নয়াদিল্লি,১৮ সেপ্টেম্বর (হি.স): বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকের পর এনআরসি ইস্যুতে সুর নরম করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । শুধু নরম মনোভাবই নয়, কার্যত উল্টো সুরেই কথা বললেন তিনি । এতদিন পশ্চিমবঙ্গের এনআরসি নিয়ে সরব মমতা এদিন বললেন, ওটা অসমের ব্যাপার । এই ক’দিন আগেই কলকাতা পদযাত্রা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । সিঁথি মোড় থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত মিছিলের স্লোগান ছিল,– ‘বাংলায় এনআরসি হতে দেব না’। শুধু কেন্দ্রের বিরুদ্ধে স্লোগান তোলাই নয়, বিজেপিকে চ্যালেঞ্জও ছুঁড়ে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।
বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ ৭ লোক কল্যাণ মার্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবনে গিয়ে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে পৌঁছে তাঁকে পুষ্পস্তবক দিয়ে শুভেচ্ছা জানান মুখ্যমন্ত্রী । মোদীর হাতে একথোকা হলুদ গোলাপ তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । হাসিমুখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাল্টা শুভেচ্ছা জানাতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীকেও । প্রশাসনিক আলোচনার জন্য দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে এবারও তাঁর হাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তুলে দেন উপহার । একটি কুর্তা । জন্মদিন পরের দিনই এই উপহার পেয়ে আপ্লুত প্রধানমন্ত্রী ।
দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পরে প্রধানমন্ত্রীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যাওয়ার পরিকল্পনা শেষ মুহূর্তে বাতিল হয় ৷ শেষবার দেখা হয়েছিল দেড় বছর আগে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে ৷ আজ বিকেল ঠিক সাড়ে ৪টেয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ দু’ জনের মধ্যে প্রায় ১ ঘণ্টা বৈঠক হয় ৷ বৈঠক শেষে মমতা বলেন, ‘রাজ্যের নাম বদল নিয়ে কথা হয়েছে ৷ রাজ্যের পাওনা আদায় নিয়ে কথা হয়েছে ৷ এনআরসি নিয়ে কথা হয়নি’৷
বৈঠক সেরে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে খুব ভালো আলোচনা হয়েছে’ । জানান, পুজোর পরই বীরভূমের দেওচা-পাঁচমি কয়লাখনির উদ্বোধনের পরিকল্পনা রয়েছে । সেই উদ্বোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে এসেছেন তিনি । বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গেও দেখা করার সম্ভাবনার কথা নিজেই জানালেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ তিনি বলেন, ‘আমি যখনই দিল্লিতে আসি, সৌজন্যের খাতিরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করে যাই ৷ রাজনাথ সিং ও অরুণ জেটলির থাকার সময়ও তাদের সঙ্গে দেখা হয়েছে ৷ এবারও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করতে চাই ৷ বলেন, ‘সময় হলে অমিত ভাইয়ের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করব’।
বৈঠক সেরে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদীর দ্বিতীয়বার শপথগ্রহণের সময় আসবেন ঠিক ছিল । কিন্তু কিছু অপ্রীতিকর ঘটনায় তখন আসতে পারেননি তিনি । এখন সময় পেতেই এসেছেন । এটা কোনও রাজনৈতিক বৈঠক নয় । এটা ‘চেয়ার টু চেয়ার’ মিটিং । মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা আর্থিক প্যাকেজের দাবি জানিয়েছেন তিনি । একইসঙ্গে রাজ্যের নাম বদলের বিষয়টি নিয়েও কথা হয়েছে । রাজ্যের নামে ‘বাংলা’কে সামনে রেখে কেন্দ্রের তরফে কোনও সাজেশন থাকলে, তাতে কোনও সমস্যা নেই । এরপরই তিনি জানান, বীরভূমের কয়লাখনি উদ্বোধনের জন্য প্রধামন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তিনি ।
এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বীরভূমের এই কোল-ব্লক কেন্দ্র রাজ্যকে দিয়েছে । রাজ্য তার নিজের যোগ্যতায় এই কয়লা খনি পেয়েছে । ১২ হাজার কোটি টাকা লগ্নি করা হয়েছে এই প্রকল্পে । বহু ছেলেমেয়ের কর্মসংস্থান হবে এই প্রকল্পে।
দীর্ঘ কয়েক বছর টালবাহানার পর বীরভূমে দেউচা পাঁচামি কোল ব্লকের ছাড়পত্র দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই প্রকল্পে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে কয়লা উত্তোলনের কাজ শুরু হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন মমতা ।
ঠিক এক সপ্তাহ আগে গত বুধবার, এনআরসি নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ । বলেছিলেন, এনআরসির মাধ্যমে বাংলা থেকে দু’কোটি মানুষকে তাড়ানো হবে । এর জবাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা হুঁশিয়ারিতে বলেন, দু’কোটি তো পরের কথা, আগে বাংলার দুজন মানুষের গায়ে হাত দিয়ে দেখাক । এনআরসি-র প্রতিবাদে সিঁথির মোড় থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত মিছিল করেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মিছিল শেষে শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে সভাও করেন তিনি । মমতা বলেন, ‘বাংলায় এনআরসি হবে না । বাংলা কখনও মাথা নত করবে না’। এরপরই কেন্দ্রকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলায় ২ কোটি তো দূরের কথা, আগে ২ জনের গায়ে হাত দিয়ে দেখাও’।
এদিন মমতা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে এনআরসি ইস্যুতে কোনও আলোচনাই হয়নি তাঁর । সরকারের সঙ্গে সরকারের সেই আলোচনায় কোনও রাজনৈতিক ইস্যু ওঠেনি । সেই সঙ্গেই তিনি বলেন, ‘এনআরসি অসমের বিষয় । ওটা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রের কোনও প্রস্তাব নেই’।
মোদীর সঙ্গে বৈঠকের পর আরও একদিন দিল্লিতে থাকবেন তৃণমূল নেত্রী। বিরোধী একাধিক দলের নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাক্ষাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল ।