সনাক্ত হল কদমতলায় উদ্ধার হওয়া মৃতদেহ, অভিযোগ পরিকল্পিত খুনের

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১২ নভেম্বর৷৷ উত্তর ত্রিপুরার কদমতলা থানাধীন মধ্য বজেন্দ্রনগর এলাকায় একটি ছড়ায় সোমবার উদ্ধারকৃত মৃতদেহের পরিচয় পাওয়া গেছে৷ আজ মঙ্গলবার মৃতদেহটি শনাক্ত করেন মৃত যুবকের আত্মীয়স্বজনরা৷ মৃত যুবকের নাম প্রাণকান্ত দাস (২৫)৷ কদমতলা থানাধীন বজেন্দ্রনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তাঁতি পাড়ার বাসিন্দা জনৈক হেমন্তকুমার দাসের ছেলে প্রাণকান্ত৷


সোমবার সকালে ত্রিপুরার উত্তর জেলার কদমতলা থানাধীন বজেন্দ্রনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্য বজেন্দ্রনগর এলাকার গভীর জঙ্গলে গরু চরাতে গিয়ে এক ব্যক্তি একটি পাহাড়ি ছড়ায় সম্পূর্ণ বিবস্ত্র অবস্থায় মৃতদেহটি উপুর হয়ে পড়ে থাকতে দেখেন৷ ভয় পেয়ে তিনি তড়িঘড়ি বিষয়টি গ্রামবাসীর নজরে আনেন৷ ইত্যবসরে খবর পেয়ে দলবল নিয়ে অকুস্থলে উপস্থিত হন ধর্মনগর মহকুমা পুলিশ আধিকারিক রাজীব সূত্রধর ও কদমতলা থানার ওসি কৃষ্ণধন সরকার৷ তাঁরা পচাগলা বিবস্ত্র অজ্ঞাতপরিচয়ের মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য কদমতলা গ্রামীণ হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যান৷
খবর পেয়ে আজ সকালে কদমতলা থানায় ছুটে আসেন মৃত যুবকের বড় বোন অর্চনা দাস ও তার আত্মীয় পরিজনরা৷ তার পর তাঁরা কদমতলা গ্রামীণ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে মৃতদেহটি দেখে শনাক্ত করেন৷ মৃত যুবক প্রাণকান্ত দাসের বোন অর্চনা দাস জানান, তাঁরা দুই ভাই ও দুই বোন৷ বছর দুয়েক আগে মা মারা যান৷ বাবা পক্ষাঘাতে আক্রান্ত৷ বর্তমানে তাঁরা নিজের গ্রাম ছেড়ে পশ্চিম পানিসাগরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ছোট বোনের বাড়িতে বাবা ও ছোট ভাই প্রাণকান্তকে নিয়ে বসবাস করতেন৷ মাঝে-মধ্যে বজেন্দ্রনগরের তাঁতিপাড়ার বাড়িতে এসে প্রাণকান্ত দেখাশোনা করে যেতেন৷


বোন অর্চনা আরও জানান, বড় ভাই সৌদি আরবে কর্মরত৷ বেশ কয়েক বছর আগে দুই বোনের বিয়ে হয়েছে৷ ছোট ভাই প্রাণকান্ত দাসও সৌদি আরবে থাকত৷ কিন্তু বছর দুয়েক আগে সে সৌদি আরব থেকে বাড়িতে এসে আর যায়নি৷ প্রাণকান্ত অসুস্থ বাবা ও বজেন্দ্রনগরের বাড়ি দেখাশোনা করত৷ মাঝেমধ্যে কাঠমিস্ত্রির কাজ করে নিজের পরিবার প্রতিপালন করত সে৷


গত ৮ নভেম্বর শুক্রবার প্রাণকান্ত পশ্চিম পানিসাগরের বোনের বাড়ি থেকে বজেন্দ্রনগরে নিজেদের বাড়িতে আসার জন্য রওয়ানা হলেও আর ফিরে যায়নি৷ বোন ও আত্মীয় পরিজনদের ধারণা ছিল, হয়ত-বা সে বজেন্দ্রনগরের বাড়িতে রয়ে গিয়েছে৷ বজেন্দ্রনগর এলাকাটি ভারত-বাংলা সীমান্তে হওয়ায় মোবাইল নেটওয়ার্ক সমস্যা থাকায় ফোনেও যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছিল না৷


অর্চনা বলেন, গতকাল অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধারের খবর পেয়ে তারা প্রাণকান্তের সাথে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন৷ কিন্তু নেটওয়ার্কের গোলযোগে যা সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি৷ প্রাণকান্তের বোন কাঁদতে কাঁদতে আরও জানান, তাদের বজেন্দ্রনগরের বাড়ির পাশে জনৈক শচীন্দ্র তাঁতির ছেলে নিবোধ তাঁতির জমি সংক্রান্ত বিবাদ চলছিল বহুদিন ধরে৷ তাই তিনি ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য পাশের বাড়ির নিবোধ তাঁতিদের প্রতি সন্দেহ ব্যক্ত করেছেন৷ এই সন্দেহের বশে প্রাণকান্তের বোন অর্চনা দাস কদমতলা থানায় নিবোধ তাঁতির বিরুদ্ধে এক এজাহারও দায়ের করেছেন৷


অন্যদিকে, ধর্মনগরের এসডিপিও রাজীব সূত্রধর জানান, অর্চনা দাসের অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁরা ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় ৬১/১৯ নম্বরে মামলা রুজু করা হয়েছে৷ তাছাড়া ময়না তদন্তের পর আজ অর্চনাদেবীদের হাতে প্রাণকান্তের মৃতদেহ তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানান এসডিপিও৷