টিএসআরের পাশাপাশি আসাম রাইফেলস ক্যাম্পও প্রত্যাহার করা হচ্ছে রাজ্যে

নিজস্ব প্রতিনিধি, নতুনবাজার/আগরতলা, ২৫ অক্টোবর৷৷ টিএসআর ক্যাম্প গুটিয়ে ফেলার মাঝেই আসাম রাইফেলসও রাজ্য থেকে প্রত্যাহার করা হতে পারে বলে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে৷ সম্ভবত, শীঘ্রই আসাম রাইফেলস রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে আউটপোস্ট তুলে নেবে৷ তবে, হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত কেন নিয়েছে রাজ্য সরকার, সে-বিষয়ে প্রশাসনিক কোন বিবৃতি জারি হয়নি৷ ফলে, জনমনে এক অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে৷ কথায় বলে, ঘর পোড়া গরু সিঁদূরে মেঘ দেখলে ডরায়৷ তাই হয়তো, নববইয়ের দশকে উগ্রপন্থীদের সন্ত্রাসের শিকার জনগণ আজ কিছুটা আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন৷


সম্প্রতি রাজ্য সরকার দুইটি টিএসআর ব্যাটেলিয়ান এবং ৬১টি টিএসআর প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশ এ কে শুক্লা গত ২৪ অক্টোবর এক নির্দেশিকা জারি ১৫ দিনের মধ্যে ওই ক্যাম্পগুলি প্রত্যাহারের আদেশ দিয়েছেন৷ ফলে, টিএসআর ক্যাম্পগুলি গুটিয়ে ফেলার কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে৷ তাতে, জনগণ প্রতিবাদী হয়ে উঠেছেন৷ গতকাল রইস্যাবাড়ীতে টিএসআর ক্যাম্প প্রত্যাহারের সময় স্থানীয় জনগণ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন৷ আজ করবুকের ভোলানাথ পাড়ায় টিএসআর ক্যাম্প গুটিয়ে নেওয়া হচ্ছে খবর পেয়েই স্থানীয় জনগণ সেখানে ছুটে গিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন৷ হাতে প্লেকার্ড নিয়ে নিয়ে তাঁরা ক্যাম্পের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন৷


আজ করবুকের ভোলানাথ পাড়ায় টিএসআর নবম ব্যাটেলিয়ানের ক্যাম্প প্রত্যাহারের ঘটনায় স্থানীয়দের বিক্ষোভে উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল৷ স্থানীয় বাসিন্দা প্রহর দেববর্মা বলেন, উগ্রবাদীদের ক্ষত আজও শুকায়নি৷ ১৯৯৮ থেকে ২০১০ সালের সময়কালে এই ভোলানাথপাড়ার বাসিন্দা আতঙ্কে দিন কাটাতেন৷ বিনিদ্র রাতযাপন করেছেন৷ তিনি জানান, এই ভোলানাথপাড়ায় টিএসআর ক্যাম্প স্থাপনের পূর্বে উগ্রপন্থীদের হামলায় অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন৷ কিন্তু, আজ দুই দশকবাদে ওই ক্যাম্প ভেঙ্গে ফেলার চিত্র সত্যিই পীড়া দিচ্ছে, বলেন তিনি৷ তাঁর কথায়, ২০১০ সালে জনগণের জোড়ালো দাবির ভিত্তিতে ওই ক্যাম্প স্থাপন করেছিল রাজ্য সরকার৷ নিরাপত্তার তাগিদে ওই ক্যাম্প প্রত্যাহার করে নেওয়া উচিৎ হবে না৷ কারণ, মাত্র সাত কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে বাংলাদেশ সীমান্ত৷


এদিকে, স্থানীয়দের বিক্ষোভের খবর পেয়ে অমরপুর এবং করবুকের মহকুমা শাসক ভোলানাথপাড়ায় ছুটে যান৷ তাঁর বিক্ষোভকারীদের আশ্বাস দেন, নিরাপত্তা নিয়ে নিশ্চিন্তে থাকুন আপনারা৷ এই আশ্বাসের ভিত্তিতে বিক্ষোভকারীরা ফিরে গেছেন৷


টিএসআর ক্যাম্প প্রত্যাহার নিয়ে হাঙ্গামার মাঝেই রাজ্য সরকার আসাম রাইফেলসও প্রত্যাহার করতে চাইছে বলে জানা গিয়েছে৷ সূত্রের খবর, সিপাহীজলা জেলার থেলাকুম এবং কুমারঘাট মহকুমায় রাধানগর গ্রামে আসাম রাইফেলসের ক্যাম্প প্রত্যাহার করে তা টিএসআরকে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷ ইতিপূর্বে, পশ্চিম ডলুছড়ায় খাসিয়াপুঞ্জি এলাকায় আসাম রাইফেলসের ক্যাম্প প্রত্যাহার নিয়ে স্থানীয় গ্রামবাসী প্রতিবাদী হয়েছিলেন৷ কারণ, নববইয়ের দশকে ওই এলাকায় উগ্রপন্থী হামলায় অন্তত ৪০ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন এবং বহু বাড়িঘর ও দোকানপাট লুট হয়েছিল৷ সূত্রের খবর, আসাম রাইফেলসের ২১ এবং ২৯ ব্যাটালিয়ানের কয়েকজন শীর্ষ পদাধিকারীদের অন্যত্র পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷ তবে, হঠাৎ রাজ্য সরকার এই টিএসআর ব্যাটেলিয়ান এবং ক্যাম্প প্রত্যাহারের সাথে আসাম রাইফেলসও প্রত্যাহারের সাহসী পদক্ষেপ কেন নিচ্ছে, প্রশাসনিকস্তরে কোন বিবৃতি এখনো জারি করা হয়নি৷ ফলে, বিষয়টি নিয়ে অস্পষ্টতা থেকেই যাচ্ছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *