নয়াদিল্লি, ১৫ আগস্ট (হি.স.): নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১০ সপ্তাহও অতিক্রান্ত হয়নি, এই অল্প সময়ের মধ্যেই সমাজের প্রতিটি স্তরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অনুচ্ছেদ ৩৭০ এবং ৩৫এ রদ করা হয়েছে, যা সর্দার প্যাটেলের স্বপ্ন উপলদ্ধির লক্ষ্যে পদক্ষেপ। ৭৩ তম স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লা থেকে এমনই বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় উঠে এসেছে ৩৭০ ও ৩৫এ অনুচ্ছেদ রদ, তিন তালাক প্রথার অবসান, জল সংরক্ষণ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও সন্ত্রাসবাদ-সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দীর্ঘ বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী সর্বাধিক জোর দিয়েছেন ৩৭০ ও ৩৫এ অনুচ্ছেদ রদ, তিন তালাক প্রথার অবসান ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ে।
৭৩ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার সকালেই লালকেল্লায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এরপরই স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১০ সপ্তাহও অতিক্রান্ত হয়নি, এই অল্প সময়ের মধ্যেই সমাজের প্রতিটি স্তরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অনুচ্ছেদ ৩৭০ এবং ৩৫এ রদ করা হয়েছে, যা সর্দার প্যাটেলের স্বপ্ন উপলদ্ধির লক্ষ্যে পদক্ষেপ।’ এই মুহূর্তে বন্যায় বিপর্যস্ত কেরল, কর্ণাটক ও মহারাষ্ট্র-সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্য। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বন্যা দুর্গতদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা আজ স্বাধীনতা দিবস পালন করছি, এই সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষজন বন্যা কবলিত। বন্যা দুর্গতদের প্রতি আমাদের সমবেদনা।’ জল সংরক্ষণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘জল সংরক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত দেশবাসী, আর তাই জলশক্তি মন্ত্রক তৈরি করা হয়েছে। মেডিক্যাল সেক্টরকেও আরও সহজলভ্য করে তোলার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, ‘এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে, স্বাধীনতার ৭০ বছর পরও প্রচুর সংখ্যক মানুষ জল কষ্টে ভুগছেন। আগামী বছরগুলিতে বিশেষ উদ্যোগের সঙ্গে জল জীবন মিশন নিয়ে কাজ চলবে।’
লালকেল্লা থেকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘২০১৩-২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে, দেশবাসীর আবেগ বোঝার জন্য দেশের সর্বত্র গিয়েছিলাম আমি। প্রত্যেকের চোখে-মুখে তখন অবসাদের ছাপ ছিল। দেশবাসীর চিন্তা ছিল, এই পরিস্থিতি কি কখনও বদলাবে? ২০১৯ সালে, আমি ভীষণ খুশি হয়েছিলাম। দেশবাসীর মেজাজ বদলে গিয়েছিল। হতাশা পরিণত হয়েছিল আশায়। প্রত্যেকেই মনে করেছিল দেশে এবার পরিবর্তন আসবে।’ ৩৭০ ও ৩৫এ অনুচ্ছেদ বিলুপ্তি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘সমস্যা তৈরি করায় আমরা বিশ্বাসী নই, ৭০ দিনেরও কম সময়ে আমাদের নতুন সরকার ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করেছে, সংসদের উভয়কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য এই পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন। জম্মু, কাশ্মীর ও লাদাখে পুরনো ব্যাবস্থায় শুধুমাত্র দুর্নীতিই ছিল। মহিলাদের অধিকার, শিশু, দলিত এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে শুধুই অবিচার হয়েছে। অনুচ্ছেদ ৩৭০-এর সমর্থনকারীরা এখন দেশবাসীর প্রশ্নের মুখে।’ তিন তালাক প্রথার অবসান প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বার্তা, ‘তিন তালাক প্রথার কারণে মুসলিম মহিলাদের কতটা কষ্ট পেতে হয়েছে ভেবে দেখুন। আমরা এই প্রথার অবসান করেছি। মুসলিম রাষ্ট্র যদি এই প্রথা নিষিদ্ধ করতে পারে, তাহলে আমরা কেন নয়? যদি আমরা সতীদাহ প্রথা, বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে পারি, তাহলে তিন তালাক প্রথা কেন নয়?’
জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বহু সমস্যার মুখোমুখি হবে আগামী প্রজন্ম। ছোট পরিবারের নীতিতে যাঁরা বিশ্বাসী, দেশের উন্নয়নে তাঁদেরও অবদান রয়েছে।’ একবিংশ শতাব্দীর চাহিদার প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর বার্তা, ‘আধুনিক পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। দেশের পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য ১০০ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।’ সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গে লালকেল্লা থেকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘সন্ত্রাসবাদকে যাঁরা সুরক্ষা দেয় ও সমর্থন করে তাঁদের মুখোশ খুলে দিতে হবে। বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কাও সন্ত্রাসী হামলায় বিধস্ত। সন্ত্রাসবাদকে প্রতিহত করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে প্রতিটি দেশকে।’ দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য এদিন বড় ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘আমাদের সুরক্ষা বাহিনী আমাদের গর্ব। সুরক্ষা বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় আরও বাড়াতে, আজ বড় ঘোষণা করছি। ভারতে এবার থেকে চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) থাকবে। এর ফলে সুরক্ষা বাহিনী আরও শক্তিশালী হবে।’ ৭৩ তম স্বাধীনতা দিবসের ভাষণ শেষে সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত, নৌবাহিনীর প্রধান এডমিরাল করমবীর সিং এবং বায়ুসেনা প্রধান বি এস ধানোয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়াও লালকেল্লায় শিশুদের সঙ্গেও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।