নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৫ সেপ্ঢেম্বর৷৷ বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধে অবদানের জন্য যোগ্য সম্মান দেওয়া হয়নি ক্যাপ্ঢেন বি আর চ্যাটার্জিকে৷ দীর্ঘ বছর বাদে বাংলাদেশের প্রতিনিধি মুক্তিযুদ্ধ একাডেমি ট্রাস্টের সদস্যদের সামনে পেয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিলেন চড়িলামবাসী৷ অবশ্য ক্যাপ্ঢেন বি আর চ্যটার্জিকে অবজ্ঞার জন্য বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি ভারত সরকার এবং ত্রিপুরায় পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারও সমানভাবে দায়ী৷ কারণ, মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার যখন সম্মাননা জানিয়েছিল, তখন ক্যাপ্ঢেন বি আর চ্যাটার্জিকে কেউ মনে রাখেনি৷
গঙ্গা-যমুনা ক্যাম্পে মুক্তি ফৌজের বাহিনীদের প্রশিক্ষণ দিতেন ক্যাপ্ঢেন বি আর চ্যাটার্জি৷ আজ তাঁর ভিটেতে পৌছে পুরনো স্মৃতি রোমন্থন করেন স্থানীয় হাবিল মিয়া ৷ তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সদস্যদের বলেন, গঙ্গা-যমুনা দুটি ক্যাম্পে প্রায় আড়াই হাজার মুক্তি যোদ্ধা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন৷ বিভিন্ন সময় তাঁদেরকে বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্যাম্পে পাঠানো হত ৷ কুমিল্লার এমপি বলেন, তিনিও ওই ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিয়ে গেছেন ৷ হাবুলবাবু পুণরায় স্মৃতি টেনে এনে বলেন, পাকিস্তানিরা ওই ক্যাম্প সম্পর্কে জেনে ফেলেছিল৷ তখন তার নাম পাল্টে রাখা হয়েছিল ক্রিকেট এবং হকি৷
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধ একাডেমি ট্রাস্টের উদ্যোগে এক দল প্রতিনিধি ত্রিপুরা সফরে এসেছেন৷ কারণ, মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরার যথেষ্ট অবদান ছিল৷ তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন ক্যাপ্ঢেন বি আর চ্যাটার্জি৷ আজ চড়িলামে তাঁর ভিটেতে গিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ একাডেমি ট্রাস্টের প্রতিনিধিরা৷ এদিন প্রতিনিধি দলে ছিলেন, ট্রাস্টের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, কুমিল্লার এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার, রোস্তম আলি, আগরতলাস্থিত বাংলাদেশ সহকারী হাই কমিশনার কিরীটি চাকমা এবং বিশালগড় মহকুমা শাসক ও চড়িলাম বিজেপি মন্ডল সভাপতি তাপস দাস৷
আজ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ একাডেমি ট্রাস্টের প্রতিনিধিরা ক্যাপ্ঢেন চ্যাটার্জির ভিটে ঘুরেফিরে দেখেছেন৷ তাঁর ছেলে রাজীব চ্যাটার্জি প্রস্তাব দিয়েছেন, এই স্থানে ভারত ও বাংলাদেশ সরকার মিলে স্মৃতি সৌধ তৈরী করতে চায় তাহলে এই জমি তিনি দান করতে প্রস্তুত৷ এ-কথা শুনে বাংলাদেশের এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, তিনি বাংলাদেশে ফিরে গিয়ে সংসদে বিষয়টি তুলবেন৷
এদিকে, বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলকে কাছে পেয়ে দীর্ঘ বছরের জমে রাগ ঝারলেন চড়িলামবাসী৷ মূলত, ক্যাপ্ঢেন চ্যাটার্জিকে তাঁর অবদানের কোন মূল্য না দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাঁরা৷ তাঁদের বক্তব্য, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্যাপ্ঢেন যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন৷ কিন্তু, বাংলাদেশ সরকার তা মনে রাখেনি৷ তাঁকে যোগ্য সম্মান দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি৷ তাই ক্যাপ্ঢেন চ্যাটার্জিকে বীর উত্তম পুরস্কারে ভূষিত করা হোক, দাবি জানান তাঁরা৷ এ-কথায় বাংলাদেশের এমপি অনেকটা বিদ্রুপের সুরে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বীর উত্তম পুরস্কার এখনো দেওয়া হয়নি৷
এদিন ওই প্রতিনিদি দলের সদস্যরা চড়িলাম চেছড়িমাই গ্রাম পঞ্চায়েতের চ্যাটার্জি কলোনী স্থিত গঙ্গা-যমুনা ক্যাম্পের স্থলের মাটি সংগ্রহ করে নিয়ে গেছেন৷ ওই মাটি বাংলাদেশে সংরক্ষণ করা হবে তাঁরা জানিয়েছেন৷ এদিকে, আজ তাঁরা সোনামুড়া মহকুমায় ইয়ুথ হোস্টেলে মুক্তি যুদ্ধা স্মৃতি সৌধ ঘুরে দেখেছেন৷