![](https://jagarantripura.com/wp-content/uploads/2019/08/DSC_2494-1024x683.jpg)
নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩০ আগস্ট৷৷ দেশের উন্নয়নের স্বার্থেই ভারতের সর্বত্র একই সঙ্গে লোকসভা এবং রাজ্য বিধানসভাগুলির নির্বাচন করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে৷ এক দেশ এক নির্বাচন সম্ভব হলে রাষ্ট্রের উন্নতি হবে৷ জনকল্যাণে কাজ করার জন্য আরও বেশি সময় পাওয়া যাবে৷ আজ ত্রিপুরা বিধানসভার বর্ষাকালীন অধিবেশনে বিধায়ক বিনয়ভূষণ দাস আনীত এক বেসরকারি প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এভাবেই প্রস্তাবের সমর্থন জানিয়েছেন৷
এদিন আলোচনার পর প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছে৷ তবে, বিরোধীরা এই প্রস্তাবেরও বিরোধিতা করেছেন৷ বিরোধী দলনেতা মানিক সরকারের মতে, এক দেশ এক নির্বাচন হলে প্রেসিডেনশিয়াল ফরম অব গভর্নমেন্ট অথবা রাষ্ট্রপতিশাসনের ধাঁচে সরকার গঠন হবে৷ তা যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার পরিপন্থী বলে দাবি করেন তিনি৷
বিধায়ক বিনয়ভূষণ দাস-এর আনা মূল প্রস্তাবটি ছিল ‘বাস্তবতা তথা প্রয়োজনীয়তার নিরিখে ভারতবর্ষের সর্বত্র একই সঙ্গে লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভাগুলির নির্বাচন করার লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য ত্রিপুরা বিধানসভা কেন্দ্রীয় সরকারকে অনুরোধ জানাচ্ছে৷’
বিধানসভায় প্রস্তাবটি উত্থাপন করে বিধায়ক বিনয়ভূষণ দাস বলেন, একসঙ্গে বিধানসভা ও লোকসভার ভোট করা গেলে নির্বাচনী ব্যয় কম হবে৷ উন্নয়নমূলক কাজ করার জন্য আরও বেশি সময় পাওয়া যাবে৷ প্রস্তাব সমর্থন করে আলোচনা করেন ট্রেজারি বেঞ্চের বিধায়ক সুশান্ত চৌধুরী, বিধায়ক সুধাংশু দাস৷ তাঁরাও একইভাবে নির্বাচনী ব্যয়, উন্নয়ন ইস্যুতে বক্তব্য পেশ করেন৷ এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার৷ তাঁর কথায়, এক দেশ এক নির্বাচন প্রথা চালু হলে নানা সমস্যার সম্মুখীন হবে গণতন্ত্র৷ কারণ ওই পদ্ধতিতে অনেক জটিলতা রয়েছে৷ ফলে, ওই সব জটিলতার কারণে পদ্ধতির বাস্তবায়নে মূল সমস্যা দেখা দেবে৷
তাঁর কথায়, এক দেশ এক নির্বাচন চালু হলে প্রেসিডেনশিয়াল ফরম অব গভর্নমেন্ট অথবা রাষ্ট্রপতি শাসনের ধাঁচে সরকার গঠন হবে৷ তা সংবিধান বিরোধী এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার পরিপন্থী৷ তাঁর দাবি, ওই সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হলে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে আঘাত করা হবে৷ শুধু তা-ই নয়, গণতান্ত্রিক অধিকারও হরণ করা হবে৷ তাই, এই প্রস্তাবের তিনি সমর্থন করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন৷
আলোচনায় অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এ-বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আহূত সর্বদলীয় বৈঠকের উল্লেখ করে বলেন, একসঙ্গে লোকসভা এবং বিধানসভা ভোট করার জন্য আলোচনায় ৪০টি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল৷ তাতে ২১টি দলের নেতৃত্ব অংশ নেন৷ এই আলোচনায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, এই উদ্যোগ রাষ্ট্রের কল্যাণে৷ তিনি বলেছেন, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে যে সরকার কাজ করছে তার মূল লক্ষ্য হল ভারতকে আর্থিকভাবে শক্তিশালী করা৷
ত্রিপুরায় নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে ইতিমধ্যেই বিধানসভা, লোকসভা, ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছে৷ আগামী বছর জেলা পরিষদ নির্বাচন হবে৷ এর পর স্থানীয় স্বশাসিত সংস্থার নির্বাচন হবে৷ তাঁর কথায়, একটি নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুতি নিতে হয়৷ তাতে অনেক সময় লাগে৷ ফলে, নির্বাচনী আচরণবিধির জন্য অনেক কাজ করা যায় না৷ তিনি বলেন, এছাড়া আমাদের রাজ্যে বৃষ্টিপাতের ফলে উন্নয়নমূলক কাজের জন্য বছরে চার-পাঁচ মাসের বেশি সময় পাওয়া যায় না৷ তিনি বলেন, কাজের জন্য আরও বেশি সময় বের করতে হবে৷
তেমনি রাজ্যের ও দেশের যেন আর্থিক ক্ষতি না হয় তা-ও দেখতে হবে৷ তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, বিধানসভা নির্বাচনের জন্য ত্রিপুরার প্রায় ৭০ কোটি এবং লোকসভা নির্বাচনের জন্য প্রায় ৯০ কোটি টাকা ব্যয় হয়৷ আর যদি দুটো নির্বাচন একসঙ্গে করা যায় তাতে ষাট-পঁয়ষট্টি কোটি টাকা ব্যয় হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ছয় মাসের মধ্যে রাজ্যের সব নির্বাচন শেষ করা গেলে কাজ করার জন্য অনেক বেশি সময় পাওয়া যাবে৷ ব্যয়ও অনেক কম হবে৷ এই কাজটি করা গেলে দেশের আর্থিক ব্যয় কমবে, কাজ করার সময় বেশি পাওয়া যাবে এবং দেশের উন্নতি হবে৷