নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৯ জুলাই৷৷ জাতীয় শিক্ষা নীতি- ২০১৯ খসড়া নিয়ে সোমবার আগরতলায় মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ গুণগত শিক্ষার প্রশ্ণে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলি শিক্ষাবিদদের কাছ থেকে মতামত সংগ্রহের উদ্দেশ্যেই এই সভার আয়োজন করা হয়েছে৷ তাতে, ত্রিপুরা সরকারের শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ জানিয়েছেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তনে জাতীয় শিক্ষা আয়োগ গঠনের চিন্তাভাবনা করছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ গুণগত শিক্ষার প্রশ্ণে এই আয়োগ বিরাট ভূমিকা নেবে বলে মনে করেন তিনি৷
এদিন এই মত বিনিময় সভার উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ৷ তিনি ছাড়া উপস্থিত ছিলেন, শিক্ষা দফতরের সচিব সৌম্যা গুপ্তা, শিক্ষা অধিকর্তা ইউ কে চাকমা, এসসিইআরটি-র অধিকর্তা, ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড় ভি এল ধারুরকর, প্রাক্তন উপাচার্য অরুণোদয় সাহা, ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গৌতম বসু-সহ বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ, অধ্যক্ষা, অধ্যাপক-অধ্যাপিকা ও বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং তাঁদের প্রতিনিধিরা৷
আজ শিক্ষা মন্ত্রী সভায় উপস্থিত সকলকে জাতীয় শিক্ষা নীতির খসড়া সম্পর্কে মতামত আগামী বুধবারের মধ্যে জানানোর জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন৷ তাছাড়া, আজ অনেকেই গুণগত শিক্ষা নিয়ে বক্তব্য পেশ করেছেন৷ রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামী হিতকামানন্দ মহারাজ এদিন বলেন, ছাত্রছাত্রীদের সুন্দর ভবিষ্যত গড়ে তোলার লক্ষ্যে বুনিয়াদি স্তরে শিক্ষক নিয়োগে যোগ্যতায় কোনও আপস করা যাবে না৷ কারণ, শিক্ষকরাই ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যত গড়ার কারিগর৷ তাই, প্রকৃত শিক্ষাদানে তাঁদের যোগ্য হওয়া খুবই জরুরি৷
শিক্ষাসচিব সৌম্যা গুপ্তা বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে নানান সমস্যা রয়েছে৷ বহুকাল ধরে ওই সব সমস্যার সমাধান হচ্ছে না৷ তিনি বলেন, জাতীয় শিক্ষা নীতিতে বিদ্যালয় কিংবা কলেজস্তরে শিক্ষার ক্ষেত্রে সমস্যা সমাধানের দিশা নির্ধারিত থাকতে হবে৷ কারণ, গুণগত শিক্ষা ছাত্রছাত্রীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া প্রধান এবং একমাত্র লক্ষ্য৷ তাঁর কথায়, আজকের এই মত বিনিময় সভায় যে বিষয়গুলি উঠে আসবে তা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠানো হবে৷ কারণ, প্রত্যেক রাজ্যে সমস্যা ভিন্ন৷ ফলে, সমাধানের পথও ভিন্ন হতে হবে৷ তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষাগত দক্ষতায় বিরাট ঘাটতি রয়েছে৷ জাতীয় শিক্ষা নীতিতে এই সমস্যা থেকে উত্তরণের দিশা থাকা খুবই জরুরি৷
শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ বলেন, গত জুন মাসে জাতীয় শিক্ষা নীতি-২০১৯ খসড়া প্রকাশিত হয়েছে৷ তাতে শিক্ষা ক্ষেত্রকে নতুন রূপে সাজানোর বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে৷ তাঁর কথায়, নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জাতীয় শিক্ষানীতিতে পরিবর্তন আবশ্যক হয়ে উঠেছে৷ কারণ, এক নতুন বিশ্ব আমাদের সামনে প্রস্তুত হচ্ছে, যেখানে নয়া শিক্ষা নীতি বিরাট ভূমিকা নেবে এবং পরিকল্পনা প্রক্রিয়ায় সাহায্য করবে৷ তাঁর মতে, শিক্ষাই সর্বশক্তিমান এবং এর সাহায্যে অতি অল্প সময়ে গোটা বিশ্বে সর্বময় শক্তিশালী হয়ে ওঠা সম্ভব এবং আমরা তা অর্জন করবই৷ সে-ক্ষেত্রে নতুন প্রজন্মকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে, যাতে তারা নতুন বিশ্বকে দৃঢ়তার সাথে মোকাবিলা করতে সক্ষম হন, প্রত্যয়ের সুরে বলেন তিনি৷
শিক্ষামন্ত্রীর দাবি, সেই দিন দূরে নয়, যখন ভারত গোটা বিশ্বে আলাদা মর্যাদা লাভ করবে এবং তাতে নয়া জাতীয় শিক্ষা নীতি বিরাট ভূমিকা নেবে৷ তাই, স্থানীয় প্রয়োজনীয়তা এবং বৈশ্বিক চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষা নীতি তৈরি করা হয়েছে৷ তাঁর মতে, এই শিক্ষা নীতি ভারতের শিক্ষাক্ষেত্রের সমস্ত চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে ৷
মন্রীাক জানান, জাতীয় শিক্ষা আয়োগ গঠনের চিন্তাভাবনা করছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ তাতে, প্রাথমিক থেকে কলেজ স্তর পর্যন্ত শিক্ষার সমস্ত ক্ষেত্রকে এক ছাদের তলায় আনা হবে৷ তাছাড়া, শিক্ষা ক্ষেত্রে নতুন নতুন চিন্তাভাবনা, দিশা নির্ধারণ, পুনর্গঠন সমস্ত কাজে সহযোগিতা ওই আয়োগ৷
আজ দিনভর এই মত বিনিময় সভায় উপস্থিত সকলের কাছ থেকে বিভিন্ন মতামত সংগ্রহ কররা হয়েছে৷ তাছাড়া, পৃথকভাবে মতামত জানানোর জন্যও বলা হয়েছে৷ জাতীয় শিক্ষা নীতি-২০১৯ খসড়া সম্পর্কে প্রায় সকলেই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন৷