নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৫ সেপ্ঢেম্বর৷৷ যান সন্ত্রাস আবারও এক মায়ের কোল খালি করে দিল৷ প্রচণ্ড গতিতে বলেরো গাড়ি অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া এক নাবালককে পিষে মারল ৷ তাঁর সহপাঠীও গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে৷ ওই ঘটনায় স্থানীয় জনগণ ঘাতক বলেরো গাড়িটি ভাঙচুর করেছেন৷ শুধু তা-ই নয়, দীর্ঘক্ষণ তাঁরা পথ অবরোধ করেও রেখেছিলেন৷ কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, প্রতি দুর্ঘটনার মতোই, ওই দুর্ঘটনার পর বলেরো গাড়ির চালক পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে৷ সিপাহিজলা জেলার বিশালগড় থানাধীন বাইদ্যাদীঘি দ্বাদশ শ্রেণি বিদ্যালয়ের সামনে ওই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় গোটা এলাকা শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েছে৷
বৃহস্পতিবার বিরতি চলাকালীন ধবজনগরের বাসিন্দা বাবুল মিয়াঁর ছেলে বাপন মিয়াঁ (১৪) এবং মহম্মদ হুমায়ুন মিয়াঁর ছেলে উজ্জ্বল মিয়াঁ (১৪) দুই বন্ধু মিলে বিদ্যালয়ের বাইরে টিফিন খেতে গিয়েছিল৷ তারা দু’জনই বাইদ্যাদীঘি দ্বাদশ শ্রেণি বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ৷ সকাল পৌনে এগারটা নাগাদ বিদ্যালয়ে ফেরার পথে বিশালগড়-গোলাঘাটি মূল সড়কে বিদ্যালয়ের গেটের সামনে টিআর ০৭ ১৬৫৬ নম্বরের একটি বলেরো গাড়ি তাদের ধাক্কা মারে৷ ধাক্কায় তারা দুজনেই ছিটকে পড়ে এবং তাদের মাথায় প্রচণ্ড আঘাত লাগে ৷ বাপন মিয়াঁর ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়৷
খবর পেয়ে বিশালগড় থেকে দমকল কর্মীরা ছুটে গিয়ে দু’জনকে উদ্ধার করে বিশাল মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান৷ সেখানে চিকিৎসকরা বাপন মিয়াঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন৷ এদিকে, উজ্জ্বল মিয়াঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে আগরতলার জিবি হাসপাতালে স্থানান্তর করেছেন চিকিৎসকরা৷
প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, বিশালগড় থেকে গোলাঘাটির দিকে প্রচণ্ড গতিতে যাচ্ছিল ঘাতক বলেরোটি৷ ফলে, চালক গাড়ি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি এবং দুর্ঘটনার কবলে পড়ে৷ স্থানীয় জনগণের দাবি, চালকের ভুলের মাশুল এক নাবালককে প্রাণ দিতে হল৷ ওই ঘটনায় স্থানীয় জনগণ গাড়িটি ভাঙচুর করেছেন৷ শুধু তা-ই নয়, প্রতিবাদে বিশালগড়-গোলাঘাটি সড়ক অবরোধও করেন তাঁরা৷ জনৈক অবরোধকারী জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার পর চালক গাড়ি ফেলে রেখে পালিয়েছে৷ তাঁর বক্তব্য, গতি নিয়ন্ত্রণে আজ পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না৷ এমন-কি, প্রতিটি দুর্ঘটনার পর চালকরা পালিয়ে গিয়ে নিজেদের বাঁচিয়ে নেয়৷ কিন্তু তার ভুলের মাশুল বহু পরিবারকে দিতে হয়, সে-বিষয়ে কেউই চিন্তিত নন৷ তাঁর সাফ কথা, ওই দুর্ঘটনার জন্য বলেরো গাড়ির চালককে গ্রেফতার করে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে৷
এদিকে, অবরোধের কারণে বাইদ্যাদীঘি দ্বাদশ শ্রেণি বিদ্যালয় এলাকায় বিশালগড়-গোলাঘাটি সড়কের উভয় দিকে যাতায়াত স্তব্ধ হয়ে পড়ে৷ খবর পেয়ে বিশাল থানার ওসি প্রণব দেবনাথ, এসডিপিও উত্তম বণিক এবং ডিসিএম অবরোধস্থলে ছুটে যান৷ তাঁরা অবরোধকারীদের আশ্বাস দেন, ঘাতক গাড়ির চালককে অবশ্যই গ্রেফতার করা হবে এবং তাঁর চরম শাস্তির ব্যবস্থা করবে পুলিশ৷ এই প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে দুপুর একটা নাগাদ অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন স্থানীয় জনগণ৷
এদিকে, ময়না তদন্তের পর বাপনের মৃতদেহ তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছে পুলিশ৷ তাঁর মৃতদেহ ধবজনগরে নিজ বাড়িতে পৌঁছতেই বাপনের বাবা-মা-সহ পরিবারের অন্য সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন৷ প্রতিবেশীরাও এই হৃদয়বিদারক ঘটনায় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন৷
এদিকে, সাত সকালে বাইক দূর্ঘটনায় মৃত্যু হলো এক বৃদ্ধার৷ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮ টায় সাব্রুম মহকুমার মনুবাজার থানার অন্তর্গত মনুবাজার পুরাতন থানার সামনে জাতীয় সড়কের উপরে বাইক এক বৃদ্ধকে ধাক্কা দেয়৷ সাথে সাথে দুই জনকেই মনুবাজার হাসপাতালে নিয়ে গেলে আগরতলা হাপানিয়া হাসপাতালে রেফার করে৷ গোপাল চন্দ্র পাল(৭৫) আগরতলা মারা যান এবং বাইক চালক সাগর দেবনাথ মারাত্মক আহত৷
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকালে প্রাত ভ্রমণে বাহির হল মনুবাজার সুকান্তপল্লীর গোপাল চন্দ্র পাল(৭৫)৷ মনুবাজার দিক থেকে গুয়াচাঁদ যাচ্ছিলেন মনুবাজার সঞ্জয়পল্লীর যুবক সাগর দেবনাথ(১৬)৷ টিআর০৮বি-৮৬৯৭ নম্বরের পালসার বাইক দিয়ে সজোরে ধাক্কা মারে বৃদ্ধকে৷ দুইজনই মারাত্ম আহত হয়৷ মনুবাজার অগ্ণি নির্বাপক দপ্তরের কর্মীরা মনুবাজার হাসপাতালে নিয়ে যায়৷ মনুবাজার হাসপাতাল থেকে সাথে সাথে আগরতলা রেফার করা হয়৷ আগরতলা হাপাঁনিয়া হাসপাতালে নিয়ে গেলে বৃদ্ধকে মৃত বলে ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক৷ বাইক চালকও মারাত্মক আহত হয়ে হাপানিয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৷ এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে৷