নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৮ অক্টোবর৷৷ দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত প্রাক্তন পূর্ত মন্ত্রী তথা বিধায়ক বাদল চৌধরীর গ্রেপ্তারি নিয়ে আরক্ষা প্রশাসনে ঝড় বইছে৷ একদিকে তাঁকে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না৷ অন্যদিকে, তাঁকে খোঁজে না পাওয়ার ব্যর্থতায় আজ ফের পশ্চিম আগরতলা থানার ওসি সহ গোয়েন্দা বিভাগের তিন কনস্টেবলকে বরখাস্ত করা হয়েছে৷ অবশ্য, তল্লাশি আজ দিনভর থেমে থাকেনি৷ বাদল চৌধুরীর খোঁজে আজ আগরতলায় সম্ভাব্য দুই শতাধিক স্থানে পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে৷ তবুও, ব্যর্থতাই হাতে এসেছে পুলিশের৷
গত রবিবার ভিজিলেন্স পূর্ত দপ্তরে দুর্নীতি মামলায় প্রাক্তন পূর্ত মন্ত্রী তথা বিধায়ক বাদল চৌধুরী, পূর্ত দপ্তরের প্রাক্তন ইঞ্জিনিয়ার ইন চিফ সুনীল ভৌমিক এবং পূর্ত দপ্তরের প্রাক্তন প্রধান সচিব তথা প্রাক্তন মুখ্য সচিব ওয়াই পি সিংহের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল৷ ওই মামলায় পুলিশ সোমবার ভোরে পূর্ত দপ্তরের প্রাক্তন ইঞ্জিনিয়ার ইন চিফ সুনীল ভৌমিককে গ্রেপ্তার করে৷ তাঁকে আদালতে সোপর্দ করা হলে আদালত তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়ে এক দিনের জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়৷ তেমনি বাদল চৌধুরীর অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করে৷ এদিকে, ১৫ অক্টোবর সুনীল ভৌমিককে পুনরায় আদালতে তোলা হলে, তাঁর জামিনের আবেদনের উপর শুনানি সম্পন্ন হয়৷ কিন্তু আদালত রায়দান স্থগিত রাখে এবং তাঁকে আরো একদিনের জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়৷
১৬ অক্টোবর বাদল চৌধুরীকে নিয়ে দিনভর টানটান উত্তেজনা বিরাজ করেছে৷ বাদল চৌধুরীর তল্লাশিতে পুলিশ সিপিএম সদর কার্যালয়ে গিয়ে রীতিমত আত্মসমর্পণ করেছে৷ পুলিশ বহু চেষ্টা করেও সিপিএম পার্টি অফিসে তল্লাশি চালাতে পারেনি৷ এদিকে, দীর্ঘ শুনানির পর রাত ১১টা ৪০ মিনিটে রায় ঘোষণা করেন বিচারক৷ আদালত বাদল চৌধুরীর আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করে দেন৷ এরপর থেকে শুরু হয়ে যায় বাদল চৌধুরীর খোঁজে পুলিশের অভিযান৷ ওইদিন রাত থেকে পুলিশ বাদল চৌধুরীকে হন্যে হয়ে খুঁজছে৷ কিন্তু, তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না৷
তাঁকে খুঁজতে ব্যর্থতার দায়ে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর নির্দেশে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা পুলিশ সুপার অজিত প্রতাপ সিংকে বরখাস্ত এবং ডিআইজি দক্ষিণাঞ্চল অরিন্দম নাথকে অপসারণ করেছে রাজ্য সরকার৷ শাস্তির খড়গ চালানো এখানেই থেমে থাকেনি৷ আরক্ষা প্রশাসনে গতকাল মাঝারি ধরনের রদবদল করা হয়েছে৷ শুধু তাই নয়, বাদল চৌধুরীর তিন দেহরক্ষী প্রদীপ আচার্যী, অমর সরকার এবং অমল দাসকেও বরখাস্ত করা হয়েছে৷
আজ সকাল থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিহির লাল দাসের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী সারা আগরতলায় দফাওয়ারি তল্লাশি চালিয়েছে৷ আগরতলায় শঙ্কর চৌমুহনী, রামনগর, কৃষ্ণনগর এলাকায় দুই শতাধিক বাড়িঘরে বাদল চৌধুরীর খুঁজে তল্লাশি করেছে পুলিশ৷ তাঁদের মধ্যে কয়েকজন চিকিৎসক রয়েছেন যাঁরা বাদল বাবুর চিকিৎসা করেন৷ কিন্তু, তাঁকে কোথাও খুঁজে পায়নি পুলিশ৷
এরই মধ্যে পশ্চিম আগরতলা থানার ওসি ডি পি রায়কে বরখাস্ত করেছে আরক্ষা প্রশাসন৷ সম্ভবত, বাদল চৌধুরীকে খুঁজতে ব্যর্থতার কারণেই তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছে৷ শুধু তাই নয়, ওই তালিকায় রয়েছেন তিন গোয়েন্দা কর্মীও৷ সূত্রের খবর, শ্যামল দেববর্মা, কিশোর রাউথ এবং রঞ্জিত দেববর্মা ওই তিন গোয়েন্দা কর্মীকেও বরখাস্ত করা হয়েছে৷ তাঁদের বরখাস্তের পেছনে বাদল চৌধুরীকে খুঁজে না পাওয়া কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে৷ এদিকে, আমতলী থানার ওসি সুব্রত চক্রবর্তীকে পশ্চিম আগরতলা থানার এবং ইন্সপেক্টর সিদ্ধার্থ করকে আমতলী থানার নতুন ওসি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে৷