নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২ অক্টোবর ৷৷ মহাত্মা গান্ধীর জন্ম সার্ধশতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে এবছর প্রথমবারে মতো মহাত্মা গান্ধী পুরস্কার ২০১৯ সম্মাননা দেওয়া হয় হরিজন দরদি সমাজসেবী প্রয়াত চিত্তরঞ্জন দেবকে৷ আজ রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে আয়োজিত মহাত্মা গান্ধীর জন্ম সার্ধশতবর্ষ উদযাপনের কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব প্রয়াত চিত্তরঞ্জন দেবের সহধর্মীনি চিত্রা দেবের হাতে সম্মাননা হিসেবে মানপত্র, মহাত্মা গান্ধীজির প্রতিমূর্তি ও ২০ হাজার টাকা তুলে দেন৷
এই সম্মাননা গ্রহণ করে চিত্রা দেব বলেন, এমন একটি দিন আসবে আমি কোনদিন ভাবিনি৷ আজ তিনি নেই৷ গান্ধীজির আদর্শে সারাজীবন তিনি কাজ করে গেছেন৷ ত্রিপুরা সরকার আজ তাঁর কাজের মূল্যায়ন করে যে সম্মান দিয়েছে তাতে আমি ত্রিপুরা সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি ক’ত’তা জানাই৷ এই অভাবনীয় সম্মানে আমি গর্বিত৷
উল্লেখ্য, বিশিষ্ট সমাজসেবী প্রয়াত চিত্তর’ন দেব ১৯৩১ এর ৮ ফেবয়ারি তৎকালীন রাজন্য শাসিত রাজধানী আগরতলায় জন্মগ্রহণ করেন৷ ছাত্রাবস্থাতেই প্রয়াত দেব গান্ধীজির ভাবধারার প্রতি আক’ষ্ট হন৷ ১৯৪৬ সালের ৭ নভেম্বর ত্রিপুরার তৎকালীন তরুণ নেত’ত্ব ও পরবর্তীকালে রাজ্যের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত শচীন্দ্রলাল সিংহের উদ্যোগে জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর সাথে সাক্ষাৎ করার বিরল সৌভাগ্য হয় তাঁর৷
ঐ ঐতিহাসিক সাক্ষাৎকার প্রয়াত দেবের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে ছিল৷ বাপুজির আশীর্বাদধন্য প্রয়াত দেব মানবতার জয়গান সূচিত করার প্রয়াসেই সারা জীবন কাজ করে গেছেন৷ তিনি ১৯৬৭ সালে রাজধানীর জগৎপুরের ৬৩টি তপশিলী জাতি ও অন্যান্য পশ্চাদপদ শ্রেণীভুক্ত গৃহহীন পরিবারের বসবাসের জন্য ঠক্কর বাপু কলোনি গড়ে তুলেন৷ তাঁরই উদ্যোগে আবাসন সমবায় সমিতি গঠনের মাধ্যমে ৬১টি ভূমিহীন চর্মশিল্পী পরিবারের আবাসস্থল হিসেবে টাউন প্রতাপগড়ে ঋষিদাস পল্লি স্থাপিত হয়৷
এছাড়া ১৯৫৬ সালে ভাঙ্গি বা হরিজন শিশুদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রামনগরের ভাঙ্গি কলোনিতে ক্রেস গঠন তাঁর আরেকটি উল্লেখযোগ্য অবদান৷ অনাথ বালিকাদের জন্য ১৯৭৬ সালে তিনি জওহরলাল নেহেরু বালিকা নিবাস গঠন করেন৷ তাছাড়া পরিবার পরিত্যক্ত কিংবা সমাজচ্যুত বালিকা বা মহিলাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠা করেন মঙ্গলালোক নারী নিকেতন ও সেবালোক নারী নিকেতন৷ এই হরিজন দরদি সমাজসেবী ত্রিপুরা হরিজন সেবক সংঘ-এর তদানীন্তন সভাপতি এবং নয়াদিল্লির নিখিল ভারত হরিজন সেবক সংঘ-এর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন৷ এছাড়াও বিভিন্ন সমাজসেবী সংস্থার সাথে তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ অলংক’ত করেন৷ ২০১৮ সালের ৫ অক্টোবর তিনি প্রয়াত হন৷