্মী রয়েছেন যাঁদের বয়স পঞ্চাশোর্ধ৷ তাঁদের স্বেচ্ছাবসরে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে৷ এখন পর্যন্ত ১৩৫ জন স্বেচ্ছাবসরে যাওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছেন৷

২০০০ সালের ১ অক্টোবর যাত্রা শুরু হয়েছিল দেশের সর্ববৃহৎ টেলিকম সংস্থা বিএসএনএল-এর৷ দীর্ঘ পথ পেরিয়ে আজ ওই সংস্থা আর্থিক দৈন্যতায় ভুগছে৷ প্রতিযোগিতার বাজারে বেসরকারি টেলিকম সংস্থার সাথে কোনওভাবেই পেরে উঠতে পারছে না বিএসএনএল৷ স্বাভাবিকভাবেই লোকসানে চলা একটি সংস্থাকে নিয়ে নতুনভাবে ভাবতে শুরু করে কেন্দ্রীয় সরকার৷ তাতে, প্রথমেই এমটিএনএল এবং বিএসএনএল-এর সংযুক্তিকরণের মাধ্যমে লোকসান কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়৷ কিন্তু, তাতেও লাভের মুখ দেখার কোনও হিসাব মিলছিল না৷ তাই, কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসএনএল-এর কর্মীদের স্বেচ্ছাবসরে পাঠাতে৷ এই প্রক্রিয়া শুরু করার আগে বিএসএনএল কর্মীদের সমস্ত সংগঠনের সাথে স্ববিস্তারে আলোচনা করে সরকার৷ সাথে স্বেচ্ছাবসরের একটি স্কিম তৈরি করে কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রক৷ ওই স্কিমে স্বেচ্ছাবসর গ্রহণকারী সমস্ত কর্মীর আর্থিক বিষয়ের প্রতি পুরো খেয়াল রাখা হয়েছে৷ এতে দেখা গেছে, বিএসএনএল কর্মীরা স্বেচ্ছাবসরে গেলেও তাঁদের আর্থিক লোকসান খুব একটা হচ্ছে না৷ ফলে কর্মী সংগঠনগুলি কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের সাথে সহমত পোষণ করে এবং স্বেচ্ছাবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্তে ঐকমত্যে আসে৷
স্বেচ্ছাবসর স্কিম অনুযায়ী, ৫০ বা পঞ্চাশোর্ধ বিএসএনএল কর্মীদের জন্য ৪ নভেম্বর থেকে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷ আবেদন জানানোর অন্তিম দিন ও ক্ষণ ধার্য করা হয়েছে ৩ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত৷ স্কিম মোতাবেক ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত যাঁদের বয়স ৫০ বা এর ঊধর্ে হবে তাঁরাই স্বেচ্ছাবসরের আবেদন জানাতে পারবেন৷
কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি একসাথে বিএসএনএল কর্মীদের স্বেচ্ছাবসরে পাঠানো হবে৷ সারা দেশে বিএসএনএল-এর কপর্োরেট অফিস-সহ ২৭টি সার্কল এবং বিভিন্ন অপারেশন অফিস মিলিয়ে ১ লক্ষ ৪ হাজার ৪৭১ জন স্বেচ্ছাবসরে যাওয়ার জন্য যোগ্য৷ তাঁদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৭৮ হাজার ৯১৭ জন স্বেচ্ছাবসরে যাওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছেন৷ বিএসএনএল সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, গ্রুপ-এ ৫,৬৬১ জনের মধ্যে ৪,১৩১ জন, গ্রুপ-বি ১১,৯৭১ জনের মধ্যে ৮,.৮১৯ জন, গ্রুপ-সি ৭১,০০৭ জনের মধ্যে ৫৫,৭০৭ জন, গ্রুপ-ডি ১৫,৩০২ জনের মধ্যে ৯,৯১৯ জন এবং ইন্টারনাল ওয়ার্কার ৫৩০ জনের মধ্যে ৩৪১ এখন পর্যন্ত স্বেচ্ছাবসরের আবেদন জানিয়েছেন৷ ত্রিপুরায় গ্রুপ-এ ১৮ জনের মধ্যে ১৪ জন, গ্রুপ-বি ২০ জনের মধ্যে ১৬ জন, গ্রুপ-সি ৯৬ জনের মধ্যে ৭২ জন এবং গ্রুপ-ডি ৪৫ জনের মধ্যে ৩৩ জন এখন পর্যন্ত স্বেচ্ছাবসরের আবেদন জানিয়েছেন৷
কেন্দ্রীয় সরকার বিএসএনএল-কে নিয়ে এই সাহসী পদক্ষেপের কী প্রয়োজন পড়ল সেই প্রশ্ণ উড়িয়ে দেওয়ার কোনও সুযোগ নেই৷ তবে, বিএসএনএল-এর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অনুসন্ধান করে জানা গিয়েছে, দীর্ঘ সময় ধরে কেন্দ্রীয় সরকারের উদাসীনতা, আধিকারিকদের গাফিলতি এবং কর্মীদের কাজের প্রতি অবহেলা আজ বিএসএনএল-কে ধবংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে৷ অবশ্য ২০১৪ সালে কেন্দ্রে সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর বিএসএনএল-কে চাঙ্গা করার একাধিক প্রয়াস নেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু দীর্ঘ ১৩ বছরে বিএসএনএল-কে যেভাবে ঘূণ ধরেছে, তাকে সজীব করার কোনও উপায় খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি৷ পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে এসে ঠেকেছে, হয়ত বিএসএনএল-কে বেসরকারি হাতে তুলে দিতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার৷ খুব শীঘ্রই, কেন্দ্রীয় সরকার এমনই সিদ্ধান্ত নিলে তাতে অবাক হওয়ার মতো কিছু থাকবে না বলে বিএসএনএল-এর কর্মীরাই বলছেন৷ তবে বিএসএনএল কর্মীদের ধারণা, কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপে সংস্থাটি আবারও চাঙ্গা হয়ে উঠবে৷
অবশ্য আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে বিএসএনএল-এ বিরাট কর্মীস্বল্পতা দেখা দেবে৷ সে-ক্ষেত্রে আধিকারিকদের বদলি করে এবং প্রত্যেক কর্মীদের কাজের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়ে ওই শূন্য স্থান পূরণ করা হবে৷ ত্রিপুরায়ও বিএসএনএল-এ কর্মী স্বল্পতা দেখা দেবে৷ একই প্রক্রিয়া ত্রিপুরায়ও অবলম্বন করা হবে৷ তবে, লাইনম্যানরা ঠিকাদারের অধীনে কাজ করবেন৷ আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে ঠিকেদারের অধীনে আরও লোক নিয়োগের প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে৷ ফলে, পরিষেবায় কোনও ত্রুটি হবে না বলে দাবি বিএসএনএল স্থানীয় কর্তৃপক্ষের৷

