গুয়াহাটি, ৩ অক্টোবর (হি.স.) : উজান অসমে চলন্ত ট্রেনে রাজ্য তথা দেশ-কাঁপানো জোড়া মহিলা খুনে অভিযুক্ত সিরিয়াল কিলার বিকাশ দাসকে ফাঁসির হুকুম দিয়েছে শিবসাগরের জেলা ও দায়রা আদালত। গত বছরের ১০ এবং ১১ জুলাই ৩০ ঘণ্টার মধ্যে দুই মহিলাকে চলন্ত ট্রেনে ধর্ষণের পর নৃশংসভাবে খুন করেছিল বিকাশ। নিহতদের মধ্যে একজন ছিলেন যোরহাট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম ষান্মাসিকের মেধাবী ছাত্রী রাধা কুমারী এবং অন্যজন লালিমা দেবী। দুজনকেই একই পদ্ধতিতে খুন করা হয়েছিল। গলায় ফাঁস জড়ানো, অর্ধনগ্ন মৃতদেহের মুখে অ্যাসিড জাতীয় কিছু পদার্থ পাওয়া গিয়েছিল। দুদিনের দুটি ট্রেনে বিশেষভাবে সক্ষমদের জন্য সংরক্ষিত কামরার টয়লেট থেকে মৃতদেহগুলি উদ্ধার করেছিল জিআরপিফ।
সংশ্লিষ্ট মামলায় গত ২৭ সেপ্টেম্বর আদালত দোষী সাব্যস্ত করেছিল বিকাশ দাসকে। সে অনুসারে আজ ১৪ মাসের মধ্যে শিবসাগর জেলা ও দায়রা আদালত সিরিয়াল কিলার বিকাশ দাসকে খুনের দায়ে ৩০২ ধারায় ফাঁসি এবং ধর্ষণ সংক্রান্ত অপরাধের ২৭৬(১) ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১০ হাজার টাকার জরিমানা আদায়ের রায় শুনিয়েছে। এদিকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে গ্ৰেফতার অন্য অভিযুক্ত বিপিন পাণ্ডেকে ২৭ সেপ্টেম্বরই আদালতে নিৰ্দোষ বলে খালাস করেছিল।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, গত বছরের ১০ জুলাই শিবসাগর জেলার শিমলুগুড়ি রেলওয়ে জংশনে ১৫৯২৮ ডিব্রুগড়-রঙিয়া ডাউন ট্রেনের বিশেষভাবে সক্ষমদের জন্য সংরক্ষিত কামরার টয়লেটে যোরহাট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী রাধা কুমারীর অর্ধনগ্ন মৃতদেহ উদ্ধার করেছিল রেল পুলিশ। তাঁর গলায় ফাঁস জড়িয়ে খুন করা হয়েছিল। রাধার মুখে অ্যাসিড জাতীয় কিছু পদার্থও ঢেলেছিল খুনি। এর পর ৩০ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় একই এলাকা মরিয়নি রেলস্টেশনে পরের দিন ১১ তারিখ ১৫৯১০ ডিব্রুগড়-লালগড় ডাউন অবধ আসাম এক্সপ্রেসের বিশেষভাবে সক্ষমদের জন্য সংরক্ষিত ০৩৭০৭ নম্বর কামরার টয়লেটে একই ধাঁচে খুন অন্য এক মহিলা লালিমা দেবীর মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল। দুটি ট্রেনের বিশেষভাবে সক্ষমদের জন্য সংরক্ষিত কামরা প্রায় শুনশান ছিল।
পর পর দু-দুটি রহস্যখুনের সঙ্গে জড়িত অপরাধীকে ধরতে রাজ্য পুলিশের কালোঘাম ছুটেছিল। এমতাবস্থায় সিরিয়াল খুনিকে ধরতে সহায়তা চাওয়া হয় কলকাতার প্রখ্যাত স্ক্যাচ-আর্টিস্ট দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের। অসম পুলিশের আমন্ত্রণে ১২ জুলাই (২০১৮) কলকাতা থেকে অসমে ছুটে আসেন দেবাশিস। তাঁর সামনে বসানো হয় নিহত রাধা কুমারীর মা তারা দেবীকে। কেননা, সেদিন তিনি তাঁর মেয়েকে ট্রেনে তুলে দেওয়ার সময় ওই কামরায় কালো পেন্ট, গুলাপি শার্ট পরিহিত এক ব্যক্তিকে সন্দেহজনক দৃষ্টিতে দেখেছিলেন। পুলিশকে তিনি বলেছিলেন, তিনি যাকে সন্দেহ করছেন সে-ই তাঁর মেয়েকে খুন করেছে। তাই এদিন শিবসাগরে তারা দেবীকে সামনে বসিয়ে তাঁর বয়ানের ভিত্তিতে দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় কাগজে কলমের আঁচড় দিতে থাকেন। অঙ্কিত ছবিটি তারা দেবী নিশ্চিত করলে সেই স্ক্যাচ প্রকাশ করা হয়। এবং এই স্ক্যাচের ওপর ভিত্তি করে মাত্র দু ঘণ্টার মধ্যে সিরিয়াল কিলার বিকাশ দাস ওরফে বুবুকে উজান অসমের তিনসুকিয়া রেলস্টেশন থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। তিনসুকিয়া রেলস্টেশনে একটি চায়ের দোকান ছিল বিকাশের।
দুটি ঘটনায় শিমলুগুড়ি রেল পুলিশ ৬/১৮ নম্বরে মামলা রুজু করে তদন্ত চালিয়ে ১২ জুলাই (২০১৮) সন্দেহের বশে আরেক অভিযুক্ত বিপিন পাণ্ডেকে গ্রেফতার করেছিল। ঘটনার তদন্ত করতে রাজ্য সরকার গঠন করেছিল এসআইটি। এসআইটি-র দল বিকাশ দাস এবং বিপিন পাণ্ডেকে ১২ দিন তাদের জিম্মায় রেখে রিক্ৰিয়েশন পদ্ধতিতে কীভাবে হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করেছিল তার নাট্যরূপে তা যাচাই করেছিল।
এদিকে আজকের রায় শুনে নিহত রাধা কুমারীর মা তারা দেবী বলেছেন, মেয়ে তো আর আসবে না, তবু আদালতের রায়ে তিনি সন্তুষ্ট। মেয়ের আত্মা অন্তত শান্তি পাবে। রায় শুনে শিবসাগর-সহ গোটা রাজ্যের মানুষ সন্তোষ ব্যক্ত করেছেন।