BRAKING NEWS

রাজ্যসভা পাশ তিন তালাক বিল, ঐতিহাসিক মুহূর্ত আখ্যা দিলেন প্রধানমন্ত্রী

নয়াদিল্লি, ৩০ জুলাই (হি.স.) : মঙ্গলবার রাজ্যসভায় তিন তালাক বিল পাশ হল। পাশাপাশি সিলেক্ট কমিটিতে বিলটিকে পাঠানোর যে দাবি কংগ্রেসের তরফে করা হয়েছিল তাও খারিজ হয়ে যায়। বিষয়টিকে ঐতিহাসিক মুহূর্ত আখ্যা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পাশাপাশি স্বাগত জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, সড়ক পরিবহনমন্ত্রী নীতিন গড়করি, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। বিজেপির কার্যকারি সভাপতি জগত প্রকাশ নাড্ডা, রাষ্ট্রীয় সেবিকা সমিতি।  রাজ্যসভায় পেশ হওয়া তিন তালাক বিরোধী বিলের নিন্দায় সরব কংগ্রেস সাংসদ আম্মি ইয়াগনিক। মুসলমান মহিলাদের পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তিনিষ্ঠ ভাবনার অভাব রয়েছে এই বিলে বলে দাবি করেছেন তিনি। এদিনের ভোটাভুটি থেকে বিরত থাকে বিএসপি, টিআরএস, টিডিপি, জেডি(এস)। 

২০১৭ সালেই সুপ্রিম কোর্ট তাৎক্ষণিক তিন তালাক নিষিদ্ধ করে রায় দিয়েছিল। তার পরেও বন্ধ হয়নি সেই প্রথা। এরপর আগের দফায় মোদী সরকার সংসদে তাৎক্ষণিক তিন তালাক বিল পাশ করাতে পারেনি। সেজন্য অধ্যাদেশ জারি করে ওই প্রথা নিষিদ্ধ করে ।  এরপর  গত ২৫ জুলাই বৃহস্পতিবার লোকসভায় সংশোধিত বিলটি পেশ করে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার। এবং ওইদিনই বিলটি পাশও করিয়ে নেয় | এর পর আজ রাজ্যসভায় পাশ হওয়ার ফলে আইনে পরিণত হল বিলটি | এই নয়া আইনের ফলে মুসলিম পুরুষদের ৩ বছরের জেল হতে পারে | কেন্দ্রীয় সরকার মনে করেছে লিঙ্গ সমতা রক্ষার্থে এই বিল পাশ করানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি নতুন আইনের যাতে অপব্যবহার না হয়, সেজন্য কয়েকটি ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বিলে বলা হয়েছে, তাৎক্ষণিক তিন তালাক দেওয়া জামিন অযোগ্য অপরাধ। কিন্তু বিচার শুরু হওয়ার আগে অভিযুক্ত ব্যক্তি বিচারকের কাছে জামিন চাইতে পারেন। বিচারক স্ত্রীর কথা শুনে জামিন দিতে পারবেন। এদিন সংসদের উচ্চকক্ষে আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ  ‘মুসলিম উইমেন (প্রোটেকশন অব রাইটস অন ম্যারেজ) বিল, ২০১৯’ নামের এই বিল পেশ করেন । দিনভর আলোচনার পর ধ্বনি ভোটে পাশ হয় বিলটি | এদিন তিন তালাক বিলের পক্ষে ভোট পড়েছে ৯৯ টি এবং বিপক্ষে ভোট পড়েছে ৮৪ টি ।  এর আগে আজ বিলটি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো  প্রস্তাব পেশ করা হয় কংগ্রেসের তরফে। যা ধ্বনি ভোটে বাতিল হয়ে যায় | এবিষয়ে হওয়া ভোটের ফলাফলে দেখা যায় কংগ্রেসের  প্রস্তাবের পক্ষে পড়ে ৮৪ টি ভোট । এবং  বিপক্ষে ভোট যায় ১০০টি । ফলে সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো হয়নি বিলটি । এরপরই রাজ্যসভায় বিলটি পাশ করানোর জন্য ভোট গ্রহণ হয় যেখানে সহজেই সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেয়ে তাদের বহু কাঙ্খিত বিলটি পাশ করিয়ে নেয় মোদী সরকার | এর ফলে আইনে পরিণত হল ‘মুসলিম উইমেন (প্রোটেকশন অব রাইটস অন ম্যারেজ) বিল, ২০১৯’ বিল | সেই সঙ্গে এখন থেকে আইনত আপরাধ হিসেবেই গন্য হবে তাত্ক্ষণিক তিন তালাক | 

রাজ্যসভায় বিলটি পাশ হওয়ায়  ঐতিহাসিক মুহূর্ত আখ্যা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর কথায়, “গোটা দেশের জন্য ঐতিহাসিক দিন। মুসলিম মা-বোনেরা আজ সম্ভ্রমের সঙ্গে বাঁচার অধিকার পেয়েছেন ।”        

এর আগে জ্যসভায় কেন্দ্রের প্রস্তাবিত তিন তালাক বিলকে সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর দাবিতে মঙ্গলবার সরব হল বিরোধী দলগুলি। পাশাপাশি বর্তমান বিলটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, অসাংবিধানিক বলে কটাক্ষ করেছে বিরোধী দলগুলি।

এদিন তিন তালাক বিলের বিরোধিতায় সরব হয় কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি, রাষ্ট্রীয় জনতা দল, এনসিপি এবং অন্যান্য বামপন্থী দলগুলি। এমনকি এনডিএ-তে বিজেপির জোটসঙ্গী এআইএডিএমকে এবং জনতা দল ইউনাইটেডও এই বিলের বিরোধিতা করেছে। 

বর্ষীয়ান কংগ্রেস সাংসদ গুলাম নবি আজাদ জানিয়েছেন, বিলটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত ভাবে পেশ করা হয়েছে। বিশেষ কোনও সম্প্রদায়কে চাপে ফেলার  জন্য বিলটি উত্থাপন করা হয়েছে। যদি কেন্দ্রের লক্ষ্য হয় মহিলাদের ক্ষমতায়ন তবে কেন সংসদে মহিলা সংরক্ষণ বিলটি পাশ করানো হচ্ছে না। বিলটি মুসলমান মহিলাদের রক্ষার নাম করছে কিন্তু আদতে মুসলমান পরিবারগুলিকে ভেঙে দেওয়ার চক্রান্ত রয়েছে এই বিলটিতে। তিন তালাক বিল অসাংবিধানিক এবং পক্ষপাত তুষ্ট। অন্য ধর্মের মহিলারা যারা বিবাহ বিচ্ছেদ কারণে ভুগছে তাদেরকেও সরকারের দেখা উচিত। অবিলম্বে বিলটিকে সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো উচিত। 

তৃণমূল সাংসদ দোলা সেনা জানিয়েছেন, বিলটিতে যে ফৌজদারির অংশ রয়েছে যেখানে স্বামীর জেল ধার্য করা হয়েছে সেই অংশটি বাদ দেওয়া হোক। মহিলাদের ক্ষমতায়ন নিয়ে প্রশাসন যদি সত্যিই চিন্তিত থাকে তবে অবিলম্বে মহিলা সংরক্ষণ বিলটি পাশ করানো হোক। 

সমাজবাদী পার্টির সাংসদ জাভেদ আলি খান জানিয়েছেন, রাজনৈতিক স্বার্থচরিতার্থ করার জন্য বিলটি পেশ করা হয়েছে। 
বিলটির প্রসঙ্গে সরকারের মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএসপির সতীশচন্দ্র মিশ্র, এনসিপির মাজিদ মেনন, আরজেডির মনোজ ঝাঁ।

এদিন বিলটি পাশ হতেই  ট্যুইটারে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন নীতিন গড়করি | এদিকে  এদিন তিন তালাক বিলের বিরোধিতায় সরব হয় কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি, রাষ্ট্রীয় জনতা দল, এনসিপি এবং অন্যান্য বামপন্থী দলগুলি। এমনকি এনডিএ-তে বিজেপির জোটসঙ্গী এআইএডিএমকে এবং জনতা দল ইউনাইটেডও এই বিলের বিরোধিতা করেছে। এদিন বিলটি পাশ করানোর সময় রাজ্যসভা থেকে ওয়াক আউট  করে জেডি(ইউ), টিআরএস ও এআইডিএমকে  । এরপর ভোটাভুটিতে বিলের পক্ষে ভোট পড়ে ৯৯টি। বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন ৮৪ জন সাংসদ। 

লোকসভায় পর রাজসভাতেও মঙ্গলবার ধ্বনি ভোটে পাশ হয় ‘মুসলিম উইমেন (প্রোটেকশন অব রাইটস অন ম্যারেজ) বিল, ২০১৯’ বা তাৎক্ষণিক  তিন তালাক বিরোধী বিল। এই বিল পাশ হওয়ার পরে উচ্ছাস প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। পাশাপাশি অভিনন্দন জানিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। 

সংসদের উচ্চকক্ষে বিলটি পাশ হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নিজের ট্যুইট বার্তায় লেখেন, সেকেলে এবং মধ্যযুগীয় প্রথা অবশেষে ইতিহাসের ডাস্টবিনে চলে গেল। সংসদ তিন তালাক প্রথাকে বিলুপ্ত করল। মুসলমান মহিলাদের প্রতি যে ঐতিহাসিক ভুল হয়েছিল তা এর মাধ্যমে সংশোধন করা হয়েছে। লিঙ্গ সাম্যের প্রতি ন্যায় করেছে এই বিলটি। সমাজে সাম্যতাকে আরও বেশি সুদৃঢ় হল। ভারত উচ্ছসিত। 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নিজের ট্যুইট বার্তায় লিখেছেন, ভারতের গণতন্ত্রের জন্য আজ খুবই বড়দিন। নিজের অঙ্গীকার পূরণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। তিন তালাক নিষিদ্ধ হল। এমন ধরণের আচার থেকে মুসলমান মহিলারা মুক্তি পেল। ঐতিহাসিক বিলকে পাশ করানোর জন্য সকল রাজনৈতিক দলকে অভিনন্দন জানাই।
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ট্যুইট বার্তায় লিখেছেন, যারা মহিলাদের ক্ষমতায়ন নিয়ে বড় বড় কথা বলেছিল তারা এই বিলের বিরোধিতা করেছে লোকসভা এবং রাজ্যসভায়। মহিলাদের মর্যাদার প্রতীক হচ্ছে এই বিল। কংগ্রেস এবং তাদের সহযোগী সপা, বিএসপির মুখোশ খুলে পড়েছে। 

নীতিন গড়করি নিজের ট্যুইটবার্তায় লিখেছেন, আজকের দিনটি ঐতিহাসিক। মহিলাদের ক্ষমতায়নের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এই বিলটি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নেতৃত্বে এই মুসলমান মহিলাদের প্রতি এই  অত্যাচার শেষ হয়ে যাবে। অভিনন্দন জানাই প্রধানমন্ত্রীকে। 

রাজ্যসভায় পাশ হওয়া তিন তালাককে মঙ্গলবার স্বাগত জানিয়েছেন বিজেপির কার্যকারী সভাপতি জগত প্রকাশ নাড্ডা। মুসলমান মহিলাদের আত্মমর্যাদা এতে করে বৃদ্ধি পাবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এদিন জগত প্রকাশ নাড্ডা জানিয়েছেন, মুসলমান মহিলাদের আত্মমর্যাদা এতে করে বৃদ্ধি পাবে। নরেন্দ্র মোদী সরকারের লক্ষ্য সবকা সাথ সবকা বিকাশ। এই বিলে পাশ হওয়ায় তারই প্রতিচ্ছবি পাওয়া গেল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। যে সকল রাজ্যসভার সাংসদেরা মুসলিম ওম্যান (প্রটেকশন অফ রাইটস ওন ম্যারেজ) বিল, ২০১৯ সমর্থন জানিয়েছেন তাদেরকেও অভিনন্দন। তিন তালাকের অভিশাপ থেকে মুসলমান মহিলারা মুক্তি পেয়েছে। 

রাজ্যসভায় পেশ হওয়া তিন তালাক বিরোধী বিলের নিন্দায় সরব কংগ্রেস সাংসদ আম্মি ইয়াগনিক। মুসলমান মহিলাদের পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তিনিষ্ঠ ভাবনার অভাব রয়েছে এই বিলে বলে দাবি করেছেন তিনি।

এদিন বিলের বিরোধিতা করে আম্মি ইয়াগনিক জানিয়েছেন, বিলের মধ্যে যে অপরাধের ধারাটি রয়েছে তা বড়ই বিপদজনক। যদি কোনও মহিলার স্বামী জেলে যায়, তবে মহিলার দায়িত্ব কে নেবে। জাতি, ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকল মহিলারাই বঞ্চনার স্বীকার। সকল মহিলার অবস্থা নিয়ে কেন চিন্তিত নয় বলে প্রশ্ন তোলেন তিনি। বর্ষীয়ান এই কংগ্রেস নেত্রী আরও বলেছেন, তিন তালাকের বিষয়টি দেশের শীর্ষ আদালত সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন। ফলে এই রাজ্যসভায় এই বিলের উত্থাপন করা উচিত নয়। মহিলাদের মর্যাদা যদি বিলটি রক্ষা না করতে পারে তবে তা অর্থহীন হয়ে পড়বে। স্বামী এবং স্ত্রীয়ের সম্পর্কের মধ্যে অজানা বা অচেনা বিষয় ঢোকানো হয়েছে এই বিলের মধ্যে দিয়ে। ফলে মহিলাদের মর্যাদা এতে ক্ষুণ্ণ হয়েছে। যদি স্বামী ফৌজদারি মামলায় জড়িয়ে যায় তবে সে কিভাবে নিজের স্ত্রীয়ের ক্ষতিপূরণ চালাবে তা এই বিলটিতে কোথাও উল্লেখ নেই। এমনকি বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হলে সন্তানদের কি হবে তা বিলটিতে কোথাও বলা নেই। 

বিলের বিরুদ্ধে গিয়ে নারীদের ক্ষমতায়ন সম্পর্কে বলতে গিয়ে আম্মি ইয়াগনিক জানিয়েছেন, একজন মহিলা মা, বোন, দিদি, মেয়ে। সকল মহিলাদের ক্ষমতায়ন দরকার। আর্থিক, সামাজিক ক্ষমতায়নের মাধ্যমে মহিলাদের প্রকৃত ক্ষমতায়ন লুকিয়ে রয়েছে। এই বিলের ফৌজদারি অংশটি কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

বিলের বিপক্ষে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়ে জেডি(ইউ) সাংসদ বশিষ্ঠ নারইন সিং জানিয়েছেন, সবকটি রাজনৈতিক দলগুলির নিজস্ব মতাদর্শ রয়েছে। সেই মতাদর্শ অনুযায়ী বিলটিকে সমর্থন করা যাবে না। নিজের বক্তব্যের পর অধিবেশন কক্ষ থেকে ওয়াকআউট করেন তিনি। 

শাহবানু মামলার প্রসঙ্গ তুলে ধরে কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়কমন্ত্রী মুক্তার আব্বাস নাকভি জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্বেও শাহবানু মামলায় কোনও রকমের পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি তৎকালীন কংগ্রেস সরকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *