গুয়াহাটি, ১৮ অক্টোবর (হি.স.) : সকলকে স্তম্ভিত করে ‘সারপ্রাইজ মুভ’-এর পর অসমে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি)-র রাজ্য সমন্বয়ক (স্টেট কোঅর্ডিনেটর) আইএএস আধিকারিক প্রতীক হাজেলা বদলি করেছে সুপ্রিমকোর্ট। জাতীয় নাগরিকপঞ্জির নবায়িত চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর নানা বিতর্কে বিদ্ধ হচ্ছিলেন হাজেলা। আজ সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ নেতৃত্বাধীন বিচারপতি এসএ ববড়ে, রোহিনটন নরিম্যানকে নিয়ে ডিভিশন বেঞ্চ এনআরসি-র রাজ্য সমন্বয়ক হাজেলাকে ‘ইন্টার-ক্যাডার’ বদলি করে আগামী সাতদিনের মধ্যে অসম থেকে তাঁর গৃহরাজ্য মধ্যপ্রদেশে প্রতীক হাজেলাকে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে।
আচমকা এই নির্দেশ শুনে ‘হতভম্ব’ অ্যাটর্নি জেনারেল কেকে বেণুগোপাল আদলতের কাছে জানতে চান, বদলির পিছনে কোনও কারণ আছে কি না? ‘নো অর্ডার উইল বি উইদাউট রিজন’, অর্থাৎ কোনও নির্দেশ বিনা কারণে দেওয়া হয় না, জবাবে বলেন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। প্রসঙ্গত, এনআরসি-র নবায়ন প্রক্রিয়া সুপ্রিমকোর্টের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। সে জন্য এই প্রক্রিয়ায় কেবল সহায়তা ছাড়া রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকার কোনও হস্তক্ষেপ করতে পারছে না।
জানা গেছে, ইতিপূর্বে সুপ্রিমকোর্টে তাঁর জীবনের প্ৰতি হুমকি এসেছে বলে এক আবেদন দাখিল করে তাঁকে অসম থেকে বদলি করার আর্জি জানিয়েছিলেন হাজেলা। আজ শুক্রবার ওই আবেদনের শুনানি গ্রহণ করে ‘ইন্টার-ক্যাডার’ তথা আন্তঃরাজ্য বদলি করতে দিয়েছে রঞ্জন গগৈ নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ।
প্রসঙ্গত, প্রতীক হাজেলার নেতৃত্বেই অসমে এনআরসি-র নবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গত ৩১ আগস্ট তার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হয়েছে। প্রকাশিত তালিকায় লক্ষ লক্ষ বিদেশির নাম অন্তর্ভুক্ত এবং লক্ষ লক্ষ প্রকৃত ভারতীয় নাগরিককে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে রাজ্যে। খোদ বিজেপি এবং সরকার তাঁর কাজকর্মে সন্দেহ ব্যক্ত করেছে। দলের কেন্দ্রীয় ও বহু প্রদেশস্তরের নেতা, এমন-কি মন্ত্রী ও বিধায়কও ত্রুটিমুক্ত তালিকা প্রকাশে প্রতীক হাজেলা ১০০ শতাংশ ব্যর্থ বলে অভিযোগ তুলেছেন। বলা হচ্ছে, ‘কোনও অশুভশক্তির ইশারায় সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বেছে বেছে প্রকৃত ভারতীয়, বিশেষ করে হিন্দু বাঙালিদের নাম কর্তন করা হয়েছে এনআরসি-র নবায়িত তালিকা থেকে।’ এছাড়া নাগরিকপঞ্জি নবায়ন প্রক্রিয়ায় রাজ্য সমন্বয়ক প্রতীক হাজেলা ১,৬০০ কোটি টাকা কোথায় কীভাবে খরচ করেছেন, তার হিসাবও চাওয়া হচ্ছে নানা মহল থেকে।
এ ধরনের একের পর এক অভিযোগ যখন প্রতীক হাজেলার বিরুদ্ধ দাগা হচ্ছে তখন তাঁর বদলির নির্দেশ শুনে রাজ্যের ওয়াকিহাল মহল বিস্মিত। আজ আচমকা এই খবর অসমে চাউরে হলে পক্ষে বিপক্ষে শুরু হয়েছে নানা প্রতিক্রিয়া। সোশাল মিডিয়াতেও ইতিমধ্যে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। বলা হচ্ছে, এখনও এনআরসি-র কাজ সম্পূর্ণ হয়নি। এমতাবস্থায় আচমকা তাঁকে বদলি করায় এনআরসি নবায়ন প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। আবার কেউ কেউ বলছেন, হাজেলা যেখানেই যান, খরচের তালিকা তাঁকে দিতেই হবে। তাছাড়া কাদের নির্দেশে বিদেশিদের নাম এনআরসিতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন সে রহস্যও যেনতেনপ্রকারেণ বের করা হবে। কেবল তা-ই নয়, হাজেলার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে কয়েকটি এফআইআরও রাজ্যের কয়েকটি থানায় পড়েছে বলে জানা গেছে।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, আইআইটি দিল্লির স্নাতক প্রতীক হাজেলার মূল বাড়ি মধ্যপ্ৰদেশে। ১৯৯৫ সালে অসম-মেঘালয়ের আইএএস ক্যাডার হিসেবে অসমে যোগদান করেছিলেন তিনি।