গুয়াহাটি, ২ সেপ্টেম্বর (হি.স.) : এনআরসি-কে হাতিয়ার করে পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান অসম তথা ভারত সম্পর্কে আজেবাজে বক্তব্য পেশ করছেন। তাঁর দোসর হয়েছেন এআইএমআইএম-প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েসি, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কিছু মিডিয়া। তাঁদের কেউ অসমের মুসলমান, আবার কেউ বাঙালিদের জন্য মায়াকান্নায় ভেঙে পড়ে সাধারণ মানুষকে উসকে দেওয়ার খেলায় মাতাল হয়েছেন। কিন্তু তাদের এই বালখিল্যপনা খেলা জমবে না, কৌশল কখনও সফল হবে না, বলেছেন অসমের ‘জনগোষ্ঠীয় সমন্বয় পরিষদ’-এর মুখ্য আহ্বায়ক মুমিনুল আওয়াল।
সোমবার গুয়াহাটি প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে সুর চড়িয়ে পাক-প্রধানমন্ত্রী ইমরান ও আসাদউদ্দিনকে হুঁশিয়ার করে মুমিনুল বলেন, ধৰ্মীয় আবেগে সুড়সুড়ি দেবেন না। আপনাদের বিতর্কিত কথাবার্তায় কেবল বিভ্রান্তিই ছড়াবে, আর কিছুই নয়। তিনি বলেন, এরা ধর্মের সুড়সুড়ি দিয়ে ভারত তথা অসমে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চাইছেন।
রাজ্যের ২১টি খিলঞ্জিয়া ইসলাম ধৰ্মাবলম্বী জনগোষ্ঠীকে নিয়ে গঠিত ‘জনগোষ্ঠীয় সমন্বয় পরিষদ’-এর আহ্বায়ক আওয়াল বলেন, এনআরসি হল ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ-ব্যাপারে পাকিস্তানি প্ৰধানমন্ত্ৰী মন্তব্য করবেন কেন, তিনি অনধিকার হস্তক্ষেপ করছেন। এছাড়া আসাদউদ্দিন ওয়েসি অসমের বিদেশি সমস্যা সম্পর্কে তথ্য বিকৃত করে দেশের জনসাধারণকে বিপথে পরিচালনার চেষ্টা করছেন। ওয়েসির এই নোংরা প্রয়াসকে তিনি ধিক্কার জানিয়েছেন।
মুমিনুল বলেন, দেশ-বিদেশের একাংশ সংবাদ মাধ্যমও এনআরসি সম্পর্কে মনগড়া খবর প্রকাশ ও সম্প্রচার করছে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে এরা অসমের ছবি কালিমালিপ্ত করার অপকৌশল নিয়েছে। তবে তাদের এ-ধরনের অপচেষ্টা কখনও বাস্তবায়িত হবে না, মনে করেন পরিষদ’-এর আহ্বায়ক।
এ প্রসঙ্গে তিনি প্ৰধানমন্ত্ৰী নরেন্দ্ৰ মোদীর চিন্তাধারাকে টেনে এনেছেন। বলেন, ভারতবৰ্ষে প্ৰতিটি নাগরিকের মঙ্গল কামনা করে পদক্ষেপ দেন প্রধানমন্ত্রী। মোদীর নেতৃত্বে ভারতে বসবাসকারী সংখ্যালঘু ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষিত, নিরাপদ। ২০১৪ সাল থেকে আজ পর্যন্ত মোদী নেতৃত্বাধীন ভারতীয় সংখ্যালঘুরা কেবল সুরক্ষিতই নন, দ্রুত উন্নয়নের দিকেও অগ্ৰসর হচ্ছেন, যা এতদিন স্থবির ছিল। এছাড়া রাজ্যের মুখ্যমন্ত্ৰী সৰ্বানন্দ সনোয়াল নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলেও অসমের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী নিরাপদ অনুভব করছেন। মুখ্যমন্ত্ৰীর নেতৃত্বে অসমের সংখ্যালঘুরা এতটুকুও অসুরক্ষিত নন, দাবি করেন মুমিনুল আওয়াল।
তিনি বলেন, অসমের বাসিন্দা সংখ্যালঘুরা যুগের পর যুগ সকলের সঙ্গে মিলেমিশে, একাত্ম হয়ে বসবাস করছেন। অসমিয়া জাতি যখনই কোনও সমস্যার সম্মখিন হয়েছে, তখনই অসমিয়াদের সঙ্গে একসারে দাঁড়িয়ে সমস্যাবলির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে। দেসের স্বাধীনতা আন্দোলনেও অংশগ্ৰহণ করেছেন সংখ্যালঘুরা। স্বাধীনোত্তর ভারতে প্ৰতিটি জাতীয় আন্দোলনে অসমের খিলঞ্জিয়া সংখ্যালঘুরা অংশগ্ৰহণ করেছেন, বলেন মুমিনুল।
মুমিনুল আরও বলেন, এনআরসি অসমের জাতীয় জীবনের এক অভ্যন্তরীণ বিষয়। প্রযুক্তিগত বা কারিগরি কারণে এনআরসিতে যে-সব গরিয়া, মরিয়া, দেশি ও চা জনগোষ্ঠীয় মানুষের নাম বাদ পড়েছে, তাঁদের দুশ্চিন্তা করতে বারণ করেছেন তিনি। অসম সরকার এ-ব্যাপারে প্ৰয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্ৰহণ করবে, আশ্বস্ত করেছেন ‘জনগোষ্ঠীয় সমন্বয় পরিষদ’-এর মুখ্য আহ্বায়ক মুমিনুল আওয়াল।